সময়ের তরুণরা প্রযুক্তিতে ডুবে থাকলেও প্রযুক্তিই জ্ঞানের সর্বোচ্চ ধাপ– এমনটা মনে করেন না। তারুণ্যের এগিয়ে চলার সঙ্গী হয়ে উঠছে বই। তাই বলে প্রযুক্তিকে যে তারা দূরে ঠেলে দিচ্ছেন তা না। যতটা কাজে লাগাতে পারেন ঠিক ততটাই প্রযুক্তিমুখী থেকে বইকে আপন করে নিচ্ছেন। বইয়ের প্রাণে মেলাচ্ছেন প্রাণ।
মুদ্রার উল্টো পিঠ
এটিও ধ্রুব সত্য। যুগ যুগ ধরে বই পড়ার কথা উঠলেই কেমন যেন লাগে অনেকের! মোটেই ভালো লাগে না। এখন তো দিনমান কেবল অনলাইন আর অনলাইন। যতক্ষণ ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস থাকে ততক্ষণ বই নিয়ে বসে থাকতে হয়। সেই ছোটবেলা থেকেই পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে বসবাস। প্লে, নার্সারি, কেজি, ওয়ান, টু.
বইমেলাতেও যাওয়া হয় না সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা সিরিয়াল ভূতের কারণে। এমন অনলাইন ও সিরিয়ালপাগলদের পারলে ধরে বইমেলায় নিয়ে যান। দলবেঁধে হইহই করতে করতে ছোটে যান মেলায়। মেলায় আসা এত এত মানুষ দেখে অবাকই হবেন সোশ্যাল মিডিয়াপ্রেমী কাছের মানুষটা। পারলে নিজেদের উদ্যোগে তাঁকে বই উপহার দিন। হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলুন– বইটা পড়ে জানাবি, কেমন লেগেছে।
পাতায় পাতায় মহাকাল
অনলাইনপ্রিয় মানুষটির যখন অনলাইনে থাকতে ইচ্ছা করবে না, মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে আসবে, তখন ঠিকই কাছের মানুষ কিংবা বন্ধুদের খোঁচা হজম করে বইটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করবেন। পড়তে গিয়ে টেরই পাবেন না যে, কখন তিনি দশ-বিশ পেরিয়ে একশ পাতার ওপর পড়ে ফেলেছেন। সত্যিই বইটা যদি ভালো লাগে তবে পাতার পর পাতা টেনে নিয়ে যাবে একেবারে শেষে। রাতেই বইটা শেষ করে ফেলবেন। তারপর বেড়ে যাবে কৌতূহল। বুঝতে পারবেন, বইয়ের পাতায় লেপ্টে থাকে মহাকাল!
বইয়ের হাত ধরে
মানুষের বই পড়ার অভ্যাস সেই আদিকাল থেকেই। এই পাঠাভ্যাসের তথ্য পাওয়া যায় সভ্যতার শুরু থেকে। প্রথম দিকে বই অবশ্য দুর্লভ ছিল। তখনকার বই ছিল তালপাতার কিংবা মাটির পাতে। তারপর যখন বই হয়ে উঠল কাগজে ছাপানো বস্তু, তখন তা সুলভ হয়ে গেল। সাধারণ মানুষও বই পড়তে শুরু করল। বই পড়া শুরু করার পরই বদলাতে শুরু করল জগৎ। বই কেন পড়া দরকার, সে সম্পর্কে দুনিয়াখ্যাত মহামানবরাও দিয়ে গেছেন নানা উক্তি। যেমন– স্পিনোজা বলেছেন, ‘ভালো খাবার পেট ভরায় আর ভালো বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে।’ দেকার্তে বলেছেন, ‘ভালো বই পড়া মানে সেরা মানুষের সঙ্গে কথা বলা।’
ফরাসি যোদ্ধা ও সম্রাট নেপোলিয়ন তো জাহাজডুবির আগে পর্যন্ত বই পড়ার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, অন্তত ষাট হাজার বই না থাকলে জীবন অচল। জন মেকলে বলেছেন, ‘অজস্র বই নিয়ে গরিব হয়ে ছোট্ট ঘরে বাস করব, তবু এমন রাজা হতে চাই না, যে বই পড়তে ভালোবাসে না।’
গবেষণায় দৃষ্টিভঙ্গিও বদল
বই পড়লে মানুষের জীবন এবং দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে বাধ্য। মন ও জীবনযাপনে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে জগৎজুড়ে। তেমনি কিছু গবেষণার ফল এমন–
- বই আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধ করে।
- বই পড়া মানেই হচ্ছে আপনি আরও বেশি জানতে পারছেন। প্রতিদিন নতুন কিছু।
- বই পড়ুয়ারা অন্যদের চেয়ে বেশি সংস্কৃতিমনা, বেশি জনপ্রিয়।
- রোগ নিরাময় করতে পারে বই।
- বই পড়লে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
- শুনলে হয়তো অবাক হবেন। আসলেই সত্যি, বই পড়ুয়ারা বেশি আবেদনময় বা আবেদনময়ী হয়।
- বই পড়লে বিশ্লেষণ করার দক্ষতা বাড়ে।
- যারা বই পড়েন, তাদের উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি অন্যদের চেয়ে ভালো।
- গল্পের বই একাগ্রতা বাড়ায়।
- জীবনে যারা অনেক দূর যেতে চান, আর যারা বই পড়েন, তাদের চলার পথ অন্যদের চেয়ে বেশি সহজ হয়। কারণ বই পড়ার কারণে তাদের দূরদৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বেশি থাকে।
- শিশুর জন্য তো বই পড়ার তুলনাই হয় না। কারণ বই কল্পনাশক্তি বাড়ায়। কে না জানে, দুনিয়ার যত আবিষ্কার বা উদ্ভাবন, যত মহৎ সৃষ্টি সবকিছুর মূল কল্পনাশক্তির বিকাশ।
উদাসীনতার কাঁটাতারে
ছোট্ট একটা জীবন আমাদের। এই জীবন চলার পথে রাজ্যের মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণার দেয়াল ঠেলে চলতে হয়। প্রতিনিয়ত আমরা কোনো না কোনোভাবে যাতনা ভোগ করি। এসব এড়ানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে বই। মাঝে মধ্যে আমরা ভীষণ উদাসীন হয়ে যাই। এই উদাসীনতা কাটাতেও বইয়ের বিকল্প নেই। তাই বই পড়ার অভ্যাস করুন। নিজের ভেতর থেকেই নিজেকে বদলে ফেলুন।
সব তরুণের কাছেই বই হয়ে উঠুক প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার মতোই। বলি, সময় করে মেলায় যান। বই হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করুন, কোলে রাখুন, ভালো লাগলে বুকে চেপে ধরুন, মুখ ঢেকে রাখুন বই নামের প্রিয় আঁচল দিয়ে। মনে রাখবেন, ‘বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেওয়া সাঁকো।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন নোবিপ্রবি উপচার্য
সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিঘ্ন করার চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। নোবিপ্রবিতেও সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই এবং এক্ষেত্রে আমরা জিরো টলারেন্স। এসব নিয়ে নোবিপ্রবির পরিবেশ বিঘ্ন করার চেষ্টা যারাই করবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে নববর্ষের শোভাযাত্রা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
নতুন চুক্তি করতে তুরস্ক সফরে নোবিপ্রবি উপাচার্য
গাজায় নির্যাতিতদের পক্ষে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে উপাচার্য বলেন, “আশা করি এই নববর্ষ আমাদেরকে নতুন উদ্যোমে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়েকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেক সদস্যের দায়িত্ব হচ্ছে আমরা দায়িত্বশীল আচরণ করব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও নীতি বিরুদ্ধ কিছু করব না।”
এর আগে, বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে এসে শেষ হয়।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তামজীদ হোছাইন চৌধুরীসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, হল প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর, বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দপ্তর সমূহের কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী