ভারতের দিল্লি বিধানসভার ভোটে ২৭ বছর পর বিজেপি কীভাবে ও কেন জিতল, আম আদমি পার্টির (আপ) এমন সশব্দ পতনই–বা কেন ঘটল, তা নিয়ে নানা তত্ত্বের মধ্যে সহজ পাটিগণিত দেখাচ্ছে, কংগ্রেস ও আপ জোটবদ্ধ হয়ে লড়লে অন্তত ৩৬টি আসন জিতে তারাই সরকার গড়তে পারত। বিজেপির স্বপ্ন থাকত অধরা।

রাজনীতির রসায়ণ ও পাটিগণিতে বিস্তর ফারাকের কথা সবার জানা। তবু সত্য এ–ই, লোকসভা ভোটের সময় দিল্লিতে বিজেপিকে হারাতে তড়িঘড়ি যে জোট কংগ্রেস ও আপ করেছিল এবং ব্যর্থ হয়েছিল, দ্রুত তা ভেঙে না দিয়ে পারস্পরিক অভিযোগ, মনোমালিন্য ও বিবাদ সরিয়ে দেওয়া–নেওয়ার ভিত্তিতে সম্মানের সঙ্গে সেই জোট ধরে রাখলে বিধানসভা ভোটের ফল বদলে যেতে পারত।

জোর দিয়ে এ কথা বলা যাচ্ছে; কারণ, চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, ৭০ আসনের মধ্যে ১৪টিতে বিজেপির জয়ের ব্যবধান থেকে আম আদমি ও কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ সহজ কথায়, কংগ্রেস ও আপ যৌথভাবে বিজেপি প্রার্থীর তুলনায় ওই ১৪ কেন্দ্রে বেশি ভোট পেয়েছে।

কেন্দ্রগুলো হলো নিউদিল্লি, জংপুরা, গ্রেটার কৈলাস, মালবিয়ানগর, রাজেন্দ্রনগর, টিমারপুর, বাদলি, নাংলোই জাট, মাদিপুর, মেহরৌলি, ছত্তরপুর, সঙ্গমবিহার, ত্রিলোকপুরী ও কস্তুরবানগর।

নিউদিল্লি কেন্দ্রে ইন্দ্রপতন ঘটেছে আম আদমি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল হেরে যাওয়ায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছিল দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সাহেব সিং ভার্মার পুত্র প্রভেশকে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী প্রভেশের বিরুদ্ধে বহু সময় লোক খ্যাপানোর অভিযোগ উঠেছে। ঘৃণাভাষণের দায় চেপেছে। ওই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল তাদের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত শীলা দীক্ষিতের পুত্র সন্দীপকে, যিনি রাজ্য রাজনীতিতে প্রবলভাবে কেজরিওয়ালবিরোধী বলে পরিচিত এবং লোকসভা ভোটে জোটের বিরোধিতায় সরব ছিলেন। ভোটের ফল ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, কেজরিওয়াল হেরেছেন ৪ হাজার ৯৯ ভোটে, অথচ সন্দীপ পেয়েছেন ৪ হাজার ৫০৪ ভোট। পাটিগণিতের হিসাব দেখাচ্ছে, এই ভোট কেজরিওয়াল পেলে জিতে যেতেন ৪০৫ ভোটে।

একই ছবি জংপুরাতেও। এখানে হেরেছেন আপের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া। বিজেপির তারবিন্দর সিং মারোয়ার কাছে তিনি হেরেছেন মাত্র ৬৭৫ ভোটে। অথচ ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের ফরহাদ সুরি পেয়েছেন ৭ হাজার ৩৫০ ভোট। দক্ষিণ দিল্লির গ্রেটার কৈলাসে হেরেছেন আপের মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ। তাঁকে হারিয়েছেন বিজেপির কাউন্সিলর শিখা রায়। শিখা জিতেছেন ৩ হাজার ১৮৮ ভোটে, অথচ কংগ্রেস প্রার্থী গরবিত সিংভি পেয়েছেন ৬ হাজার ৭১১ ভোট। মালভিয়ানগরেও একই ছবি। সেখানে হেরেছেন কেজরিওয়ালের আর এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী সোমনাথ ভারতী। বিজেপির প্রার্থীর কাছে তিনি হেরেছেন মাত্র ২ হাজার ১৩১ ভোটে। অথচ ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী জিতেন্দ্র কুমার কোচার পেয়েছেন ৬ হাজার ৭৭০ ভোট। আপ নেতৃত্ব ও বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার রাখি বিড়লা দাঁড়িয়েছিলেন মঙ্গলাপুরী কেন্দ্রে। সেখান থেকে পরপর তিনবারের এমএলএ তিনি। বিজেপির কৈলাস গাঙ্গোয়ালের কাছে তিনি ১০ হাজার ৮৯৯ ভোটে হেরে যান। ওই কেন্দ্র তৃতীয় হন কংগ্রেসের জে পি পানোয়ার। তিনি পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৫৮ ভোট। রাজেন্দ্রনগরে আপ প্রার্থী ছিলেন দুর্গেশ পাঠক। বিজেপির উমঙ্গ বাজাজের কাছে তিনি হেরেছেন মাত্র ১ হাজার ২৩১ ভোটে। কংগ্রেসের বিনীত যাদব ওই কেন্দ্রে পেয়েছেন ৪ হাজার ১৫ ভোট। সঙ্গমবিহারে আম আদমির বিধায়ক দীনেশ মোহানিয়া বিজেপির চন্দন চৌধুরীর কাছে হেরেছেন ৩৪৪ ভোটে। সেখানে কংগ্রেসের হরিশ চৌধুরী পান ১৫ হাজার ৮৬৩ ভোট।

এই একই ছবি দেখা গেছে বাদলি, ছত্তরপুর, মেহরৌলি, নাংলোই জাট, টিমারপুর ও ত্রিলোকপুরীতে। কস্তুরবানগর কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী দ্বিতীয় হয়েছেন ১১ হাজার ৪৮ ভোটের ব্যবধানে। আপের ভোট পেলে কংগ্রেস ওই আসনে জিততেও পারত।

এ কথা ঠিক, আড়াই থেকে তিন বছর ধরে উন্নয়ন ও প্রশাসনের দিকে নজর না দিয়ে আপ ক্রমাগত ঝগড়া করে গেছে উপরাজ্যপালের সঙ্গে। এই সময়ে দুর্নীতির কালি লেপে গেছে আপের ভাবমূর্তিতে। আবগারি (মদ) কেলেংকারির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘শিসমহল’। সৎ ও স্বচ্ছ রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা কেজরিওয়াল ও তাঁর দল তত দিনে আর পাঁচটা দলের রূপ ধারণ করেছে। মাত্রা ছাড়া বায়ুদূষণ, পানীয় জলের অভাব, জঞ্জাল সমস্যা ও যমুনা নদীর দূষণের কারণে সাধারণ মানুষের বিরক্তি ঝরেছে এই সময়ে। আপ নেতৃত্বকে সবদিক দিয়ে ব্যতিব্যস্ত রেখে সেই সুযোগে বিজেপি তার সাংগঠনিক প্রভাব বিস্তার করেছে দিল্লিতে। আপের দুর্গ বলে পরিচিত ঝুগ্গি–ঝোপড়ি এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মহলে আপেরই মতো দানখয়রাতের প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, যে আরএসএস লোকসভা ভোটে বিজেপির দিকে সহায়তার হাত সেভাবে বাড়ায়নি, মান অভিমান পর্ব শেষে সেই আরএসএসকে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবার সক্রিয় করে তুলেছে। এসবের মধ্যে সোনায় সোহাগা হয়েছে আপ ও কংগ্রেসের ক্রমবর্ধমান রেষারেষি। লড়াইটা তীব্রভাবে ত্রিমুখী হয়ে ওঠায় বিজেপিও স্বস্তির শ্বাস ফেলেছে।

না ফেলে উপায়ও ছিল না। ১৪ আসন জিতে গেলে ৩৬টি আসন পেয়ে আপ–কংগ্রেসের ‘ইন্ডিয়া’ জোটই দিল্লিতে ক্ষমতায় আসত। প্রাপ্ত ভোটের হিসাবেও বিজেপি পড়ত অনেক পিছিয়ে। ৭ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে বিজেপি এবার পেয়েছে ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সেখানে আপের ভোট ১০ শতাংশ কমে হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮। মজার বিষয় এ–ই, জোট থাকলে আপের সঙ্গে কংগ্রেসের সাড়ে ৬ শতাংশ ভোট যোগ হতো। বিজেপির চেয়ে ‘ইন্ডিয়া’ তাহলে এগিয়ে থাকত ৫ শতাংশ ভোটে। দিল্লিও অধরা থাকত বিজেপির কাছে। হারের হ্যাটট্রিক এড়াতে পারতেন না নরেন্দ্র মোদি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কলারোয়ায় প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের অভিযোগে যুবক আটক

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী এক শিশু ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় স্থানীয় জনতা ইব্রাহিম নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

বুধবার (১২ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে কলারোয়া পৌরসভাধীন গোপীনাথপুর যুগীবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আটক যুবক মো. ইব্রাহিম গাজী (২১) গোপীনাথপুর গ্রমের মৃত শহর আলী গাজী ও ফাতেমা বেগমের ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, ধর্ষণের শিকার শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী ১২ বছর বয়সী ওই শিশুর পিতা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। গিতা মারা যাওয়ার পর তার মা অন্যত্র বিয়ে করে বর্তমান স্বামীর সংসার নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। মায়ের অন্যত্র বিয়ে হওয়ায় বাক প্রতিবন্ধী ওই শিশু তার নানার বাড়ি গোপীনাথপুরে থাকে। ধর্ষক ইব্রাহিম গাজীর বাড়িও ওই শিশুটির নানার বাড়ি পাশে। 

বুধবার (১২ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে সে বাক প্রতিবন্ধী ওই শিশুকে কৌশলে নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

বিষয়টি শিশুটির নানিসহ আশেপাশের লোকজন জানতে পেরে ধর্ষক ইব্রাহিম গাজীকে আটক করে কলারোয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সামসুল আরেফিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভিকটিমকে আদালতের মাধ্যমে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আটককৃত ধর্ষকের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা/শাহীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ