বিস্কুট, কেক, জুস-ড্রিংকসহ এই জাতীয় সব খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। গত মাসে এসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো এসব পণ্যের দাম বাড়ায়নি। বর্ধিত কর-ভ্যাট কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা, কিন্তু বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। আগামী বাজেটের আগে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার না করার কথা জানিয়েছে এনবিআর। এ কারণে এখন এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিস্কুট, কেক, জুস—এসব এখন প্রায় নিত্যব্যবহার্য পণ্যে পরিণত হয়েছে। সন্তানের টিফিন বক্সে এসব খাবার বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে। তাই দাম বাড়লে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তসহ সবার ওপর তার কমবেশি প্রভাব পড়বে।

এবার দেখা যাক, কোন পণ্যে কত বেশি শুল্ক-কর দিতে হবে। উৎপাদকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আগে ১০০ টাকার ফলের রসে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হতো। এতে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ২৬ টাকা শুল্ক-কর দিতে হতো। এখন সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে শুল্ক-কর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ২৫ পয়সা, কর বাড়ল পৌনে ৬ টাকা।

একইভাবে ফ্লেভারড কার্বোনেটে ড্রিংকের ওপর দাম সবচেয়ে বেশি বাড়তে পারে। কারণ, এই পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে ১০০ টাকা দামের ড্রিংকে সাড়ে ১৯ টাকা শুল্ক-কর বেড়ে দাঁড়িয়ে সাড়ে ৪৯ টাকা হয়েছে। করের বোঝা বাড়ল সাড়ে ৩৪ টাকা। একইভাবে নন-ফ্লেভারড কার্বোনেট ড্রিংকের ওপর ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানোর ফলে ১০০ টাকার পণ্যে বাড়তি ১৭ টাকার বেশি শুল্ক-কর দিতে হবে। বাজারে এখন আম, লিচু, কমলা, লেবুসহ নানা ধরনের ফলের ফ্লেভারড ড্রিংক পাওয়া যায়।

আগে মেশিনে তৈরি ১০০ টাকার বিস্কুট ও কেকের ওপর ভ্যাট দিতে হতো ১০ টাকা। এখন দিতে হবে ১৫ টাকা। ফলে প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বাড়ল ৫ টাকা।

অন্যদিকে আচার, চাটনি, কেচাপ, পাল্প—এসব পণ্যের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ১০০ টাকার পণ্যে খরচ বাড়বে ৫ থেকে ৯ টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিস্কুট-কেক এখন আর বিলাস পণ্য নয়। এসব পণ্য মুটে-মজুরেরাও খায়। অনেক রিকশাওয়ালা কলা–পাউরুটি বিস্কুট খেয়ে ক্ষুধা দূর করেন। তাই এ ধরনের পণ্যে শুল্ক-কর বসানো উচিত নয়।

বিস্কুট, কেক, জুস, ড্রিংকের ওপর বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট কমানোর জন্য এক মাস ধরে দাবি করে আসছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকও করেছেন ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।

ওই বৈঠক শেষে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাড়তি শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হলে পণ্যের দাম বাড়বে। তিনি হতাশার সঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশ যত দামে বিস্কুট বিক্রি হয়, এত কম দামে আর কোথাও বিস্কুট বিক্রি হয় না। আমরা যুদ্ধ করছি, ৫ টাকার বিস্কুট যেন ৫ টাকায় বিক্রি করতে পারি। ১০ টাকা যেন নিতে না হয়।’

কোন দেশে কত ভ্যাট

জুস, ড্রিংক, বিস্কুট-কেক, আচার, চাটনি, কেচাপ ইত্যাদির ওপর ভ্যাটের হার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে অনেক বেশি। এসব পণ্যের ওপর বাংলাদেশে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ। কিন্তু থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এই হার যথাক্রমে ৭ ও ৮ শতাংশ। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার এসব পণ্যে কোনো ভ্যাট নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১০০ ট ক র শ ল ক কর ক র ওপর এসব প

এছাড়াও পড়ুন:

রাজস্ব বাড়াতে বড় পরিকল্পনা

দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে কমতে পারে বৈদেশিক সহায়তা। বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হতে পারে। এরই আলোকে আগামী তিন অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ২০ লাখ ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের(এনবিআর) আওতায় আদায়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ১৮ লাখ ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। 

রাজস্ব আদায় বাড়াতে এই বড় পরিকল্পনার তথ্য জানা গেছে অর্থ বিভাগ ও এনবিআর সূত্রে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি এক প্রাক্কলনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে রাজস্ব খাত থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর থেকে আসবে ৫ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। একই অর্থবছরে এনবিআর থেকে আসবে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর থেকে আদায়ের পরিকল্পনা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এদিকে, বাজেট পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেটি অর্জন করা তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জন করা সম্ভব হয় না। গত আট অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি। আর এই ধরনের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে একধরনের ‘সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ( আইআরডি)’।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সম্পাদিত বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে আইআরডি।

কাক্ষিতমাত্রায় কর আদায়ে মোটা দাগে চারটি সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে আইআরডি। এগুলো হচ্ছে—কর পরিসর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জরিপ কার্যক্রমে পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা; আন্তঃকর ব্যবস্থাপনায় তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা; দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদির অভাব।
অন্যদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর মতে, সংস্থাটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জনবল স্বল্পতা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অপ্রতুলতা।
আইআরডি’র তথ্যমতে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

এনবিআরের সাময়িক তথ্য মতে, গত অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসাবে মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব কম আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।

একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়, ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু বছর শেষে তাও আদায় করা সম্ভব হয়নি। সে বছর রাজস্ব আদায় হয়েছিল মাত্র ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। একইভাবে ২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও পরে তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বছর শেষে সেটিও  আদায় করা সম্ভব হয়নি।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেওয়া ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময় এসে দেখা যায় কোনোভাবেই এই টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে না। ফলে টার্গেট থেকে ১৬ হাজার ২১০ কোটি টাকা কাটছাঁট করে সংশোধিত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারে কাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ের প্রকৃত পরিসংখ্যান হচ্ছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা; যা কিনা সংশোধিত রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা কম।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজস্ব বাড়াতে বড় পরিকল্পনা