গবেষণার ফলাফল কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে: কৃষি উপদেষ্টা
Published: 9th, February 2025 GMT
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “কৃষি খাতের অগ্রগতি টিকিয়ে রাখতে গবেষণার বিকল্প নাই। গুণগত গবেষণা করে ফলাফল কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।”
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নবনির্মিত মৃত্তিকা ভবন উদ্বোধন ও পরিদর্শন উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষি সচিব ড.
আরো পড়ুন:
ঝুঁকি নিয়ে আগাম আলু চাষে ব্যস্ত কৃষক
কৃষি খাতে উৎপাদন নির্বিঘ্ন করতে সব প্রচেষ্টা অব্যাহত: কৃষি উপদেষ্টা
উপদেষ্টা বলেন, “কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প নেওয়ার সময় কৃষি জমি রক্ষার বিষয়ে ভাবতে হবে। কোনোভাবেই যেন স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে কৃষি জমি নষ্ট না হয়।”
উপদেষ্টা কৃষি খাতের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, “স্বাধীনতার পর হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত কৃষি খাতই সবেচেয়ে সফল। জমি আর বাড়বে না কিন্তু জনসংখ্যা বাড়তেই থাকবে, তাই কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে।”
উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের তেল, ডাল, ছোলা প্রভৃতি আমদানি করতে হয়। দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমাতে হবে। কৃষক যে ফসলে লাভ বেশি পান সে ফসল চাষ করেন। অপ্রচলিত কিন্তু প্রয়োজনীয় ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।”
উপদেষ্টা পার্বত্য এলাকায় ফলজ গাছ লাগানের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “বনায়নের সাথে সাথে ফলজ গাছও লাগাতে হবে।”
বাজারে সবজির দাম প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “যখন মৌসুম থাকে না ও এক মৌসুম থেকে অন্য মৌসুম গ্যাপে ট্রানজিট সময়ে সবজির বাজার চড়া থাকে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে শাক সবজি ফলমূল সংরক্ষণের জন্য স্বল্প ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হিমাগার তৈরি করা হচ্ছে।”
উপদেষ্টা কৃষি খাতের অবদানের তুলনায় স্বীকৃতি ও পুরস্কার কম উল্লেখ করে বলেন, “কৃষি ও কৃষকের কথা বলতে হবে, এ খাতকে স্বীকৃতি দিতে হবে।”
এর আগে উপদেষ্টা নব নির্মিত মৃত্তিকা ভবনের উদ্বোধন করেন।
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ষ মন ত র উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
ঈশ্বরদীর অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি লিচুর মুকুল
লিচুর রাজধানীখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি মুকুল। চাষিরা বলছেন, ফাল্গুন মাসে যখন লিচুর মুকুলের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কথা বাগানগুলোয়, তখন গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে কচিপাতা। ফলে এবার লিচুর উৎপাদনে ধস নামার শঙ্কায় তারা। লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে দেখা যায়নি। তবে গাছে মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ঈশ্বরদীর ‘লিচু গ্রাম’ বলে পরিচিত উপজেলার মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বহু বাগানের গাছেই মুকুল নেই। কৃষকরা বলেন, এই সময়ে গাছে নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। লিচুচাষি আমিরুল ইসলাম সরদার জানান, তাঁর বাগানে ১০০টি গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টিতে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। নিকট অতীতে এত কম মুকুল আর দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আবহাওয়ার কারণে এ বছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তারা ধারণা করেছেন।
সাহাপুর গ্রামের লিচুচাষি সহিদুল ইসলাম বলেন, এত কম লিচুর ফলন আগে কখনও দেখিনি। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল। আমার বাগানের অর্ধেকেরও বেশি গাছে এবার মুকুল আসেনি। লিচু বেচে সারা বছর আমরা সংসারের খরচ চালাই। এবার কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
লিচুর আবাদ করে জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব। তিনি বলেন, ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি– এমন বিপর্যয় আগে কখনো হয়নি। পুরো এলাকাতেই এ অবস্থা। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কিনা সন্দেহ আছে। এ বছর লিচুর ১০ শতাংশও ফলন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। লিচু আবাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা সবাই এবার বিপদের সম্মুখীন হবেন।
উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর কারিগরপাড়া গ্রামের লিচুচাষি শামসুল আলম বলেন, আমার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। এ বছর এত কম মুকুল এসেছে, যা আগে কখনও দেখিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, ‘লিচুগাছে সমানভাবে প্রতিবছর মুকুল আসে না। কখনও বেশি বা কখনও কম হয়। তবে এবার তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক গাছে মুকুল এসেছে। এটি প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে। এ বছর যেহেতু কম হয়েছে, তাই ধারণা করা যায় আগামী বছর মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি এবং ভালো ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে এবার ৩১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। তবে এ বছর গাছগুলোয় মুকুলের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে অনুমান করছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের জমিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি লিচু গাছ রয়েছে। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ এক একর জমিতে ৪২টি, এক হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ আছে। ছোট-বড় বাগান মিলিয়ে ১১ হাজার ২৭০টি গাছে লিচুর বাগান রয়েছে। উপজেলায় লিচু আবাদি কৃষকদের সংখ্যা ৯ হাজার ৬২০ জন। বাণিজ্যিক আকারে লিচু বাগান রয়েছে ২৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে আবাদ হয়েছে ৫০০ হেক্টরে। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ ২৮৩৫ হেক্টর। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়।