দোষী পুলিশের সাজা দেখার অপেক্ষায় মায়ের ১১ বছর
Published: 9th, February 2025 GMT
‘আমার সামনে থেকে ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরেছে পল্লবী থানা পুলিশ। সেই ঘটনার ১১ বছর পূরণ হলো। এখনও আমি দোষীদের সাজা দেখার অপেক্ষায় আছি। জানি না, বিচার দেখে যেতে পারব কিনা।’
এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরেন পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়া ইশতিয়াক হোসেন জনির মা খুরশিদা বেগম। প্রিয় সন্তানকে হারানোর বেদনা এবং অসুস্থতার কারণে বয়সের চেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছে তাঁর শরীর। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যেই আমার ছোট ছেলের নানা রকম ক্ষতি করার চেষ্টা চালাচ্ছে আসামিপক্ষ।’
২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পল্লবী ১১ নম্বর সেকশনের ইরানি ক্যাম্পে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে গাড়িচালক জনি ও তাঁর ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকিকে আটক করে পুলিশ। তাদের পল্লবী থানায় নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি জনির মৃত্যু হয়। রকি ছাড়া পাওয়ার পর ওই বছরের ৭ আগস্ট এ ঘটনায় মামলা করেন। এটি ছিল নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে করা প্রথম মামলা।
২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে তিন পুলিশ কর্মকর্তার যাবজ্জীবন এবং দুই সোর্স সুমন ও রাসেলকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে দণ্ডিত প্রত্যেক পুলিশ কর্মকর্তাকে ভুক্তভোগীর পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম সমকালকে বলেন, জনি হত্যায় দণ্ডিতদের মধ্যে পুলিশের এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু এখনও পলাতক। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর পুলিশের সোর্স মো.
নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী রকি বলেন, অনেক চাপ ও হুমকি-ধমকির মধ্যেও ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় লড়াই করে যাচ্ছি। আসামিপক্ষের লোকজন বিভিন্ন সময়ে ভয় দেখায়, ক্ষতি করার চেষ্টা করে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আমার গ্যারেজে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাকে ‘বাড়াবাড়ি’ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
নিহত জনির সন্তানদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের প্রতি দাবি জানান রকি। আইনজীবীরা বলছেন, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি বা তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে কল্যাণ তহবিল গঠন করা দরকার। সেই সঙ্গে মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভুক্তভোগীর পরিবার যে ভোগান্তির শিকার হয়, তা থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট নীতিমালা ও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পদক্ষেপ থাকা প্রয়োজন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
লালগালিচা দেখে চটে গেলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সিলেটে লালগালিচা সংবর্ধনা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বৃহস্পতিবার দুপুরে এয়ারপোর্ট থানায় গিয়ে তাঁকে দেওয়া লালগালিচা দেখে চটে যান তিনি। এসবের প্রয়োজন নেই জানিয়ে সেই মুহূর্তে লালগালিচা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে তিনি এয়ারপোর্ট থানা ঘুরে দেখেন।
সেখান থেকে বেরিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, এখনও পুলিশকে পুনর্গঠন করা যায়নি। ৫ আগস্টের আগে ও পরে পুড়ে যাওয়া একটি গাড়িও কিনে দেওয়া যায়নি। অর্থ বরাদ্দ পেলে এই ব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আগের থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। মব জাস্টিস পুলিশ ভয় পাচ্ছে না। আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাইলেই আ্যকশনে যাবে পুলিশ।
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন। আমরা তাদের কাছ থেকে বেশি আশা করি। কিন্ত তাদের সেভাবে দিতে পারিনি। তাদের দুঃখ কষ্টের কথা আপনারা (গণমাধ্যমের কর্মীরা) তুলে ধরবেন।
বিভিন্ন স্থান থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক ঘটনা ঘটছে, আবার আসামিদের পুলিশ গ্রেপ্তারও করছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সংকট রয়েছে। সংকট ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কোথাও গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, কোথাও থানা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এ অবস্থার মধ্যেও অনেকটা উন্নতি হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। দেশের আইন-শৃঙ্খলা আগের থেকে অনেক ভালো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, এখনও সব অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অস্ত্র উদ্ধারে চেষ্টা করছে সরকার। লুট হওয়া অস্ত্র বাইরে থাকলে নিরাপত্তার হুমকি থাকবে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এ ব্যাপারে নতুন কোনো আপডেট নেই। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম।