বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি বিলাসবহুল ১০ তলা টাওয়ারের বাসিন্দা হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম তালিকাভুক্ত ছিল। সম্পত্তিটির নামকরণ করা তাঁর পরিবারের নামে। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ এ তথ্য জানতে পেরেছে।

টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের সাবেক দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী। তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি)। তাঁর খালা শেখ হাসিনা।

ঢাকার কর্মকর্তাদের ধারণা, ‘সিদ্দিকস’ নামে ঢাকার এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ২০১৪ সালে টিউলিপের ‘স্থায়ী ঠিকানা’ ছিল। তখন তিনি যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন।

অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটির অবস্থান ঢাকার গুলশানে। এই এলাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের পাশাপাশি বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

আদালতের নথিপত্র বা সংবাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, এ নিয়ে বাংলাদেশে টিউলিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পঞ্চম সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেল।

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনো সম্পত্তি নেই। তাই এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়ারও দরকার নেই।

প্রায় এক মাস আগে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি এখনো সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয়সহ বাংলাদেশে তাঁর খালা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সঙ্গে যোগসূত্র নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।

টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এ নিয়ে দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্যদের মানদণ্ডবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস তদন্ত করেন। তদন্তে তিনি দেখতে পান, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে উপহার পাওয়া একটি ফ্ল্যাট নিয়ে টিউলিপ অসাবধানতাবশত জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। এই তদন্তের জেরে টিউলিপ পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।

যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ অল্প সময়ের জন্য সিটি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা ছিল তাঁর দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত বিষয়।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির লন্ডনের সম্পত্তি ব্যবহার করা নিয়ে কয়েক সপ্তাহের প্রশ্নের পরে টিউলিপ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য লাউরির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি এখন ভারতে আছেন। বিক্ষোভ দমনে নৃশংসতা প্রতিক্রিয়ার পর গত আগস্টে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এ ঘটনায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হন।

শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার এবং গোপনে কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল।

গাজীপুরের কানাইয়া এলাকায় ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নামের প্লটসহ একটি পারিবারিক অবকাশযাপনের বাগানবাড়ি নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। এ তথ্য সামনে আসার এক দিন পর গুলশানের সম্পত্তির সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্রের তথ্য জানতে পারে দ্য টেলিগ্রাফ।

একটি আনুষ্ঠানিক নথিতে দেখা যায়, গুলশানের সম্পত্তিটি টিউলিপের ‘বর্তমান’ ও ‘স্থায়ী’ উভয় ঠিকানা হিসেবেই বিবেচিত হয়েছিল।

২০১৪ সালের মে মাসে টিউলিপ লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এর তিন সপ্তাহ পরের তারিখ আছে নথিটিতে। (তবে একই প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, তখন তিনি ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন।)

গুলশান এলাকার ১০ তলা এই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ২০১০ সালের দিকে নির্মিত হয়। একটি প্রচারমূলক ভিডিওর তথ্য অনুসারে, ফ্ল্যাটে একাধিক বারান্দা ও তিনটি শয়নকক্ষ রয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি ঢাকা। এ শহরে দুই কোটির বেশি মানুষ বসবাস করে। ঢাকার বেশির ভাগ অধিবাসী যে পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করেন, তার বিপরীত চিত্র এসব প্রশস্ত ফ্ল্যাট।

ভবনটি টিউলিপের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, টিউলিপের নানা কিংবা এই পরিবারের নামে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

সম্পত্তিটি সম্পর্কে জ্ঞাত এক ব্যক্তির ধারণা, এই পরিবারের এক সদস্যের মালিকানাধীন জমিতে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই ভবনের কোনো ফ্ল্যাটের মালিক এই পরিবারের কি না কিংবা বিশেষভাবে এটি কার নামে নামকরণ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি।

টিউলিপের বাবা (শফিক আহমেদ সিদ্দিক) যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সেখানকার একটি অনলাইন জীবনীর তথ্যানুসারে, তিনি সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত সেখানকার বসবাসকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক।

পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা এই সম্পত্তিসহ আদালতের নথিপত্র অনুসারে, গুলশানের অন্য একটি ঠিকানা ও ধানমন্ডিতে তাঁর খালার বাড়ির সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্র আছে।

শেখ হাসিনার বক্তৃতার প্রতিক্রিয়ায় গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা তাঁর ধানমন্ডির বাড়িতে আগুন দেন। সেখানে লুটপাট হয়।

স্থানীয় গণমাধ্যমের ধারণ করা ভিডিওর একটি দৃশ্যে এই বাড়ির একটি ভাঙা কাচের দরজার ফ্রেমে টিউলিপের স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের একটি ছবি ঝুলতে দেখা যায়। আর পেছনের ঘরে তখন আগুন জ্বলছিল।

টিউলিপ এর আগে পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন, যার মূল্য এক লাখ পাউন্ডের বেশি। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের রেজিস্ট্রার অব ইন্টারেস্টের তথ্য অনুসারে ফ্ল্যাটটি ২০১৫ সালে বিক্রি করা হয়।

টিউলিপস টেরিটরি

টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর বাবার পারিবারিক অবকাশযাপনের বাড়ি নিয়েও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। এই বাড়ির বাইরের দেয়ালে ও বাগানে ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নাম লেখা আছে।

গুলশানে টিউলিপের পরিবারের নামে থাকা সম্পত্তির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি।

তবে একাধিক সূত্র জানায়, সে সময় টিউলিপ বাংলাদেশ নয়, বরং লন্ডনে বসবাস করছিলেন। বাংলাদেশে তাঁর কোনো সম্পত্তি নেই।

রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তির মাধ্যমে চার বিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় টিউলিপের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। এ ছাড়া তিনি তাঁর প্রভাব ব্যবহার করে বাংলাদেশের রাজধানীতে তাঁর পরিবারের জন্য অবৈধভাবে জমি বরাদ্দ করতে সহায়তা করেছেন বলে যে অভিযোগ, তা–ও দুদক তদন্ত করছে।

তদন্তের বিষয়ে টিউলিপের এক মুখপাত্র বলেছেন, এসব অভিযোগের বিপরীতে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে এ বিষয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি। তিনি এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করছেন।

হাসিনা-রেহানাদের ৪ বাগানবাড়ি, আছে ডুপ্লেক্স ভবন, শানবাঁধানো ঘাট, পুকুরযুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে টিউলিপের পদত্যাগআপনার জন্য দরজা খোলা রইল: টিউলিপকে স্টারমারলন্ডনের ফ্ল্যাটের উৎস সম্পর্কে জানতেন না টিউলিপ: স্বাধীন উপদেষ্টা লাউরিটিউলিপের পদত্যাগ, স্টারমারের চিঠি ও লাউরির তদন্তে কী আছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র পদত য গ তদন ত ক মন ত র ন ত কর র জন য সদস য র একট বসব স ধ নমন

এছাড়াও পড়ুন:

জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ

সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ১৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

জুনাইদ আহ্‌মেদের স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ১৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, জুনাইদ আহ্‌মেদের রাজউকের ১০ কাঠার একটি প্লট ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ক্রোক করার আদেশ হওয়া অন্য ১৬টি জমি নাটোরে রয়েছে। এর বাইরে জুনাইদ আহ্‌মেদ ও তাঁর ছেলে, শাশুড়ির নামে থাকা ১৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ১২ ডিসেম্বর জুনাইদ আহ্‌মেদ ও তাঁর স্ত্রী আরিফা জেসমিনের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে। মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, জুনাইদ আহ্‌মেদের ২৪টি ব্যাংক হিসাবে ঘুষ, দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে ৩২ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৩১৪ টাকা জমা হয়। এর মধ্যে ২৯ কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৫ টাকা তুলে নেওয়া হয়। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই টাকা লেনদেন হয়েছে।

গত ১৫ আগস্ট গ্রেপ্তার হন জুনাইদ আহ্‌মেদ। বিভিন্ন হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় জুনাইদ আহ্‌মেদের এ পর্যন্ত ৬৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ