বাউলসম্রাটখ্যাত শাহ্ আবদুল করিমের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সুনামগঞ্জের দিরাইতে শুরু হয়েছে দুই দিনের লোক উৎসব। গত শুক্রবার রাতে শাহ্ আবদুল করিমের জন্মস্থান উপজেলার উজানধল গ্রামের মাঠে উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। পরে রাতভর হয় অনুষ্ঠান। এ সময় বাউল সুরের মূর্ছনায় মাতোয়ারা হয়ে ওঠে হাওরপারের নিভৃত গ্রামটি। আজ রোববার ভোর পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলবে।
মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের সহযোগিতায় এবং শাহ্ আবদুল করিম পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল, দিরাই ইউএনও সনজীব সরকার, পরিষদ সভাপতি শাহ্ আবদুল করিমের ছেলে বাউল শাহ নূর জালাল।
উৎসবে শাহ্ আবদুল করিমের শিষ্য-অনুরাগী স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে জনপ্রিয় শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। উৎসবে আসা বাউল সিরাজ উদ্দিন, আব্দুর রহমান, শাহ আব্দুল তোয়াহেদ, রণেশ ঠাকুর, সূর্যলাল দাস বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী শাহ্ আবদুল করিম সর্বহারা শ্রেণির বাউল ছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তাঁর লেখা প্রতিটি গানের কথায় যেমন ফুটে উঠেছে ভাটি বাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কথা, তেমনি তিনি কলম ধরেছেন তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থা এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। গোড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে গান লিখতে গিয়ে অনেক সময় তিনি আক্রোশেরও শিকার হয়েছেন। এ সময় তিনি অত্যাচারিত হয়ে গ্রাম ছেড়েছেন। গান ছাড়েননি। আবদুল করিমের সংগীত চর্চায় মরমি, বিচ্ছেদি গানের মাঝেও গ্রামের সাবলীল ভাষায় সমাজের বৈষম্যের কথা উচ্চারিত হয়েছে।
এ দিন উৎসব উদ্বোধনের পর শাহ্ আবদুল করিমের অন্যতম শিষ্য বাউল আব্দুর রহমান, রণেশ ঠাকুর, সিরাজ উদ্দিন, ছেলে শাহ নুর জালাল, সূর্যলাল দাস, প্রাণকৃষ্ণ দাস ও নতুন প্রজন্মের শিল্পী সৌরভ সোহেল, বাউলিয়ানা ফয়সলসহ স্থানীয় প্রায় অর্ধশত শিল্পী সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন জনপ্রিয় গান ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’।
১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উজানধল গ্রামে ইব্রাহিম আলী ও নাইওরজান বিবি দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন বাউল সম্রাট শাহ্ আবদুল করিম। ২০০১ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
রিকাশাগার্ল’ সিনেমার বিশেষ শোতে অতিথি শতাধিক রিকশাচালক
সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনীতে সাধারনত বিশেষ শ্রেনী পেশার মানুষরাই দাওয়াত পেয়ে থাকেন। এবার প্রান্তিক মানুষের জন্য সিনেমা প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে। গেল মাসের শেষের দিকে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘রিকশা গার্ল’ নামের সিনেমা। ওই সিনেমায় রিকশাচালক গল্প থাকায় বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কেরানীগঞ্জের জয় সিনেমাসের লায়ন শপার্স ওয়ার্ল্ড সিনেমাসে হবে এই প্রদর্শনী। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রদর্শনীতে শতাধিক রিকশাচালক উপস্থিত হবেন। থাকবেন সিনেমার নির্মাতা-শিল্পীরাও।
‘রিকশা গার্ল সিনেমার অভিনেত্রী নভেরা বলেন, ‘যখন শুটি চলছিল তখনই এ ধরনের একটি পরিকল্পনা হয়েছিল। এটি বাস্তবে রূপ লাভ করতে যাচ্ছে। এর আগে মেড ইন বাংলাদেশ সিনেমাটির একটি প্রদর্শনী হয়েছিল গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে। ওই শোতে আমি থাকতে পারিনি। আশা করছি,এবার প্রদর্শনীতে উপস্থিত হয়ে দর্শকের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করব। শো শেষে তাদের সঙ্গে কথা বলবো। সিনেমা নিয়ে তাদের মতামত শুনবো। ’
এদিকে, মুক্তির তিন সপ্তাহের মাথায় ‘রিকশা গার্ল’ উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে ওটিটিতে। আসছে ১২ ফেব্রুয়ারি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গতে দেখা যাবে সিনেমাটি। ‘রিকশা গার্ল’ নির্মাণ করেছেন ‘আয়নাবাজি’ দিয়ে বাজিমাত করা নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। গল্প তৈরি হয়েছে শিল্পীমনা নারী নাঈমাকে ঘিরে। ছবি আঁকতে পছন্দ করে সে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্রোতের প্রতিকূলে লড়াই শুরু হয় নাঈমার।
ছবি এঁকে যেহেতু পয়সা মেলে না, তাই উপায়ন্তর না পেয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয় সে। জটিল হতে থাকে সিনেমার গল্প। প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় নাঈমা কীভাবে তার স্বপ্ন পূরণ করবে। এখানে নাঈমা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নভেরা রহমান। অন্যান্য চরিত্রে চম্পা, মোমেনা চৌধুরী, নরেশ ভূঁইয়া, অ্যালেন শুভ্র প্রমুখ। যুক্তরাষ্ট্রের লেখক মিতালি পারকিন্সের উপন্যাস অবলম্বনে ‘রিকশা গার্ল’ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায়। প্রযোজনা করেছেন এরিক জে অ্যাডামস, ফরিদুর রেজা সাগর, জিয়াউদ্দিন আদিল ও শিহাব আহমেদ সিরাজী।
করোনা মহামারির আগেই শেষ হয়েছিল ‘রিকশা গার্ল’র শুটিং। ২০২০ সালে মুক্তির কথা থাকলেও বদলে যায় পরিকল্পনা। দেশে মুক্তি না দিলেও এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এটি। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কারও জিতেছে ‘রিকশা গার্ল’। দেশে সিনেমাটি মুক্তির আগ পর্যন্ত বিশ্বের ৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শনের পাশাপাশি ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ রাজ্যের ৫২টি শহরে এটি প্রদর্শিত হয়।