২০ বছর পর লঙ্কানদের ঘরের মাঠে ধবলধোলাই করল অজিরা
Published: 9th, February 2025 GMT
গলে অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ জয়টা এক রকম নিশ্চিতই ছিল। তবে শ্রীলঙ্কার কিপার-ব্যাটার কুশল মেন্ডিস অজিদের সেই জয়ের অপেক্ষাকে কতটা দীর্ঘায়িত করতে পারেন সেটাই ছিল দেখার। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) চতুর্থ দিনটা ৪৮ রান নিয়ে শুরু করা কুশল মাত্র ২ রান যোগ করেই অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার নাথান লায়নের শিকারে পরিণত হলেন। তাতেই শেষ হয়ে যায় স্বাগতিকদের শেষ আশাটুকুও। শেষমেশ অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭৫ রানের। যা অস্ট্রেলিয়া তাড়া করেছে ৯ উইকেট হাতে রেখেই।
ফলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয় স্টিভেন স্মিথের দলের। শুধু তাই নয়, ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর আবারও অজিদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ হলো লঙ্কানরা। অন্যদিকে ২০০৬ সালের পর প্রথম উপমহাদেশে এসে কোন দলকে ধবলধোলাই করার গৌরব অর্জন করল অজিরা। এর আগে ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া।
তৃতীয় দিনে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ২১১ রানে দিন শেষ করা শ্রীলঙ্কা চতুর্থ দিনে সর্বমোট ৩০ মিনিট টিকে ছিল। স্বাগতিকরা অলআউট হওয়ার আগে ২৩১ রান করে দ্বিতীয় ইনিংসে।
আরো পড়ুন:
ফিলিপস ঝড়ে পাকিস্তানকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতি সারল কিউইরা
হোয়াইটওয়াশের দ্বারপ্রান্তে শ্রীলঙ্কা
সফরকারীরা ৭৫ রানের ছোট লক্ষ্যে নেমে দলীয় ৩৮ রানের মাথায় ট্রাভিস হেডের উইকেটটি হারায়। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন প্রবাত জয়াসুরিয়ার বলে। এরপর অবশ্য ওপেনার উসমান খাজা এবং মারনাস লাবুশেনের নিরবিচ্ছিন্ন ৩৭ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মাঠের বিদায় কেন ফেসবুকে
‘সব কিছু নিখুঁতভাবে শেষ হয় না। তার পরও একটা সময় শেষ বলে সামনে এগিয়ে যেতে হয়’– বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে দেওয়া অবসরের ঘোষণায় এই দুটি লাইনে মাহমুদউল্লাহর আক্ষেপটা টের পাওয়া যায়।
কী নিয়ে আক্ষেপ, সেটা সবার জানা। আর মাহমুদউল্লাহ একা নন; মাশরাফি মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম– বাংলাদেশের ক্রিকেটের সোনালি প্রজন্ম হিসেবে খ্যাত এই পাঁচজনের একই আক্ষেপ। মাঠের বদলে তাদের অধিকাংশের বিদায় নিতে হয়েছে ফেসবুক থেকে! যাদের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সিংহভাগ অর্জন, তাদের এমন আক্ষেপভরা বিদায় কেন? দায়টাই বা কার?
মাশরাফি মুর্তজাকে দিয়ে এই পঞ্চপাণ্ডবের বিদায়ের সূচনা। ১২ মার্চ মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে সেই অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। তবে মুশফিকুর রহিম এখনও টেস্ট থেকে অবসর নেননি। মাশরাফি অবশ্য অবসরের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। ২০০৯ সালে উইন্ডিজ সফরে চোট পাওয়ার পর থেকে তিনি আর টেস্ট খেলেননি।
২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে তৎকালীন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে অভিমান করেই টি২০ থেকে অবসর নিয়েছিলেন। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়েন। এরপরই গুঞ্জন ওঠে মিরপুরে বিদায়ী ম্যাচ খেলতে চান মাশরাফি। বিসিবি থেকেও আয়োজনের কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু কী এক কারণে সেই ম্যাচ হয়নি।
সাকিব আল হাসান দেশের মাটি থেকে অবসর নেওয়া ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে কানপুরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট শেষে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, শেষ টি২০ খেলে ফেলেছেন, দেশের মাটিতে টেস্ট থেকে অবসর নিতে চান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ওয়ানডে ছাড়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন। কিন্তু দুটোর একটাও হয়নি।
২০২৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার জেরে গত আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আর দেশে ফিরতে পারেননি। তাঁর নামে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। তাই সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ বলেই ধরে নেওয়া যায়।
তামিম ইকবালের অবসর নিয়ে নাটক হয়েছে সবচেয়ে বেশি। জাতীয় দলে খেলবেন নাকি অবসর নেবেন, এ নিয়ে প্রায় দুই বছর নানা আলোচনার পর গত ১০ জানুয়ারি ফেসবুকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। ফলে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেটি জাতীয় দলের হয়ে তাঁর শেষ ম্যাচ হয়ে রইল।
মুশফিকুর রহিম টি২০ বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের জেরে সমালোচনার শিকার হলে ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে কুড়ি ওভারের ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও বাজ পারফরম্যান্সের কারণে সমালোচনা হলে ওয়ানডে থেকে তিনি অবসরের ঘোষণা দেন ৫ মার্চ।
গত বুধবার মাহমুদউল্লাহর অবসরের পর একটা বিষয়ে জোরেশোরেই আলোচনা শুরু হয়েছে। কেন তারা মাঠ থেকে অবসর নিতে পারলেন না? মাঠ থেকে অবসর নেওয়ার সংস্কৃতি কী দেখা যাবে?
এ বিষয়ে গতকাল কথা বলেছেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন, ‘ওদের (মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ) ক্যারিয়ারটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য উজ্জ্বল ব্যাপার। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটা জায়গা থেকে আরেকটা জায়গায় নিয়ে এসেছিল ওরা। আমি মনে করি মাঠ থেকে অবসর ওদের প্রাপ্য। কেন ওরা মাঠ থেকে অবসর নিল না, সেটা ওরাই ভালো বলতে পারবে।’
বিষয়টা নিয়ে আফসোস করেছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারও, ‘মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারলে অবশ্যই ভালো হতো। সেটা তাদের প্রাপ্যও। বাংলাদেশ দলের জন্য যা করেছে, মাঠ থেকে নিতে পারলে খুব ভালো হতো। ভরা স্টেডিয়াম থেকে নিতে পারলে বিদায়টা প্রকৃত অর্থেই সুন্দর হতো।’
মাহমুদউল্লাহর বিদায় নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই বিষাদের একটি মুহূর্ত। প্রায় দুই দশক জাতীয় দলের অন্যতম প্রধান ভরসা ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। খেলার প্রতি তাঁর নিবেদন ও পারফরম্যান্স ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা মানদণ্ড তৈরি করেছে।’ তবে মাঠ থেকে বিদায় বিষয়ে কিছু বলেননি বিসিবি সভাপতি।