ড. ইউনূসের দুবাই সফরে ভিসা জটিলতার অবসান চান প্রবাসীরা
Published: 9th, February 2025 GMT
ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে অংশ নিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে এ সম্মেলন হবে।
সরকারপ্রধানের সফর ঘিরে দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশিদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ড.
দুবাইয়ের ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল মার্কেটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আজিম তালুকদার বলেন, ‘আমিরাতের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক হবে। আমাদের আশা, বৈঠকে তিনি বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা জোরালোভাবে তুলে ধরবেন এবং সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।’
শারজাহ প্রবাসী ব্যবসায়ী ও সংগঠক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমিরাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানে নিজ দেশের মানুষকে চান। ভিসা জটিলতার কারণে ভিনদেশি শ্রমিক দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে। শ্রমিক ভিসার সমাধান করা গেলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। ড. ইউনূস এসব বিষয়ে নজর দেবেন আশা করছি।’
গত মাসে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন দুবাই কালচার অ্যান্ড আর্টস অথরিটির চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম। এ সময় তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
শেখ লতিফা বিনতে মুহাম্মদ বিন রশিদ প্রধান উপদেষ্টাকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তিন তরুণ উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে সামিটে অংশগ্রহণের অনুরোধ করেন, যাতে এই তিন তরুণ উপদেষ্টা সামিটে তুলে ধরতে পারেন– কীভাবে তারা স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
জানা যায়, সম্মেলনে বিশ্বের অন্তত ৩০ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশ নেবেন। ৮০টির বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা, ১৪০টি সরকারি প্রতিনিধি দল, ৬ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী ও শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনে বিশ্বনেতারা প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, মিডিয়া, বিমান চলাচল, পরিবহন, পর্যটনসহ গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক খাতের ওপর আলোচনা করবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট আম র ত ব যবস সরক র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
দিল্লিকে সম্পর্ক আর খারাপ না করার বার্তা দেবে ঢাকা
ওমানের মাসকাটে আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৈঠকে ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান ও তাঁর ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ প্রদান নিয়ে আপত্তি জানানো হবে। পাশাপাশি সম্পর্ককে ‘আর খারাপ না করার’ বার্তা দিল্লিকে দেওয়া হবে ঢাকার পক্ষ থেকে।
আগামী ১৬-১৭ ফেব্রুয়ারি ওমানে অনুষ্ঠিত হবে অষ্টম ইন্ডিয়ান ওশান সম্মেলন (আইওসি ২০২৫)। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এতে যোগ দিতে গত জানুয়ারিতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওমানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ সম্মেলনে যোগ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা। সেখানেই বৈঠক করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে।
এটি হতে যাচ্ছে তৌহিদ-জয়শঙ্কর দ্বিতীয় বৈঠক। প্রথম বৈঠকটি ২০২৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন তারা। এ ছাড়া গত ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের সময়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৫ আগস্ট-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিটি বৈঠকেই সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ। তবে ভারতের নানা আচরণ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে শুরুতে শেখ হাসিনাবিহীন বাংলাদেশকে ভারতের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবে এখন এটাই বাস্তবতা। ভারত কোনো প্রকার উষ্কানি ছাড়া সীমান্তে অযাচিত উত্তেজনা তৈরি করা, কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলা ও ভাঙচুর, শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা বা ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যাচার করাকে শক্তি প্রদর্শন হিসেবে দেখছে ঢাকা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপকে মোটেই ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই। এগুলো বন্ধ করতে আহ্বান জানাবে ঢাকা। সেই সঙ্গে তাদের দেশে আশ্রয় দেওয়া পলাতক অপরাধী যাতে ভারতে বসে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করে, তার আহ্বান জানানো হবে। মোটকথা, বাংলাদেশ বরাবরই সম্পর্কের উন্নয়ন চেয়েছে। ফলে সম্পর্ক আর যাতে খারাপের দিকে না যায়, সে বার্তা ঢাকার পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
ভারত তো বলছে, শেখ হাসিনার বক্তব্যের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ক্ষেত্রে ঢাকা কেন দিল্লিকে দোষারোপ করছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই কর্মকর্তা বলেন, ভারতের মাটিতে বসে কেউ বাংলাদেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে সে দায় এড়ানোর সুযোগ দিল্লির নেই। উদাহরণস্বরূপ, ভারতকে অস্থিতিশীল করতে পারে এমন কোনো ব্যক্তিকে যদি বাংলাদেশ আশ্রয় দিত আর সেই ব্যক্তি যদি বাংলাদেশে বসে ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করত, তাহলে সে দায় কি ঢাকা এড়াতে পারত? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আসন্ন তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে যে নিষ্পত্তি হওয়ার বোঝাপড়া রয়েছে, তা মেনে চলতে বলা হবে। সীমান্তে শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে উত্তেজনা না ছড়ানোর আহ্বান করা হবে।
ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
আসন্ন সফরে আইওসি ২০২৫-এ যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। দেশটিতে বড় সংখ্যা প্রবাসী বাংলাদেশিরা বসবাস করেন। প্রবাসীকল্যাণসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাকি বিষয় নিয়ে বৈঠক হবে দুই দেশের। এ ছাড়া দেশটির কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন মো. তৌহিদ হোসেন।
আইওসি ২০২৫-এ অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ভারত ও ওমান ছাড়া আরও কয়েকটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে।