ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে আম্বানি পরিবার: যেখানেই হাত, সেখানেই সোনা
Published: 9th, February 2025 GMT
বড়লোকের স্বপ্ন বলে কথা! যে স্বপ্নই দেখেন, তা বাস্তবায়নের জন্য উঠে পড়ে লাগেন। সবার সব স্বপ্ন সত্যি হয় না, শতভাগ সাফল্যও আসে না।
তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ভারতের আম্বানি পরিবার একদম ব্যতিক্রম। এশিয়া মহাদেশের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির মন চেয়েছিল আইপিএলে দল কিনবেন। তাঁর চাওয়া অনুযায়ী ২০০৮ সালে আলোর মুখ দেখে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।
কিন্তু বাণিজ্যিক কাজে নিজেকে খুব ব্যস্ত থাকতে হয় বলে মুকেশ আম্বানি ক্রিকেটে খুব বেশি সময় দিতে পারেন না। এ কারণে তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের এই দিকটা দেখেন স্ত্রী নিতা আম্বানি ও দুই ছেলে আকাশ আম্বানি ও অন্তত আম্বানি।
মা ও দুই ছেলে মিলে নিজেদের রিলায়েন্স গ্রুপের মালিকানাধীন ইন্ডিয়াউইন স্পোর্টস লিমিটেডকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আইপিএলের পর টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনেছেন ডব্লুপিএল (মেয়েদের আইপিএল নামে পরিচিতি), ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি২০ (আইএলটি২০), এসএ২০ ও মেজর লিগ ক্রিকেটে (এমএলসি)।
আর এ সব লিগে শুধু অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যেই খেলেনি আম্বানি পরিবারের দল, সম্ভাব্য সব প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতে বৃত্তপূরণও করে ফেলেছে। সর্বশেষ গতকাল রাতে এসএ২০-তে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আম্বানি পরিবারের মালিকানাধীন এমআই কেপটাউন। জোহানেসবার্গের ফাইনালে প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন সানরাইজার্স ইস্টার্ন কেপকে কাল ৭৬ রানে হারিয়েছে কেপটাউন।
অথচ আম্বানি পরিবারকে প্রথম শিরোপার স্বাদ পেতে ৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ২০০৮ সালে আইপিএল দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস প্রথম ট্রফি জিতেছিল ২০১১ সালে, সেটি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ টি-টোয়েন্টি। ২০১৩ সালে জেতে আরেকটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। ওই বছরই আইপিএলে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি।
এরপর ২০১৫, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২০ সালেও আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গে যৌথভাবে পাঁচটি করে ট্রফি জিতে তারাও আইপিএল ইতিহাসের সফলতম দল।
গত চার বছর ধরে আইপিএলে আম্বানি পরিবারের শিরোপা খরা চললেও অন্য টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে তাঁদের দল সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছে।
২০২৩ সালে ডব্লুপিএলের উদ্বোধনী আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস নারী দল। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের এমএলসির প্রথম আসরেরও শিরোপা জেতে আম্বানিদের মালিকানাধীন এমআই নিউইয়র্ক।
২০২৪ সালে সংযুক্ত আমিরাতের আইএলটি২০-তে এমআই এমিরেটস নামের দলটিও চ্যাম্পিয়ন হয়। আর গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০-তে চ্যাম্পিয়ন হলো এমআই কেপটাউন। এ যেন আম্বানি পরিবারের যেখানেই হাত, সেখানেই সোনা ফলানো!
কাল এমআই কেপটাউনের হয়ে শিরোপা জিতে ট্রেন্ট বোল্ট তো অনন্য কীর্তিই গড়ে ফেলেছেন। নিউজিল্যান্ডের এই তারকা পেসার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একই ফ্র্যাঞ্চাইজির চারটি ভিন্ন দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এমআই কেপটাউনের আগে আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, এমএলসিতে এমআই নিউইয়র্ক ও আইএলটি২০-তে এমআই এমিরেটসের জার্সিতে ট্রফির দেখা পেয়েছিলেন।
সম্প্রতি ক্রিকেটে নিজেদের পরিসর আরও বাড়িয়েছে আম্বানি পরিবার। ৬ কোটি পাউন্ডে (৯১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা) ইংল্যান্ডের দ্য হানড্রেডের ফ্র্যাঞ্চাইজি ওভাল ইনভিনসিবলসের ৪৯% শতাংশ মালিকানা কিনেছে তারা। এ বছর দ্য হানড্রেড হবে আগস্টে। আম্বানি পরিবারের চোখ নিশ্চয় সেই ট্রফির ওপরও থাকবে!
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ র য ঞ চ ইজ পর ব র র আম ব ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
মামলা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নেন দুদক কর্মকর্তা সুদীপ কুমার
মামলা থেকে ‘রেহাই’ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আসামি থেকে ঘুষ নিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী। বিভাগীয় মামলার তদন্তেও তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩৯(খ), ৩৯(৪) ও ৩৯(চ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ‘চাকরি হতে বরখাস্ত’ করে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) এ-সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে সই করেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
এতে বলা হয়, সুদীপ কুমার চৌধুরী, উপ-সহকারী পরিচালক (সাময়িক বরখাস্ত)-এর বিরুদ্ধে আনিত অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বর্ণিত অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৪০(১) (খ) (৫) মোতাবেক তাকে ‘চাকরি হইতে বরখাস্ত’ গুরুদণ্ড প্রদান করা হলো। এ আদেশ জারির তারিখ থেকে শাস্তি কার্যকর হবে বলেও জানানো হয় আদেশে।
অভিযোগে জানা যায়, সুদীপ কুমার চৌধুরী, দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, বগুড়া জেলা পুলিশে গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন।
আসামির সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তাকে মামলা (নং-০১ জি,আর-০১/২০২১ (দুদক) তাং-২৪/০১/২০২১) হতে অব্যাহতি প্রদানের আশ্বাস দিয়ে বড় অংকের ঘুষ দাবি করেন। এক পর্যায়ে আসামি আলমগীর হোসেনের খালাতো বোন বেগম রুমাইয়া শিরিনের নিকট হতে তিনি ৭ লাখ টাকা ঘুষের কিছু অর্থ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাকি টাকার অংশ হিসেবে বগুড়া বারের আইনজীবী কামাল উদ্দিন থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন। পরে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আসিফুর রহমানের মাধ্যমে আরো ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন দুদকের এই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, সুদীপ কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে দুদক অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য সমন্বিত জেলা কার্যালয় টাঙ্গাইল
উপপরিচালক নাছির উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়।
তিনি অভিযোগ তদন্তকালে সুদীপ কুমারের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনকে মামলা হতে অব্যাহতি প্রদানের জন্য তার খালাতো বোন বেগম রুমাইয়া শিরিন এবং অ্যাডভোকেট সৈয়দ আসিফুর রহমানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত মোবাইলের মাধ্যমে ঘুষ দাবি ও গ্রহণের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সংগ্রহ করে তা দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠান। পরে বিশেষজ্ঞগণের মতামতে সুদীপ কুমারের বিরুদ্ধে প্রমাণ পান।
দুদক জানায়, দুদকের যে কোনো অনুসন্ধান ও মামলা তদন্তকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সাক্ষীদের সাথে টেলিফোনে কিংবা মোবাইলে যোগাযোগ না করার জন্য নির্দেশনা থাকলেও আসামি সুদীপ কুমার তা প্রতিপালন না করে দুর্নীতি দমন কমিশনের জারিকৃত আদেশ অমান্য করেছেন।
এমনকি, তিনি কমিশনের আদেশ অমান্য করে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট হতে ঘুষ দাবি ও গ্রহণ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ মোতাবেক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নম্বর ০৯/২০২৩ রুজু পূর্বক তার নিকট অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয়।
পরবর্তীতে সুদীপ কুমার অভিযোগের জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানি চাইলে ২০২৩ সালের ৮ জুলাই তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। শুনানি শেষে অভিযোগের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ মোতাবেক আবারো একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই বছরের ২ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে সুদীপ কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী, ব্যক্তিগত শুনানিতে প্রদত্ত বক্তব্য, তদন্ত প্রতিবেদন, অন্যান্য কাগজপত্র ও প্রমাণক পর্যালোচনায় সুদীপ কুমার চৌধুরী বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বর্ণিত অভিযোগে তাকে ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত কমিশনের ০৩/২০২৫ নম্বর সভায়
চাকরি হতে বরখাস্ত করার গুরুদণ্ড প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। যা বুধবার দুদক চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত আদেশে কার্যকর করা হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ