চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘গরু জবাই’ করে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদ
Published: 9th, February 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘গরু জবাই’ করে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে শিবগঞ্জ উপজেলার পাইলিংমোড় এলাকায় একটি ‘গরু জবাই’ করার মাধ্যমে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
আনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানিয়েছেন, সীমান্তে হত্যা ও ফারাক্কার পানির নায্য হিস্যার দাবিতে শনিবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে লংমার্চ শুরু হয়। রবিবার সকালে শিবগঞ্জের মডেল হাইস্কুল মাঠে ৬টি যাত্রীবাহী বাস প্রবেশ করে। এসব বাসে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ অংশ নেন।
আরো পড়ুন:
শিক্ষার্থীরা নয় বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার পেছনে রয়েছে সন্ত্রাসীরা: হর্ষবর্ধন শ্রিংলা
ঢাকা-দিল্লির পাল্টাপাল্টি তলব
সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা শেষে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভটি পাইলিংমোড় এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে একটি ‘গরু জবাইয়ে’র মাধ্যমে লংমার্চের অর্ধেকশ কর্মসূচি শেষ হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জনগণ সংগঠনের মুখপাত্র আবু মোস্তাফিজ, আমজনতার নেতা মাসুদ জাকারিয়া, শহিদুল হক মিন্টু, তারেক রহমান, কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত মিয়া মশিউজ্জামান, হেফাজতের রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আতিকুর রহমান, প্রচার সম্পাদক নাইমুল হাসান ও হেফাজতের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মোহাম্মদ ইসহাকসহ অন্যরা।
আমজনতার সংগঠনটির সদস্য সচিব তারেক রহমান বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জবাসী বিএসএফের মুখোমুখী হয়ে প্রতিবাদ করেছে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। তাদের এই সাহসে আমরা অনুপ্রেরণা হয়ে তাদের সাধুবাদ জানাতে এসেছি। আমারও তাদের থেকে শিক্ষা নিতে এখানে লংমার্চে এসেছি। ভারত গরু রাজনীতির মধ্যদিয়ে মুসলিমদের নিপিড়ন করে। গরু খাওয়ার অপরাধে মুসলিমকে মারধর করে। এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের এই জিয়াফত। এই জিয়াফত একটি ঐতিহ্যবাহী একটি সংস্কৃতি।”
তিনি আরো বলেন, “গরু জবাইয়ের মাধ্যমে লংমার্চের আংশিক কর্মসূচি শেষ করা হয়। পরে এদিন সন্ধ্যায় সীমান্তে বিএসফের বুরেটে নিহতদের নাম সম্বলিত ফানুস উড়ানো হবে। এসব ফানুস ভারতীয় ভূখণ্ডে পড়বে। তখন তারা জানতে পারবে আমাদের এই ভারতীয় আগ্রাসের প্রতিবাদ।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ/শিয়াম/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
ঈশ্বরদীর অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি লিচুর মুকুল
লিচুর রাজধানীখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি মুকুল। চাষিরা বলছেন, ফাল্গুন মাসে যখন লিচুর মুকুলের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কথা বাগানগুলোয়, তখন গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে কচিপাতা। ফলে এবার লিচুর উৎপাদনে ধস নামার শঙ্কায় তারা। লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে দেখা যায়নি। তবে গাছে মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ঈশ্বরদীর ‘লিচু গ্রাম’ বলে পরিচিত উপজেলার মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বহু বাগানের গাছেই মুকুল নেই। কৃষকরা বলেন, এই সময়ে গাছে নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। লিচুচাষি আমিরুল ইসলাম সরদার জানান, তাঁর বাগানে ১০০টি গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টিতে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। নিকট অতীতে এত কম মুকুল আর দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আবহাওয়ার কারণে এ বছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তারা ধারণা করেছেন।
সাহাপুর গ্রামের লিচুচাষি সহিদুল ইসলাম বলেন, এত কম লিচুর ফলন আগে কখনও দেখিনি। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল। আমার বাগানের অর্ধেকেরও বেশি গাছে এবার মুকুল আসেনি। লিচু বেচে সারা বছর আমরা সংসারের খরচ চালাই। এবার কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
লিচুর আবাদ করে জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব। তিনি বলেন, ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি– এমন বিপর্যয় আগে কখনো হয়নি। পুরো এলাকাতেই এ অবস্থা। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কিনা সন্দেহ আছে। এ বছর লিচুর ১০ শতাংশও ফলন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। লিচু আবাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা সবাই এবার বিপদের সম্মুখীন হবেন।
উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর কারিগরপাড়া গ্রামের লিচুচাষি শামসুল আলম বলেন, আমার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। এ বছর এত কম মুকুল এসেছে, যা আগে কখনও দেখিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, ‘লিচুগাছে সমানভাবে প্রতিবছর মুকুল আসে না। কখনও বেশি বা কখনও কম হয়। তবে এবার তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক গাছে মুকুল এসেছে। এটি প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে। এ বছর যেহেতু কম হয়েছে, তাই ধারণা করা যায় আগামী বছর মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি এবং ভালো ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে এবার ৩১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। তবে এ বছর গাছগুলোয় মুকুলের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে অনুমান করছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের জমিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি লিচু গাছ রয়েছে। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ এক একর জমিতে ৪২টি, এক হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ আছে। ছোট-বড় বাগান মিলিয়ে ১১ হাজার ২৭০টি গাছে লিচুর বাগান রয়েছে। উপজেলায় লিচু আবাদি কৃষকদের সংখ্যা ৯ হাজার ৬২০ জন। বাণিজ্যিক আকারে লিচু বাগান রয়েছে ২৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে আবাদ হয়েছে ৫০০ হেক্টরে। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ ২৮৩৫ হেক্টর। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়।