জেনারেল এডুকেশন ডিপ্লোমা নিয়ে অস্বস্তিতে সরকার
Published: 9th, February 2025 GMT
জেনারেল এডুকেশন ডিপ্লোমা (জিইডি) নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে সরকার। মাত্র ছয় মাসের এই আমেরিকান ডিপ্লোমা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তবে বাদ সেধেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তাদের ভাষ্য, দুই বছরের উচ্চ মাধ্যমিকে ১২ বিষয় শেষ করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু জিইডিতে মাত্র ছয় মাসে পড়ানো হয় চার বিষয়। তাই এ কোর্সকে উচ্চ মাধ্যমিক সমমান দেওয়ার সুযোগ নেই। জিইডির ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি না করাতে নির্দেশনাও দিয়েছে ইউজিসি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন বিদেশি ডিগ্রির সমমান সনদ দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একটি ইকুইভ্যালেন্স কমিটি। সেখানেও ইউজিসির প্রতিনিধি জিইডি ডিগ্রির উচ্চ মাধ্যমিক সমমানে আপত্তি জানিয়েছেন।
রাজধানীর ধানমন্ডির অভিভাবক এম এ মতিন ও তাঁর স্ত্রী মরিয়ম ইয়াসমিন তাদের ছেলে শাহরোজ ফারহানকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দিতে হাইকোর্টে রিট করেন। পরে তাকে কেন ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে না, তা জানতে চার সপ্তাহের রুল জারি করেন আদালত।
বিত্তবান পরিবারের সন্তানরা ছয় মাসের জিইডি কোর্স করে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তির চেষ্টা করে। দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে দুই বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সনদ দরকার। তবে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জিইডি কোর্সের শিক্ষার্থী আন্ডার গ্র্যাজুয়েট গ্রোগ্রামে ভর্তি করলে প্রথমে ২০১৮ সালের এপ্রিলে ভর্তি না করাতে নির্দেশনা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালে ২০২৩ সালের জুনে আবারও একই নির্দেশনা দেয় ইউজিসি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় উইংয়ের কর্মকর্তারা জানান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মৌখিক অনুমোদনের ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জিইডি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে আসছে। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত ইউজিসির আপত্তির কারণে পারেননি। বিশ্বের স্বীকৃত অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ব্রিটিশ পিয়ারসন ও এডেক্সেল জিইডি ডিগ্রির পরীক্ষা ও সনদ দিলে বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক সমমান দিতে আপত্তি নেই বলে জানান তারা।
ইউজিসির গত ৪ নভেম্বরের সভায় বিষয়টি সুরাহায় পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে কমিটির সদস্য হলেন– ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, পরিচালক সুলতান মাহমুদ ভূঁইয়া, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক জামিনুর রহমান ও অতিরিক্ত পরিচালক মহিবুল আহসান। গত ২৮ নভেম্বর কমিটি তাদের প্রতিবেদন চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেয়।
এতে বলা হয়, আমেরিকান কাউন্সিল ফল এডুকেশন অনুমোদিত হায়ার স্কুল ইকুইভ্যালেন্ট ডিপ্লোমা হলো জিইডি। এর পরীক্ষা হয় মূলত রাইটিং স্কিলস, লিটারেচার, সোশ্যাল স্টাডিজ, সায়েন্স ও ম্যাথমেটিক্স বিষয়ের সমন্বয়ে। যুদ্ধবিগ্রহ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও মহামারির কারণে পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশ না থাকলে, সেখানে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে জিইডি ডিগ্রির সুযোগ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা এবং স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখানে এইচএসসি পর্যায়ে দুই বছরের কোর্সের সঙ্গে মাত্র তিন থেকে ছয় মাসের কোর্সের সমমান মর্যাদা দেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চরম বৈষম্যের শামিল বলে মনে করে কমিটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকার অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে একটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরীক্ষা দিয়ে ডিগ্রি অর্জন করে। অন্যদিকে, জিইডির শিক্ষার্থীরা এক দিনের জন্যও সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণ করে না। অনলাইনে পড়াশোনা করে সনদ অর্জন করে। এ কোর্স কারিকুলাম ও পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবগত নয়। কে পরীক্ষা নিচ্ছে, কে মূল্যায়ন করছে তাও অস্পষ্ট।
জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, ‘জিইডি ডিপ্লোমার উচ্চ মাধ্যমিক সমমান দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর আইনগত কোনো ভিত্তিও নেই।’ কমিটির সদস্য সচিব মহিবুল আহসান বলেন, জিইডি কোর্সের শিক্ষার্থীরা সরাসরি কোনো শিক্ষকের ক্লাসরুম শিক্ষা পায় না। স্বাভাবিক পড়ালেখার পরিবেশে এ সুযোগে বৈষম্য দেখা দেবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র সদস য ইউজ স র ব সরক র ছয় ম স পর চ ল পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
‘এই গরু পাইল্যা আমার গোবরটাই লাভ হইচে’
গরুটির ওজন হয়েছে প্রায় ২০ মণ। প্রতি মাসে তাকে গড়ে ছয় হাজার টাকার খাবার দিতে হতো। সেই সঙ্গে পরিচর্যা নিয়ে একজন মানুষকে সারা দিন ব্যস্ত থাকতে হতো। গত কোরবানির ঈদের সময় গরুটির দাম উঠেছিল চার লাখ টাকা। মালিক আশা করেছিলেন ছয় লাখ টাকা। এ জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এই গরুর ভার তিনি আর বইতে পারছিলেন না।
গতকাল রোববার আটজন মানুষ চারদিকে দড়ি ধরে গরুটাকে গাড়ি থেকে রাজশাহী নগরের সিটি হাটে এনে নামান। তখন সকাল নয়টা। বেলা গড়িয়ে যায়। কিন্তু কেউ এত বড় গরুটির তেমন দামই বললেন না। অবশেষে সিলেটের একজন ব্যবসায়ী দাম হাঁকলেন ৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা; যা কোরবানির ঈদের বলা দামের চেয়ে ২২ হাজার টাকা কম। শেষ পর্যন্ত মালিক ওই দামেই গরুটি বিক্রি করে দিলেন।
এই মালিকের নাম সারফিন শাহ। তাঁর বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলা কালিগ্রামে। প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা বড় গরু পালার শখ ছিল। আমার সেই শখ মিট্যা গ্যাছে। এরম আহাম্মুকি আর করব না। আমি মাছ চাষি করি। মাছের খামারে গোবর লাগে। বইলতে গেলে এই গরু পাইল্যা আমার গোবরটাই লাভ হইচে। মাছের জন্য গোবর কিনতে হয়নি।’
সারফিন শাহ ও তাঁর সঙ্গে আসা লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এর আগে কোনো হাটে গরুটি বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাননি। দূরদূরান্তের বড় ব্যবসায়ীরা তার বাড়িতে এসে গরু দেখে গেছেন। গত কোবানির সময় ‘আরিয়ান ডেইরি’ নামের একটি খামারের স্বত্বাধিকারী তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে ‘জায়েদ খান’ নাম দিয়ে গরুটি বিক্রি জন্য প্রচার করেছিলেন। কিন্তু তখন জায়েদ খানের দাম চার লাখ টাকার বেশি ওঠেনি। মালিক প্রত্যাশা করেছিলেন ছয় লাখ টাকা। এ জন্য গরুটি না বিক্রি করে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তিনি আর পেরে উঠছিলেন না।
বড় আকারের গরুটির দরদাম করতেও আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন না ক্রেতারা। গতকাল রোববার রাজশাহী নগরের সিটি হাটে