সর্বস্তরের মানুষের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে খানির বার্ষিক পরিকল্পনা সভা
Published: 9th, February 2025 GMT
ঢাকার আদাবরে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের (খানি) খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার বিষয়ক প্রচারাভিযান প্রকল্পের বার্ষিক পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খানি সেক্রেটারিয়েট সংগঠন পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক- প্রান এর আয়োজনে শনিবার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন জেলায় খাদ্য অধিকার বিষয়ে কর্মরত খানির সদস্য সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা এ পরিকল্পনা সভায় যোগ দেন।
এই সভায় খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার উপায়, সুযোগ ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটসহ মুদ্রাস্ফীতির এই সময়ে কীভাবে দেশের খাদ্য ও নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা যায় তা নিয়েও আলোচনা করা হয়। খানির সহসভাপতি ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রেজাউল করিম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন প্রানের প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্সের প্রধান মোহন কুমার মণ্ডল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন- লিডের প্রধান অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান, এনজিও ফোরাম অন এডিবির প্রধান নির্বাহী রায়ান হাসান, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চের প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী, বিন্দু নারী উন্নয়ন সংস্থার প্রধান জান্নাতুল মাওয়া, কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি মো.
রায়ান হাসান বলেন, আজকের এ সভায় খাদ্য অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সম্পৃক্ত অনেক বিষয় উঠে এসেছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে খানির বিভিন্ন সদস্য সংস্থা বিভিন্ন কাজ করে। খানির সদস্যরা একটি অভিন্ন লক্ষ্য নিশ্চিত করে তা বাস্তবায়নে কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিই আমাদের মূল কাজের ক্ষেত্র হওয়া উচিত। রাজনৈতিক অর্থনীতির লেন্স থেকে সাপ্লাই ভ্যাল্যু চেইন স্পষ্টভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি।’
রেজাউল করিম সিদ্দিকী বলেন, বাজারে যখন কোনো কিছুর দাম বেড়ে যায় আমরা সবাই উদগ্রিব হয়ে পড়ি, কিন্তু বাজারে কোনো কিছুর দাম পড়ে গেলে যখন কৃষককে তার উৎপাদিত ফসল ফেলে দিতে হয় তখন আমরা আর কিছু বলি না। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সবচেয়ে বড় অবদান যে কৃষকের, তাদের ব্যবসায়িক দক্ষতা তৈরি করতে হবে যেন তারা বুঝতে পারে কোন ফসল কতটা চাষ করতে হবে। বাজার বলতে আমরা শুধু ঢাকাকেই বুঝি। তাই প্রান্তিক কৃষকেরাও তাদের ফসল নিয়ে স্থানীয় বাজার ছেড়ে ঢাকামুখী হতে চায়। আমাদের স্থানীয় চাহিদা অনুসারে বাজার তৈরি নিয়ে ভাবতে হবে।
খানির সেক্রেটারিয়েট ও পরিকল্পনা সভার আয়োজক প্রানের প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ বলেন, আমরা যারা কৃষকদের পক্ষে কথা বলছি, আমাদের মাথায় এখনও খোরপোশের কৃষি রয়ে গেছে। আমরা নতুন পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করতে চাচ্ছি না। অনেক জায়গায় সমাধান হিসেবে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং আসছে, তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এটা আসলে কর্পোরেট ফার্মিংয়ের প্রথম স্টেজ।
অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা প্রান্তিক কৃষক, দরিদ্র কৃষক, আদিবাসী কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করতে জোর দিতে চাই। তাই আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক খসড়া তৈরি করছি যেখানে ‘রাষ্ট্র খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারে’ -এমন ধারার পরিবর্তে, ‘রাষ্ট্র খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে’, ব্যবহার করা হবে। এতে খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িত ও বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এই পরিকল্পনা সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল খানি বাংলাদেশের সদস্যদের মধ্যে সংহতি গড়ে তোলা, যা বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাগুলোকে দৃঢ় করবে। এছাড়া আলোচনায় বক্তারা নারী কৃষকের স্বীকৃতি, তরুণদের কৃষি ও খাদ্য প্রচারাভিযানের সঙ্গে যুক্ত করা, নদী রক্ষা, কৃষকদের পানি বণ্টন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, স্থানীয় বীজ সংরক্ষণ ও বীজ বণ্টন, কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেন। সভায় ত্রিশটিরও বেশি সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ রদর আম দ র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
দুই ছাত্রীকে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম
নরসিংদীর চরআড়ালিয়ায় ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর বাঘাইকান্দি গ্রামের কাজীবাড়ির মোড়ে রায়পুরা উপজেলার চরআড়ালিয়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে এ মানববন্ধন হয়।
ধর্ষণের অভিযোগে ইমরান, রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, সাইফুল মিয়া, রমজান, কাইয়ুম ও তার দুই সহযোগীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে এত ধর্ষণ হচ্ছে কিন্তু অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না। পুলিশ কী করে? অনতিবিলম্বে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন তারা। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তা না হলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে। আলটিমেটাম দিয়ে তারা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষকদের আইনের আওতায় আনা না হলে রামপুরা থানাসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন চরআড়ালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জহিরুল ইসলাম জাজু, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু মুসা, জেলা ছাত্রনেতা সাব্বির ভূঁইয়া, সাবেক চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান সরকার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বিকেল ৩টার দিকে দুই বান্ধবী চরআড়ালিয়া গ্রামের কাইয়ুম ও মুন্নার সঙ্গে ঘুরতে বের হয়। তারা সারা বিকেল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে বাঘাইকান্দি এলাকা থেকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া-দাওয়া করে। পূর্ব থেকেই কাইয়ুম ও মুন্না তাদের বন্ধুদের পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থাকতে বলে। সে অনুযায়ী অন্য বন্ধুরা স্কুলের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে অটোরিকশাযোগে তাদের নিয়ে পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে যায় কাইয়ুম ও মুন্না। সেখানে যাওয়ার পর এক ছাত্রীকে জোর করে স্কুলের পাশে নিক্সন মেম্বারের বাড়ির ছাদে নিয়ে যায় ইসরাফিল, সাইখুল, রমজান ও কাইয়ুম এবং অপর ছাত্রীকে মুন্না, ইমরান, রাজ্জাক, আব্দুর রহমান নদীর পারে নিয়ে যায়। সেখানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় অভিযুক্তরা। এ সময় ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী চিৎকার দিতে চাইলে ইট হাতে নিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার হুমকি দেয়। পরে দুই ছাত্রী বাড়ি ফিরে গেলে অবস্থা দেখে স্বজনরা জানতে চাইলে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় রায়পুরা থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে দুটি মামলা করা হয়েছে।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।