এমপি ও পরিবারের সম্পদের হিসাব দিতে হবে দুদকে
Published: 9th, February 2025 GMT
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সব ধরনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দিতে হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিবছর এই হিসাব দিতে হবে। বতর্মানে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দুদকে এসব হিসাব দেওয়ার কোনো নিয়ম বা বাধ্যবাধকতা নেই।
দুদক সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ, আয়-ব্যয়ের হিসাবের সুপারিশসহ মোট ৪৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার কমিশনপ্রধান ড.
রাজনৈতিক দলগুলো যাতে অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িত কোনো ব্যক্তিকে দলীয় পদ বা জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয় এ বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি দুদক সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে। পরে তাদের প্রতিবেদনটি আরও সমৃদ্ধ করার জন্য সময় দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থসম্পদের বৈধতা দেওয়ার যে কোনো রাষ্ট্রীয় চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংবিধানে উল্লেখ থাকা ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ করা হয়েছে। স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক দুদক প্রতিষ্ঠার ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে। অর্থ পাচার বন্ধে কোম্পানি, ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশনের প্রকৃত বা চূড়ান্ত সুবিধাভোগীর পরিচয়-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রেজিস্টারভুক্ত করতে হবে। নির্বাচনী আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো ও নির্বাচনের প্রার্থীরা অর্থায়ন এবং আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করবেন।
এতে বলা হয়, দেশে ও বিদেশে আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বাংলাদেশকে কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের দেশ-বিদেশে থাকা ব্যাংক হিসাবের লেনদেন কমন রিপোর্ট প্র্যাকটিসের আওতায় আনতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব লেনদেনের তথ্য জানতে পারবে। এটি বার্ষিক প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করতে হবে। ১২২টি দেশ ইতোমধ্যে ওই প্র্যাকটিসের অধীন এসেছে। ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানও এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, বাংলাদেশ এখনও হয়নি।
কমিশনার নিয়োগে প্রস্তাবিত ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ নিয়োগে সুপারিশ প্রদানে পত্রপত্রিকা ও অনলাইন মাধ্যমে কমিশনার পদের জন্য আবেদন বা মনোনয়ন আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। প্রতিটি আবেদন বা মনোনয়নের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রার্থীর সম্পদের হিসাব বিবরণী এবং জীবনবৃত্তান্ত (রেফারি হিসেবে দু’জন ব্যক্তির নামসহ) সংযুক্ত করতে হবে।
কমিশনের মর্যাদা ও গঠন সম্পর্কে বলা হয়, দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। ন্যূনতম একজন নারীসহ দুদক কমিশনারের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচে উন্নীত করতে হবে। কমিশনারদের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর নির্ধারণ করা উচিত। দুদকের কার্যালয় রয়েছে এমন প্রতিটি জেলায় অবিলম্বে স্পেশাল জজ আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অতি উচ্চমাত্রার দুর্নীতি বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দুর্নীতি, বিশেষত অর্থ পাচার তদন্তের ক্ষেত্রে প্রতিটি অভিযোগের জন্য দুদকের নেতৃতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এজেন্সির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। থানা, রেজিস্ট্রি অফিস, রাজস্ব অফিস, পাসপোর্ট অফিস এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, জেলা, উপজেলা প্রশাসনসহ সব সেবা-পরিষেবা খাতের কার্যক্রম ও তথ্য-ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে পর্যাপ্ত লজিস্টিক সক্ষমতাসহ দুদকের কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় সচিব নিয়োগের বিধান করতে হবে। দুদকের নিজস্ব তহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার অনুমোদিত বার্ষিক বাজেটের অর্থ দুদকের তহবিলে জমা হবে। দুদকের নিজস্ব বেতন কাঠামো তৈরি করতে হবে। দুদককে অতিদ্রুত সরকারের সহযোগিতায় বিভিন্ন তদন্ত বা গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে হবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সব পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে অবশ্যপাঠ্য হিসেবে নৈতিকতা, সততার চর্চা ও দুর্নীতিবিরোধী চেতনা বিকাশে যুগোপযোগী ও শিক্ষার্থীবান্ধব উপাদানের অন্তর্ভুক্তি করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য ন করত সরক র ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। আগামী ১৬ এপ্রিল সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে।
আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনে অংশ নিতে তারা ফরম নিতে পারেননি। ফরম নিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান তারা।
গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সবগুলো পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যায়নি।
আরো পড়ুন:
নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার না রাখার কথা ভাবছে ইসি
বাপ ডাইক্কা নির্বাচন দেওন লাগব, বললেন বিএনপির ফজলুর রহমান
মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমদ জানান, ২১টি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে সবগুলোই উৎরে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
মনোননয়ন জমা দেওয়া ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী মো. সিরু, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন এবং সদস্য আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।
সাতটি পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং সদস্য শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী আইনজীবী মো. আবদুর রশীদ লোকমান বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা ফরম নিতে পারিনি। দুপুর ও বিকেলে আমরা দুই দফায় সমিতির লাইব্রেরি থেকে মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছি।”
বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, “আমরা ২১ জন ফরম নিয়েছি। অন্যরা ফরম না নিলে আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের সৎ সাহস নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা ছাত্র-জনতার ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করেছিল, তারা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ