Prothomalo:
2025-03-12@20:06:37 GMT

বদলে যাওয়া বাংলা ভাষা

Published: 9th, February 2025 GMT

ফেব্রুয়ারি এলেই নিয়ম করে একুশ আসে। আর তার পিছু পিছু আসে মাতৃভাষা নিয়ে নতুন নতুন বয়ান। কেমন আছে আমাদের মাতৃভাষা, কী তার হালচাল? বছরের এগারো মাস কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে কাটিয়ে কেবল ফেব্রুয়ারিজুড়েই চলে এসব প্রশ্নের তত্ত্বতালাশ। চারদিকে রব ওঠে, সাইনবোর্ড বাংলা করো, উচ্চশিক্ষার বইগুলো বাংলা করো, প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে বাংলার একটি কোর্স বাধ্যতামূলক করো, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে বাংলা চর্চার খোঁজ লাগাও। ফেব্রুয়ারি শেষ হতে না হতেই এসব তোড়জোড়ে ভাটা পড়ে। টেলিভিশনের চ্যানেলগুলোতে ভাষা নিয়ে আবেগপ্রবণ বিজ্ঞাপনগুলো উধাও হতে থাকে। আবার ধুলা জমে শহীদ মিনারের সিঁড়িতে।

সিঁড়িগুলো অপেক্ষা করে আরেকটি ফেব্রুয়ারির। যেমন অপেক্ষা করেন ফুল ব্যবসায়ী। যেমন অপেক্ষা করেন কালো পাঞ্জাবি ও শাড়ির বিক্রেতা। যেমন অপেক্ষা করেন দীর্ঘ-ইকার দিয়ে ভুল বানানে শ্রদ্ধাঞ্জলি লেখা কম্পোজিটর।

কিন্তু লজ্জার মাথা খেয়ে প্রশ্নটি প্রতিবছরই ফিরে ফিরে আসে। কেমন আছে আমাদের মাতৃভাষা, কী তার হালচাল? জীবনের গতি আর ভাষার গতি কি তাল মিলিয়ে চলতে পারছে? সহজ হচ্ছে কি তার অবাধ যাতায়াত? এই যেমন ঢাকার রাস্তায় যানজটে আটকে থাকা স্থবির সময়ে কেমন রূপ পায় বিরক্তির ভাষা? একই রাস্তায়, একই সময়ে অনিয়মের ফেরে থমকে থাকা বিভিন্ন বাহনের চালকের ভাষা কী একই রকমভাবে প্রকাশ পায়? রিকশাওয়ালা, সিএনজিচালক, ট্রাকচালক, পাঠাওয়ের মোটরবাইক চালক, উবারচালক আর দামি প্রাইভেট কারের চালকের ভাষার ধরন কি একই রকম? স্থান আর সময় এক হলেও শ্রেণিচরিত্রভেদে ভাষা যে বদলে যায়, সেসব নিয়ে দিস্তা দিস্তা কথা বলেছেন সমাজ-ভাষাবিজ্ঞানীরা।

এমনকি একই ঘরে বয়সভেদেও বদলে যায় ভাষার বিন্যাস। এত দিন অন্তত সমাজের ভাষা বিষয়ে এমন সহজ বোধগম্য তত্ত্বই প্রচার করে গেছেন সমাজ-ভাষার গবেষকেরা। কিন্তু এই ডিজিটাল যন্ত্রপাতির নয়া দুনিয়ায় একেকটা প্রজন্মের নতুন নতুন নাম ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে সবাই কি সবার ভাষা ঠিক ঠিক বুঝতে পারছে?

সাহিত্যের ভাষায় কোন রীতি প্রয়োগ করা হবে—সাধু না চলিত, এ নিয়ে ইতিহাসে বিস্তর যুদ্ধ হয়ে গেছে। তারপর আমাদের দেশে টেলিভিশনের ভাষারীতি নিয়েও চলেছে তর্কযুদ্ধ। এখন চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাষা ব্যবহার নিয়ে চিন্তাপর্ব। যন্ত্র কিছু দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে এরই মধ্যে। যন্ত্রেরও রয়েছে পোষা তোতাপাখি। কারও জন্মদিনে বা মৃত্যু হলে সে বিলায় রেডিমেড শব্দ বা বাক্য। এইচবিডি মানে হ্যাপি বার্থ ডে, আরআইপি মানে রেস্ট ইন পিস, আরও আছে এলওএল মানে লাফ আউট লাউড। এসব কষ্ট করে টাইপ করতে না চাইলেও সমস্যা নেই। আছে বিচিত্র রঙিন ইমোজি আর মিম।

বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ফেসবুক। ফেসবুকের রয়েছে সাতটি রিঅ্যাকশন—লাইক, লাভ, কেয়ার, হাহা (হাসি), ওয়াও, স্যাড, অ্যাংরি। কিন্তু এর বাইরেও তো অসংখ্য অনুভূতি রয়ে যায়! হাহা হাসি না দিয়ে কেউ যদি মুচকি বা বাঁকা হাসি দিতে চায়! কেউ যদি অ্যাংরি না দিয়ে অভিমান প্রকাশ করতে চায়! অন্যদিকে ইমোজির ভুলভাল ব্যবহার নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ তো লেগেই আছে!

বাকি থাকে কমেন্ট অপশন। বাংলা টাইপ যে জানে না বা জানতে চায় না, সে লেখে রোমান হরফে হাস্যকর বাংলা। সেসব নিয়েও তৈরি হয় মিম আর টিকটক। আর রোমান হরফে বাংলা না লিখে এবার সরাসরি বাংলা বর্ণমালার অদ্ভুত ব্যবহার শুরু হয়েছে যেখানে ‘প্রিয়’ হয়ে যাচ্ছে ‘পিও’, ‘স্যরি’ হয়ে যাচ্ছে ‘ছঋ’।

কিন্তু তার চেয়েও এ শতাব্দীতে পৃথিবীজুড়ে বড় সংকট তৈরি হচ্ছে যোগাযোগের ভাষা নিয়ে। মায়েরা কি বুঝতে পারছেন সন্তানের টিকটকের ভাষা? কিংবা বাবারা কি মন দিয়ে শুনতে পারছেন র‍্যাপ সংগীতের ভাষারীতি? প্রতিদিন কি বদলে যাচ্ছে না সম্মানের ভাষা। স্নেহের ভাষা! পারস্পরিক বোঝাপড়া বা সহনশীলতার ভাষা! আবুল হাসানের ‘মাতৃভাষা’ কবিতার মতো, বেদনার ভাষা! বৈষম্যের ভাষা! যেমন বলেছিলেন তিনি, ‘আর পৃথিবীতে এখনো আমার মাতৃভাষা, ক্ষুধা!’ বিশ্বব্যাপী বদলেছে কি ক্ষুধার ভাষা?

ফারজানা সিদ্দিকা, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

ঈশ্বরদীর অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি লিচুর মুকুল

লিচুর রাজধানীখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি মুকুল। চাষিরা বলছেন, ফাল্গুন মাসে যখন লিচুর মুকুলের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কথা বাগানগুলোয়, তখন গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে কচিপাতা। ফলে এবার লিচুর উৎপাদনে ধস নামার শঙ্কায় তারা। লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে দেখা যায়নি। তবে গাছে মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

ঈশ্বরদীর ‘লিচু গ্রাম’ বলে পরিচিত উপজেলার মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বহু বাগানের গাছেই মুকুল নেই। কৃষকরা বলেন, এই সময়ে গাছে নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। লিচুচাষি আমিরুল ইসলাম সরদার জানান, তাঁর বাগানে ১০০টি গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টিতে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। নিকট অতীতে এত কম মুকুল আর দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আবহাওয়ার কারণে এ বছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তারা ধারণা করেছেন।

সাহাপুর গ্রামের লিচুচাষি সহিদুল ইসলাম বলেন, এত কম লিচুর ফলন আগে কখনও দেখিনি। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল। আমার বাগানের অর্ধেকেরও বেশি গাছে এবার মুকুল আসেনি। লিচু বেচে সারা বছর আমরা সংসারের খরচ চালাই। এবার কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।

লিচুর আবাদ করে জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব। তিনি বলেন, ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি– এমন বিপর্যয় আগে কখনো হয়নি। পুরো এলাকাতেই এ অবস্থা। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কিনা সন্দেহ আছে। এ বছর লিচুর ১০ শতাংশও ফলন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। লিচু আবাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা সবাই এবার বিপদের সম্মুখীন হবেন। 

উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর কারিগরপাড়া গ্রামের লিচুচাষি শামসুল আলম বলেন, আমার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। এ বছর এত কম মুকুল এসেছে, যা আগে কখনও দেখিনি।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, ‘লিচুগাছে সমানভাবে প্রতিবছর মুকুল আসে না। কখনও বেশি বা কখনও কম হয়। তবে এবার তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক গাছে মুকুল এসেছে। এটি প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে। এ বছর যেহেতু কম হয়েছে, তাই ধারণা করা যায় আগামী বছর মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি এবং ভালো ফলন হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে এবার ৩১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। তবে এ বছর গাছগুলোয় মুকুলের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে অনুমান করছি।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের জমিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি লিচু গাছ রয়েছে। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ এক একর জমিতে ৪২টি, এক হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ আছে। ছোট-বড় বাগান মিলিয়ে ১১ হাজার ২৭০টি গাছে লিচুর বাগান রয়েছে। উপজেলায় লিচু আবাদি কৃষকদের সংখ্যা ৯ হাজার ৬২০ জন। বাণিজ্যিক আকারে লিচু বাগান রয়েছে ২৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে আবাদ হয়েছে ৫০০ হেক্টরে। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ ২৮৩৫ হেক্টর। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ