প্রাণঘাতী রোগ ক্যানসারের বিস্তার ঠেকানোর কৌশল আবিষ্কার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা। বিশেষ এ কৌশলের মাধ্যমে কোষের আণবিক স্তরকে সক্রিয় করে ক্যানসার আক্রান্ত কোষের বিকাশ থামানোর পাশাপাশি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। এ বিষয়ে ক্যানসার বিশেষজ্ঞ টিফানি ট্রোসো-স্যান্ডোভাল বলেন, এই কৌশল ক্যানসার আক্রান্ত কোষকে নির্মূল করার পরিবর্তে নতুন কৌশলে কাজ করে। নতুন এই কৌশলকে পানি ফোটানোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় একটি সংক্ষিপ্ত মুহূর্ত আছে, যখন পানি সম্পূর্ণ তরল বা সম্পূর্ণ বাষ্প হয় না। একইভাবে ক্যানসার বিকাশে একটি সংক্ষিপ্ত পর্যায় রয়েছে, যেখানে কোষ সুস্থ ও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার মুহূর্তে অবস্থান করে। প্রথাগত ক্যানসার চিকিৎসায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ অপসারণ করা হয়। পাশাপাশি বিকিরণ বা কেমোথেরাপির মাধ্যমে কোষ ধ্বংস করার ওপর নজর দেওয়া হয়। নতুন গবেষণায় একটি তৃতীয় পদ্ধতির উন্মোচন হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ক্যানসার রোগীরা তাদের সুস্থ কোষ পুনরুদ্ধার করতে পারে।

নতুন এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন কোষকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম একটি এনজাইম শনাক্ত করেছেন, যা কিছু ক্যানসার–সম্পর্কিত প্রোটিনের ভাঙনকে বাধা দেয়। এনজাইমটি টিউমার বৃদ্ধিতে কাজ করে। আর তাই এনজাইমটি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্ত কোষকে স্বাভাবিক ও সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক কোয়াং-হিউন চো জানিয়েছেন, প্রাথমিক গবেষণায় জেনেটিক নেটওয়ার্ক স্তরে ক্যানসার বিকাশের সময় কোষের মধ্যে কী কী পরিবর্তন ঘটে, তা জানা গেছে। ক্যানসারের বিকাশ দ্রুত হয় না। ধীরে ধীরে ঘটে সুস্থ কোষের ডিএনএতে পরিবর্তন হয়। প্রচলিত চিকিত্সাপদ্ধতিতে ক্যানসার কোষ ধ্বংসের সময় রোগীদের ক্লান্তি, বমি বমি ভাব ও চুল পড়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

প্রচলিত ক্যানসার চিকিৎসায় শরীরের সব কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তবে ক্যানসার চিকিৎসার নতুন এ কৌশল বিকিরণ ও কেমোথেরাপির চেয়ে কম ক্ষতিকর বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে কোলন ক্যানসারের কোষ থেকে তৈরি টিউমারে নতুন চিকিত্সাপদ্ধতির পরীক্ষা করা হয়েছে। এনজাইমের মাধ্যমে ক্যানসার চিকিৎসার এই কৌশল অ্যাডভান্সড সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

সূত্র: ডেইলি মেইল

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরার শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন, এক দিনে চারবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’

মাগুরায় যৌন নির্যাতনের শিকার আট বছর বয়সী শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন। বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে। শিশুটির সুস্থতার জন্য সেনাবাহিনী দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) শিশু বিভাগের শিশুরোগের চিকিৎসাসংক্রান্ত নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (পিআইসিইউ) শিশুটির চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন স্ট্যান্ডার্ড আইসিইউ প্রটোকল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং সে অনুযায়ী তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

সেনাবাহিনীর ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, শিশুটি আজ (বুধবার) চারবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়েছে। সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) দিয়ে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল করা হয়েছে। তার রক্তে লবণের ভারসাম্যহীনতার কারণে ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। অন্যান্য জটিলতার পাশাপাশি শিশুটির রক্তচাপ ৬০/৪০ মিমি পারদ কিংবা তার চেয়ে নিম্নমুখী।

সিএমএইচের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসা পর্ষদ সর্বাধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতির মাধ্যমে শিশুটির জীবন রক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের এই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন শিশুটির মা। শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। শিশুর বোনের শ্বশুরকে সাত দিন, স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুর প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন মাগুরার আদালত।

গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিআইসিইউ থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ