সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস আরও তিন জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। বিনিময়ে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল আরও ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আল জাজিরা।

গাজা থেকে মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলিরা বন্দিরা হলেন- এলি শারাবি, ওহাদ বেন আমি ও অর লেভি। তাদের শনিবার সকালে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তারা ইসরায়েলে তাদের পরিবারের সাথে একত্রিত হন। অন্যদিকে, ইসরায়েলি কারাগার থেকে মক্তির পর ফিরে আসা ফিলিস্তিনিদের নিয়ে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় উৎসব চলছে।

তাদের প্রতিনিধিরা বলেছেন, তাদের সবার স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বা সুনির্দিষ্ট আর কিছু বলা হয়নি। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২১ জন ইসরায়েলি বন্দি ও ৫৬৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছেন।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত ৩৩ জন বন্দি ও এক হাজার ৯০০ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইসরায়েল অবশ্য জানিয়েছে, ৩৩ জন বন্দির মধ্যে আট জন মারা গেছে।

শনিবার শারাবি, বেন আমি ও লেভিকে মধ্য গাজায় দেইর আল-বালাহ এলাকায় রেড ক্রসের কাছে তুলে দেওয়া হয়। একজন হামাস কর্মকর্তা ও রেড ক্রস প্রতিনিধি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে বন্দি হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করেন। এরপর বন্দিদের মঞ্চে আনা হয়। এ সময় সশস্ত্র ব্যক্তিরা তাদের ঘিরে ছিলেন।

গত মাসে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এটি পঞ্চম বন্দি বিনিময়।

এদিকে মুক্তি কার্যক্রমকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কথা জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি)। সংস্থাটি বলেছে, “আমরা মধ্যস্থতাকারীসহ সব পক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে করে সামনে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি মর্যাদাকর ও গোপনীয় হয়”।

পরে ইসরায়েল ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৭০ জন যাবজ্জীবন কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন। আর ১১১ জনকে গাজা যুদ্ধের সময় আটক করা হয়েছিল। বাকী সাতজনকে তখনও পাঠানো হয়নি।

ফিলিস্তিন প্রিজনার্স ক্লাব এএফপিকে জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে সাতজনকে রামাল্লার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়া সব বন্দিকেই স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা দিতে হবে।

মুক্তি পাওয়াদের মধ্যে পশ্চিম তীরে হামাসের সুপরিচিত নেতা ৬১ বছর বয়সী জামাল আল তাউইলও রয়েছেন। বিভিন্ন সময় তিনি প্রায় ১৯ বছর ইসরায়েলের কারাগারে কাটিয়েছেন। তার কন্যা বুশরা আল-তাউইল গত জানুয়ারিতে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের সাম্প্রতিককালে কোনও অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছিল।

বিএইচ

.

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: জন ফ ল স ত ন ইসর য় ল বন দ ক

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিপণের টাকা দিতে দিতে নিঃস্ব সাগরের পরিবার

পরিবারের সচ্ছলতার জন্য লিবিয়া পাড়ি জমান মতিয়ার রহমান সাগর (২৪)। যখন তিনি দেশটির বেনগাজী পৌঁছান, তখনও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন চোখে। বাড়িতে রেখে যাওয়া নববধূকে ঘিরে সংসার সাজানোর জন্য কষ্টের কাজ নেন। পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে তিন-চার মাস কাজ করার পরই বিপদ গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসতে থাকে এই তরুণের দিকে। যার পরিসমাপ্তি হয়েছে গত ১১ ফেব্রুয়ারি। এদিন ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়ে মৃত ভেবে সাগরকে ফেলে যায় লিবিয়ার মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। এর আগে ১০টি মাস পৈশাচিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে সাগরকে।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার জামতলাপাড়া গ্রামের কৃষক ইছা নবী ও মিনারা বেগম দম্পতির বড় ছেলে সাগর। তাদের ছোট ছেলে মারুফের বয়স ১৪। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে সাগর লিবিয়ার বেনগাজী যান। সেখানে ক্লিনারের কাজ নেন। মাস তিনেক পর পাশের বাউলি গ্রামের মোজাম্মেল হক মোজাম জানায়, সাগরকে তিনি ইতালি পাঠাতে পারবেন। সেখানে বেতনও বেশি পাওয়া যাবে। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার পাটিকাবাড়ী এলাকার রবিজুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলামের মাধ্যমে ইতালিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেয় মোজাম।
এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে ইছা নবী ১৭ ফেব্রুয়ারি মহেশপুর থানায় যে মামলা করেছেন, তার এজাহারে। সম্প্রতি এই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সাগরের ওপর লিবিয়ায় ভয়াবহ নির্যাতন চালানোর তথ্য পাওয়া যায়। তারা জানিয়েছেন, মোজামের হাতে ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট প্রথম দফায় ৪ লাখ টাকা দেন তারা। একই মাসের ২৫ তারিখে দেওয়া হয় আরও ৭ লাখ টাকা। এর কয়েক মাস পরই (২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি) বেনগাজি থেকে ইতালি নেওয়ার জন্য দালাল চক্রের সদস্যরা সাগরসহ পাঁচ বাংলাদেশিকে অজ্ঞাত এক মরুভূমিতে নিয়ে যায়। সেখানকার একটি ঘরে মোট সাতজনকে বন্দি করে রাখে। সেখানে নিয়ে শুরু হয় নির্মম নির্যাতন। অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি কল করে বাবা ইছা নবীকে জানায়, সাগরকে ছাড়াতে হলে ৩৬ লাখ টাকা লাগবে। এ সময় তারা ভিডিও কলে দেখানো হয় তাঁর সন্তানকে নির্মমভাবে মারধরের দৃশ্য। 
ওই চক্রের কথামতো তারা প্রথম দফায় ৯ লাখ টাকা মাদারীপুর জেলার ফকিরপাড়ার একটি গোরস্তানের কবরে রেখে আসেন। কিছুদিন পর আরেকটি খড়ের গাদায় রাখতে হয় ৬ লাখ টাকা। তৃতীয় কিস্তিতে কুষ্টিয়ার পোড়াদহ তাহের মোড়সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আল-আমিনের (লিবিয়াপ্রবাসী) বাবার কাছে আরও ৪ লাখ টাকা দেন তারা। সর্বশেষ দুটি লেনদেন করতে হয় ব্যাংকিং মাধ্যমে। ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর যমুনা ব্যাংক ঝিনাইদহ শাখায় একটি অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সামন্তা বাজার শাখার একটি অ্যাকাউন্টে ১ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়। পরে ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর ও আরেক বাংলাদেশিকে মরুভূমিতে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা।
সম্প্রতি জামতলাপাড়ায় গিয়ে কথা হয় সাগরের বাবা ইছা নবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ছেলেকে ওরা খুবই নির্যাতন করত। সপ্তাহে এক দিন ঘরের বাইরে বের করে গায়ে পানি ছিটাতো; সূর্যের আলো দেখতে দিত। একটি কক্ষে সাতজনকে রেখেছিল। এদের দু’জন মারা গেলে ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁর ছেলেসহ পাঁচজনকে একটি মরুভূমিতে ফেলে আসে। 
মুক্তিপণের টাকা দিতে গিয়ে সব হারিয়েছেন বলে জানান সাগরের মা মিনারা বেগম। তিনি বলেন, তারা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি চান। পাশাপাশি ছেলেকে দেশে ফেরাতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন। 

আলোহীন কক্ষে সাগরের মতো অন্য বাংলাদেশিদের ওপর দুর্বৃত্তরা অবর্ণনীয় নির্যাতন চালায়। নিয়মিত মারধর করা হয় লোহার রড ও লাঠি দিয়ে। প্রায়ই দেওয়া হতো বৈদ্যুতিক শক। ওই দুর্বৃত্তদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর একটি ভিডিও বার্তা দেন সাগর। সেখানে বলেন, ‘আমাকে খুবই নির্যাতন করত। দীর্ঘদিন মাফিয়া চক্রের 
কাছে জিম্মি ছিলাম। শরীরের অবস্থা খুব খারাপ, ঠিকমতো দাঁড়াতে পারি না। হাতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পচন ধরেছে। মুক্তিপণের টাকা দিয়ে 
আমার পরিবার সর্বস্বান্ত। দেশে ফিরব বা চিকিৎসা করব সে সামর্থ্য আমার নেই।’ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আকুতি জানান তিনি। 
এ ঘটনায় ১৭ ফেব্রুয়ারি মহেশপুর থানায় মামলা করেন সাগরের বাবা ইছা নবী। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে টাকা লেনদেনকারী মোজাম্মেল হক মোজামকে। এ ছাড়া কুষ্টিয়ার রবিজুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলামের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাতজনকে আসামি করেন তিনি। 
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোজাম্মেল হক মোজামের বাড়ি মহেশপুরের বাউলি গ্রামে যান এ প্রতিবেদক। সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ মুন্নাফ ও আব্দুল্লাহ বলেন, মোজাম্মেল হক মোজাম টাকা নিয়ে মানুষকে বিদেশ পাঠান। এ চক্রের প্রধান ব্যক্তিরা কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা। মোজাম লোক খোঁজার মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন।
গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর সাগরের পরিবার দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিল যমুনা ব্যাংকের ঝিনাইদহ শাখায়। ওই শাখার ব্যবস্থাপক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা এনআইডি রেখে টাকা জমা নিয়েছি। মামলা হয়েছে। এখন আদালত যদি লেনদেন বা এই অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য চায়, তখন আমরা বিস্তারিত দিতে পারব।’
মহেশপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজ্জাদুর রহমান জানান, সাগরের বিষয়ে তাঁর বাবা ইছা নবী ১৭ ফেব্রুয়ারি মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে থানায় মামলা করেছেন। এতে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় সাতজনকে আসামি করা হয়। মানব পাচারকারী ওই চক্রের সদস্যদের ধরতে তারা অভিযান চালাচ্ছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুক্তিপণের টাকা দিতে দিতে নিঃস্ব সাগরের পরিবার