Samakal:
2025-04-12@10:06:29 GMT

সেই ডিসি রুহুল আমিন কারাগারে 

Published: 9th, February 2025 GMT

সেই ডিসি রুহুল আমিন কারাগারে 

কক্সবাজারে মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগে জমি অধিগ্রহণে ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

আজ রোববার দুপুরে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে সকালে তিনি জামিন আবেদন করে আত্মসমর্পণ করেন।

কক্সবাজার আদালতে দুদকের কৌঁসুলি (পিপি) সিরাজ উল্লাহ জানান, কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ মামলার নথি জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক জেলা প্রশাসক মো.

রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

দুদকের এ আইনজীবী বলেন, একই মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। গত ২৩ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন গত ১ জুলাই জেলার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, হুলিয়া ও ক্রোক-পরোয়ানা জারির আবেদন জানান।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাতারবাড়ীর বাসিন্দা কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। মামলার পরপরই ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নথিপত্র পাঠান তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার। কিন্তু মামলা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে কয়েক দিন পর একই আদালতে আবার মামলা করেন কায়সারুল ইসলাম। সে মামলায় জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। সেই মামলার তদন্ত শেষে গত ১ জুলাই আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় দুদক। এ ক্ষেত্রে সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জালিয়াতিতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয় অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে। 

একই সঙ্গে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে দুজনকে। তারা হলেন- কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রহিম ও সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম শাহ হাবিবুর রহমান।

প্রতিবেদনে দুদক জানায়, কায়সারুল ইসলামের মামলাটি ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধের সময় জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ আসামি ছিলেন ২৮ জন। কিন্তু তিনটি পৃষ্ঠায় পরিবর্তন করে এক নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দেওয়া হয়। ২ নম্বর আসামি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলমকে করা হয় এক নম্বর আসামি। এতে বাদীর জাল স্বাক্ষরও দেওয়া হয়। পুরো নথিতে কাটাছেঁড়া ও লেখা ঘষামাজা করে দুদকে পাঠানো হয়েছিল। বাদীর জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপিবিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত।

দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চিংড়ি ঘের, ঘরবাড়িসহ অবকাঠামোর বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ করা হয় ২৩৭ কোটি টাকা। চিংড়ি ঘের অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের বিপরীতে ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে মনগড়া ২৫টি চিংড়ি ঘের দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের ৪৬ কোটি টাকা থেকে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। 

জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, শুরুতে চিংড়ি ঘের অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ২৩ কোটি টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছিল। পরে তিনটি চেক বাতিল করা হয়। এরপর অবশিষ্ট ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার টাকা যারা নিয়েছেন এবং দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়। দুদক দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়।

এ মামলায় ২০১৭ সালের ২২ মে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠান আদালত। এর আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে বর্তমানে রুহুল আমিন জামিনে আছেন। একই মামলায় ৯ মে ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলম, ৩ এপ্রিল কক্সবাজার শহর থেকে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সাবেক উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, সাবেক সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম ও কক্সবাজার আদালতের আইনজীবী নুর মোহাম্মদ সিকদারকে গ্রেপ্তার করে দুদক। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ল ইসল ম তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

মীমাংসা বাণিজ্যের মাস্টার আ’লীগ নেতা বাবুল

ময়মনসিংহ শহরে বহুতল ভবন হচ্ছে। লোক পাঠিয়ে প্রথমে ঝামেলা করেন। পরে ত্রাতা সেজে বিরোধ মিটিয়ে বাগিয়ে নেন ফ্ল্যাট। জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ, ছল করে দু’পক্ষকেই জমিছাড়া করে দখল নেন। তিনি মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মীমাংসা বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

খোদ আওয়ামী লীগের নেতারাও জানিয়েছেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর আইন পেশার আড়ালে বাবুল ছিলেন ময়মনসিংহের অলিখিত বিচারক। পারিবারিক, জমিজমা, ব্যবসা থেকে যে কোনো বিরোধের বিচার বসাতেন ব্যক্তিগত চেম্বারে। সেখানে টাকা খেয়ে এক পক্ষকে সুবিধা দিতেন। আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে স্থানীয় প্রশাসনকে জিম্মি করতেন।

জেলার একাধিক আইনজীবী জানান, তাদের সমিতি ভবনের পাশে সরকারি জায়গায় একতলা ভবন করে চেম্বার দেন বাবুল। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা আড্ডা দিতেন। বাবুল নিজস্ব বিচার কার্যক্রম চালাতেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাবুল পলাতক। মানুষের ক্ষোভের আগুনে ছাই হয়ে গেছে এ ভবন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ জুটমিল করপোরেশনের আড়াই একর জমি আওয়ামী লীগের শাসনামলে দখল করেন বাবুল। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে চুরখাই এলাকায় প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের তিন একর জমি কবজায় নিয়েছেন।

ময়মনসিংহ নগরীর অভিজাতপাড়াখ্যাত গুলকিবাড়িতে ৫৭ শতাংশ জমিতে ১৯ তলা ভবন নির্মাণে ডেভেলপার কোম্পানি নূরজাহান গার্ডেনের সঙ্গে চুক্তি হয় মালিকপক্ষের। ওয়ারিশ সূত্রে পরিবারের মধ্যে ঝামেলা থাকায় বাবুল মধ্যস্থতার নামে কোটি টাকা হাতান বলে একটি পক্ষের দাবি।

নগরীর ব্রিজ মোড়ে রয়েল মিডিয়া কলেজের নিজস্ব জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে বাবুল প্রভাব খাটিয়ে কলেজে মালিকানা শেয়ার লিখে নিয়েছেন। নগরীর প্রাণকেন্দ্র আঠারো বাড়ি বিল্ডিং এলাকায় গড়েন বহুতল ভবন। প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের এ ভবনের জমির মালিকানা নিয়ে প্রশাসনের কাছে বিচার দিয়েও সমাধান পায়নি একটি পক্ষ। তাদের ভাষ্য, বাবুলের দাপটে তারা জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

গফরগাঁওয়ের পাগলা থানায় নিজের সাধুয়া গ্রামেও দাপট দেখিয়ে একরের পর এক জমি দখল করেছেন বাবুল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, অর্থের লোভে দলের প্রার্থীদের বিপক্ষে ভোট করেছেন বাবুল। গত বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি নৌকার ডামি প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন। ময়মনসিংহ জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে বাবুল প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়ে পাঁচটিতে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করান। পরাজিতদের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকা ও গাড়িবাড়ি নিয়েছেন বাবুল। নির্বাচনের পর বিষয়টি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের তোপের মুখেও পড়েছিলেন।

বাবুল ময়মনসিংহে ছাত্র আন্দোলনে নিহত রেদুয়ান হাসান সাগর হত্যা মামলার আসামি। ইতোমধ্যে বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে। জমি ও ফ্ল্যাটের অনেক মালিক তাদের সম্পদ পুনর্দখল করেছেন বলে জানা গেছে।

ময়মনসিংহ জেলার আইনজীবী হান্নান খান বলেন, আইনজীবী হয়ে বাবুল ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করেছেন। চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাবুল অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। দুদক খোঁজ নিলেই সত্যতা মিলবে।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) আবু ওয়াহাব আকন্দ সমকালকে বলেন, ‘পুলিশ বাবুলদের মতো রাঘববোয়াল না ধরে চুনোপুঁটি শিকার করে ক্লান্ত।’

জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল পলাতক। তাঁকেসহ সব আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। জমি দখল নিয়ে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে মনোনয়ন ফরম নিতে পারেননি আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা
  • চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা মামলায় ১১ আসামির জামিন নামঞ্জুর
  • আরেকজনকে হত্যা করতে গিয়ে আইনজীবীকে খুন, পাঁচজন কারাগারে
  • ভুল টার্গেটে খুন হন আইনজীবী সুজন: পুলিশ
  • ভুল টার্গেটে খুন আইনজীবী সুজন, গ্রেপ্তার ৫
  • বিএনপিকর্মী নিহতের ঘটনায় মানহানি মামলা
  • মীমাংসা বাণিজ্যের মাস্টার আ’লীগ নেতা বাবুল
  • সেনাবাহিনীর জন্য আলোচনার দরজা কখনো বন্ধ হয়নি: ইমরান খান
  • আদালতে নিজ আইনজীবীর ওপরে ক্ষোভ ঝাড়লেন হাজী সেলিম 
  • কাঠগড়ায় মেজাজ হারিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি হাজি সেলিমের, অন্যরা হতবাক