পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায়
Published: 9th, February 2025 GMT
চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্যবিরোধী সব মত ও পথের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার স্বপ্ন ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে। সরকার ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪৩ মাস উপলক্ষে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে বক্তারা এমন মন্তব্য করেছেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। সেখানে বক্তারা বলেন, এক মাস পর ত্বকী হত্যার এক যুগ পূর্ণ হতে যাচ্ছে। অথচ এ হত্যার তদন্ত শেষ করে আজও অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতে বিচারে তৎপরতা দেখালেও এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। একটা বিচার সম্পন্ন করতে ছয় মাস অনেক সময়। সাগর-রুনি, তনু ও নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের হাতে সংঘটিত সব হত্যার বিচার দাবি করেন তারা।
সেখানে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, দেশে বিচার ব্যবস্থা এখনও গণতান্ত্রিক হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় দুর্বৃত্তরা যেমন বহাল রয়েছে, আবার নতুন দুর্বৃত্তও তৈরি হচ্ছে। চব্বিশের হত্যাকারীদের বিচার না হওয়ার কারণে পতিত দুর্বৃত্তদের আস্ফালন দেখা যাচ্ছে। অপরদিকে ক্ষোভে-ঘৃণায় সাধারণ জনতা আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। এতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অরাজক পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ত্বকী হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, তাঁর সহযোগী শাহ নিজামসহ জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে অভিযোগপত্র দিয়ে দ্রুত বিচার শুরু করতে হবে।
সাংবাদিক নেতা অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, শামীম ওসমানের নির্দেশে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে বলেই এতদিন বিচার বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন বিচারে বাধা কোথায়?
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি মনি সুপান্থর সঞ্চালনায় সেখানে আরও বক্তব্য দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, ন্যাপ জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, অ্যাডভোকেট প্রদীপ ঘোষ বাবু ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা, সিপিবির শহর সাধারণ সম্পাদক সুজয় রায় চৌধুরী, বাসদের সংগঠক প্রদীপ সরকার প্রমুখ।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খালে পাওয়া যায় তার লাশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে সে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলনে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদের টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করে। অচিরেই তারা আদালতে অভিযোগপত্র দেবে। ১০ বছর হতে চললেও অভিযোগপত্র আর দেওয়া হয়নি। সেই থেকে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ওসম ন
এছাড়াও পড়ুন:
শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ
গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধেও দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এ সময় সমাবেশ থেকে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই বিক্ষোভ সমাবেশ পালিত হয়। সমাবেশ শেষে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে ছাত্রদের সাথে সংহতি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘আমাদের ভাই-বোনদের ওপর যদি হামলা করা হয়, তাহলে ছাত্র-জনতা বসে থাকবে না। মামলা হচ্ছে কিন্তু আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছে না। ফ্যাসিবাদের দোসররা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রত্যেকজনের রক্তের বদলা চাই বিচারের মাধ্যমে।আমরা অস্থিতিশীলতা চাই না।’
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক নীরব রায়হান বলেন, ‘প্রশাসন তাদের কাজ করছে না বিধায় জনগণ শিক্ষার্থীদের ওপর আস্থা রাখছে। গাজীপুরে আমাদের ভাইদের ফোন করে বলেছিল মোজাম্মেল হকের বাসায় আক্রমণ হয়েছে, আপনারা আসুন।
ছাত্র ভাইয়েরা সেখানে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে।’
সমাবেশে অন্যদের ভেতর বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য শওকত আলী, জেলা প্রতিনিধি সদস্য আহমেদুর রহমান তনু, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্যসচিব জাবেদ আলম, যুগ্ম আহবায়ক পিয়াল, শাকিল সাইফুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক জাহিদুল হক বাঁধন, যুগ্ম সদস্যসচিব নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।