আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির এবারের আসর মাঠে গড়াবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আটটি দল দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে লড়াই করবে শিরোপার জন্য। টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, পাকিস্তান ও নিউ জিল্যান্ড। ‘বি’ গ্রুপে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড।
আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ সালে এই টুর্নামেন্টের নামকরণ করা হয় ``আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি’’। এরপর ২০০৪, ২০০৬, ২০০৯, ২০১৩ ও ২০১৭ সালে আরো পাঁচটি আসর হয়। তার আগে আরো দুটি আসর হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে প্রথম আসর বসেছিল বাংলাদেশে। ২০০০ সালে দ্বিতীয় আসর বসেছিল কেনিয়ায়।
আরো পড়ুন:
২০ বছর পর লঙ্কানদের ঘরের মাঠে ধবলধোলাই করল অজিরা
ফিলিপস ঝড়ে পাকিস্তানকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতি সারল কিউইরা
মূলত নন টেস্ট প্লেয়িং দেশগুলোর ক্রিকেটের উন্নতির জন্য তহবিল সংগ্রহের নিমিত্তেই এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল আইসিসি। তৎকালীন আইসিসি সভাপতি, বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরম বন্ধু- জগমোহন ডালমিয়ার মাথা থেকেই এসেছিল এটির ধারণাটি।
তখন অবশ্য এটার নাম আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ছিল না। নাম ছিল আইসিসি নকআউট ট্রফি। ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে বড় ক্রিকেট আসর ছিল এটি। যেটাকে ‘`মিনি ওয়ার্ল্ড কাপ’’ও বলা হতো। প্রথমদিকে সরাসরি নকআউট পদ্ধতিতে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতো। কোয়ার্টার ফাইনাল দিয়ে শুরু হতো টুর্নামেন্ট। কোনো গ্রুপপর্ব ছিল না। যাতে বিশ্বকাপের মর্যাদা কোনোভাবেই কমে না যায়।
প্রথম দিকে শুধু টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো খেলার সুযোগ পেত। এরপর ১০টি পূর্ণ সদস্য দেশ ও আরো দুটি সহযোগী দেশ টুর্নামেন্টে অংশ নিত। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। টুর্নামেন্ট শুরুর ছয় মাস আগে শুধু ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা আটটি দল সুযোগ পাচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার।
শুরুতে প্রতি দুই বছর পরপর হলেও এখন প্রতি চার বছর পরপর হচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। যদিও ২০১৭ সালের পর ২০২১ সালে হয়নি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পরিবর্তে সেবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়েছিল। তবে ২০২৫ সালে যথারীতি আবার মাঠে ফিরেছে মর্যাদাকর এই আসর।
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি/নকআউট ট্রফির প্রথম আসরের আদ্যোপান্ত:
১৯৯৮ সালে আইসিসি নকআউট ট্রফির প্রথম আসরের আয়োজক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ্। কিন্তু ওই সময়ে ফ্লোরিডা কিংবা শারজাহতে গিয়ে খেলতে রাজি হচ্ছিল না বেশ কিছু দেশ। সে কারণে জুন-জুলাইতে হঠাৎ করে প্রথম আসরের আয়োজক নির্বাচন করা হয় বাংলাদেশকে। অবশ্য বাংলাদেশকে আয়োজক করার পরও কয়েকটি দল আইসিসি নকআউট ট্রফিতে খেলতে আসতে রাজি হয়নি। তার মধ্যে ছিল ইংল্যান্ড। তারা দ্বিতীয় বিভাগের দল পাঠায় এই আসরে খেলতে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২৪ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই টুর্নামেন্ট। ওয়ানডে ক্রিকেটকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় করে তুলতেই প্রথম আসর বাংলাদেশে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসি। বাংলাদেশ তখন টেস্ট খেলুড়ে দেশ না হওয়ায় খেলার সুযোগ পায়নি। যদিও বাংলাদেশ তখন আইসিসি ট্রফি (১৯৯৭) জিতে ১৯৯৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। তখন বাংলাদেশে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছিল। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বন্যায় পাঁচ শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছিল। কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল।
সে কারণে এই টুর্নামেন্ট শেষ পর্যন্ত ঠিকমতো আয়োজন করতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল আইসিসি। যদিও শেষ পর্যন্ত সফলভাবেই শেষ হয়েছিল আসর। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই আসর থেকে উপার্জিত টাকার ১০ শতাংশ বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে জমা দিয়েছিল। বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে না খেললেও বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দর্শকদের ছিল উপচেপড়া ভীড়। সেটা মুগ্ধ করেছিল আইসিসি ও খেলতে আসা টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোকে।
সেবার সরাসরি নকআউট পর্ব দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিল। তখন টেস্ট খেলুড়ে দেশ ছিল ৯টি (অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে)। কিন্তু ৯টি দল তো আর সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারবে না। একটি দলকে ছাটাই করতে হবে। সে কারণে র্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে থাকা দুটি দলের মধ্যে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল খেলিয়ে একটি দলকে বিদায় দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ৮টি দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে। ২৪ অক্টোবর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ে ও নিউ জিল্যান্ড প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে। জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় নিউ জিল্যান্ড। আর জিম্বাবুয়ে বিদায় নেয়।
কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা, ভারত-অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান মুখোমুখি হয়। সেখান থেকে সেমিফাইনালে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারত। বিদায় নেয় ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। কোয়ার্টার ফাইনালে কোনো বৃষ্টি না হলেও প্রথম সেমিফাইনালের আগে দেখা দেয় বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার সেমিফাইনাল ম্যাচটি নেমে আসে ৩৯ ওভারে। এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে বৃষ্টি আইনে ৯২ রানে হারিয়ে ফাইনালে নাম লেখায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর অপর সেমিফাইনালে ভারতকে ৬ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দিবারাত্রির ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৯ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রানের বেশি করতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। ৩ রানের দারুণ এক জয়ে আইসিসি নকআউট ট্রফির প্রথম আসরের শিরোপা জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর বাংলাদেশ সফল আয়োজক হিসেবে প্রশংসা কুড়ায় ক্রিকেট বিশ্বের।
এক নজরে আইসিসি নকআউট ট্রফি-১৯৯৮:
নাম: উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ-১৯৯৮
ফরম্যাট: ওয়ানডে (৫০ ওভার)
আয়োজক: বাংলাদেশ
অংশগ্রহণকারী দল: ৯টি
মোট ম্যাচ: ৮টি (প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালসহ)
চ্যাম্পিয়ন: দক্ষিণ আফ্রিকা
রানার্স-আপ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
সিরিজসেরা: জ্যাক ক্যালিস (দ.
সবচেয়ে বেশি রান: ও.ইন্ডিজের ‘ফিলো ওয়ালেস’ (২২১ রান)
সবচেয়ে বেশি উইকেট: দ.আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস (৮টি)।
* আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি মূলত ফিফা কনফেডারেশন কাপের আদলে করা হয়েছে। কনফেডারেশন কাপে বিভিন্ন কনফেডারেশনের সেরা দলগুলো অংশ নেয়, তেমনি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের সেরা দলগুলো আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নেয়।*
ঢাকা/আমিনুল/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই ট র ন ম ন ট প রথম আসর র ছ ল আইস স হয় ছ ল উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
রিয়াল জুজু তাড়াতে পারবে অ্যাতলেটিকো?
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভীষণ দুর্ভাগা অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। এই টুর্নামেন্টের নকআউটে কোনোভাবেই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে পেরে ওঠে না তারা। স্পেনের রাজধানীর এই দুই দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে নকআউটে এখন পর্যন্ত পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিবারই জয় পেয়েছে রিয়াল।
এবার শেষ ষোলোর লড়াইয়ে সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রথম লেগে ২-১ গোলে জিতেছে রিয়াল। অ্যাতলেটিকোর মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে দিয়াগো সিমিওনির শিষ্যরা কী পারবে এই ব্যবধান ঘুচিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে! এজন্য ন্যূনতম দুই গোলের ব্যবধানে জিততে হবে তাদের।
রিয়াল মাদ্রিদ হলো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা। ১৫ বার তারা মর্যাদাপূর্ণ এ টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে। কিন্তু অ্যাতলেটিকো একবারও জিততে পারেনি। এর মধ্যে অ্যাতলেটিকোর জন্য সবচেয়ে যন্ত্রণার ছিল ২০১৪ ও ২০১৬ সালের ফাইনাল। ২০১৪ সালে লিসবনের ফাইনালে প্রথমার্ধেই দিয়াগো গডিনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল অ্যাতলেটিকো। ৯৩ মিনিটে সার্জিও রামোস হেড করে সমতা ফেরানোর পর অতিরিক্ত সময়ে গ্যারেথ বেল, মার্সেলো ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো গোল করলে ৪-১ ব্যবধানে জিতে রিয়াল।
দুই বছর পর মিলানে নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র থাকার পর টাইব্রেকারে ৫-৩ ব্যবধানে জয় পায় রিয়াল। ফাইনালে সেটি ছিল অ্যাতলেটিকোর তৃতীয় হার। এর আগে ১৯৭৪ সালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ফাইনালে হেরেছিল স্পেনের ক্লাবটি।
২০১৭ সালে সেমিফাইনালে বার্নাব্যুতে ৩-০ গোলে হারার পর ঘরের মাঠে দ্বিতীয় লেগে ২-১ গোলে জিতেও বাদ পড়তে হয়। এ ছাড়া ২০১৫ সালে দ্বিতীয় লেগে ৮৮ মিনিটে গোল হজম করে ছিটকে যেতে হয়েছিল তাদের। এই আসরে দুই দলের প্রথম দেখা ১৯৫৯ সালে। সেমির প্লেঅফে ২-১ গোলে জিতেছিল রিয়াল।
পরাজয়ের এই বৃত্ত ভাঙতে মরিয়া অ্যাতলেটিকো বস দিয়াগো সিমিওনে, ‘আমাদের সমর্থকরা দারুণভাবে উৎসাহিত করছে। তারা আমাদের শক্তি জোগাচ্ছে, সাহস দিচ্ছে। এভাবেই তাদের পাশে চাই। আমাদের সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আশা করছি, বুধবার আমাদের জন্য দারুণ একটি রাত হবে।’
কঠিন পরীক্ষা যে দিতে পারে সেটা রিয়াল বস কার্লো আনচেলত্তিও মানছেন, ‘ভীষণ কঠিন একটি রাত গেছে (বার্নাব্যুতে)। তাহলে চিন্তা করেন বুধবার কী হবে!’ প্রথম লেগে রিয়ালের দুই তারকা ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়র কিছুই করতে পারেননি। তবে লা লিগায় ভায়েকানোর বিপক্ষে তারা দু’জনই গোল করেছেন। আর লা লিগায় গেটাফের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে অ্যাতলেটিকো।