ঐতিহ্যবাহী লাল ভবন রক্ষা নিয়ে শঙ্কা
Published: 9th, February 2025 GMT
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী লাল ভবনটি রক্ষা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ১৫৪ বছরের পুরোনো এ ভবনের পাশে সাদা ভবনটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হওয়ার পর নতুন করে এ শঙ্কা জেগেছে।
বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আবারও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তারা দাবি করছেন, লাল ভবনটি যে কোনো মূল্যে যেন রক্ষা করা হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাল ভবনটি ভাঙার পরিকল্পনা তাদের নেই।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৮৭১ সালে মাইনর স্কুল দিয়ে যেটির যাত্রা শুরু তা পূর্ণ রূপ পায় ১৮৯২ সালে। ১৮৯২ সালে তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার বাণিবহ স্টেটের জমিদার গিরিজা শংকর মজুমদার ও অভয় শংকর মজুমদার রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা মৌজায় দ্য গোয়ালন্দ ইংলিশ হাইস্কুল নাম দিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে নাম পরিবর্তন করে গোয়ালন্দ মডেল হাইস্কুল এবং সর্বশেষ রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় নামকরণ হয়। সময়ের পরিক্রমায় পুরোনো ভবনটির পাশে ও সামনে আরও তিনটি ভবন নির্মিত হয়। পরিত্যক্ত হয়ে যায় লাল ভবনটি। ২০১৩ ও ২০১৯ সালে দুই দফায় ভবনটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। দুইবারই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের বাধায় সম্ভব হয়নি। ২০১৩ সালে ভবনটি পরিদর্শন করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, রাজবাড়ীর এই লাল ভবনটি অসাধারণ একটি স্থাপনা। এর সঙ্গে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। এ ধরনের স্থাপনা, যেগুলো একশ বছরের পুরোনো ও ইতিহাস-ঐতিহ্য বহন করে তা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষণ করে থাকে। পরিদর্শন করে যাওয়ার পর সংরক্ষণের কাজ আর এগোয়নি। ২০১৯ সালে এ লাল ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তখনও প্রাক্তন ছাত্রদের বাধায় সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি আবারও ভবনটি ভেঙে ফেলার চিন্তাভাবনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ে সভাও হয়েছে।
একাডেমিক ভবন-১ ভেঙে ফেলার খবরে ছুটে যান বিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাদের একজন কাজী শাখাওয়াত বলেন, লাল ভবনটি ঐতিহ্যের সাক্ষী। তারা বহু বছর ধরে চাইছেন এটি সংস্কার করা হোক। তা না করে এটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়। তারা কোনোমতেই এটি ভাঙতে দেবেন না বলে জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক সাংবাদিক বাবু মল্লিক বলেন, লাল ভবন শুধু একটি ভবন নয়, রাজবাড়ীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে ভবনটি জড়িয়ে আছে। দেড়শ বছরের ইতিহাসের সঙ্গে এ ভবনটি সম্পর্কিত। ২০১১ সালের দিকে এ ভবনটি নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হলে তারা প্রতিবাদ করে বন্ধ করতে সক্ষম হন।
২০১৪ সালে তারা ভবনটি রক্ষার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ওই সময় ভবনটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ভবনটি সংরক্ষণের আশ্বাস দিলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ধীরে ধীরে ভবনটিকে চোখের অন্তরালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সে কারণেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, এটি ভেঙে ফেলা হতে পারে। এ জন্যই তারা ভবনটি রক্ষার জন্য এসেছেন।
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোফাজ্জেল হোসেন জানান, লাল ভবনের পাশে একাডেমিক ভবন-১ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানে নতুন ভবন হবে। লাল ভবন ভাঙার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি আরও জানান, মাস তিনেক আগে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা এসে পরিদর্শন করে গেছেন। ভবনটি সংরক্ষণের জন্য তিনি তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, তারা রাজবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী লাল ভবনটি পরিদর্শন করেছেন। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তারা পদক্ষেপ নেবেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পাবলিক লাইব্রেরি ভবনে কমিউনিটি সেন্টার
পাবলিক লাইব্রেরির জন্য নির্মাণ করা হয় ভবন। তবে পাবলিক লাইব্রেরি না করে করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন করেও ভবনটিতে পাবলিক লাইব্রেরি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিবপুর উপজেলা সদর কলেজ গেট এলাকায় পাবলিক লাইব্রেরির জন্য ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৬ সালের ২৪ মার্চ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। একই বছর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে নরসিংদী জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে মেসার্স রহমান কনস্ট্রাকশন। অথচ দীর্ঘ ১৮ বছরেও পাবলিক লাইব্রেরিটি চালু করতে পারেনি নরসিংদী জেলা পরিষদ।
পাবলিক লাইব্রেরি চালু করতে না পারলেও চালু করেছে কমিউনিটি সেন্টার। ভবনটি নির্মাণের ৫ বছর পর থেকে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক লাইব্রেরি চালুর দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ইউএনও, জেলা পরিষদে আবেদন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভবনের মূল ফটকের ভেতর থেকে তালা লাগানো। ভবনের সামনের সিঁড়িতে বসা নাঈম নামে একজন বলেন, ভেতরে কাইয়ুম নামে কেয়ারটেকার আছে। ডাক দিলে বের হয়ে আসবে। কাইয়ুম ভাই বলে কয়েকটি ডাক দেওয়ার পর ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। গেট না খুলে পরিচয় জানতে চান। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তালা খুলে ভেতরে নিয়ে যান এবং পুরো ভবন ঘুরে দেখান।
দেখা গেছে, ভবনটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা উঠে যাচ্ছে। ভবনের এক কক্ষে ভাঙাচোরা আসবাব পড়ে রয়েছে। নরসিংদী জেলা পরিষদের নিয়োগ করা কাইয়ুম মিয়া কেয়ারটেকার হিসেবে ভবনের একটি কক্ষে থাকেন ও ভবন দেখাশোনা করেন। ভবনের সামনে রয়েছে একটি নোংরা ডোবা। সেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
কেয়ারটেকার কাইয়ুম মিয়া জানান, ভবনের কেয়ারটেকার হিসেবে তিন বছর ধরে এখানে থাকেন তিনি। ভবনটি কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কমিনিউনিটি সেন্টার হিসেবে তেমন ভাড়াও হয় না। মাসেও হয় না।
শিবপুর উপজেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নূরুল ইসলাম নূরচানের ভাষ্য, মননশীলতার কেন্দ্র এভাবে বন্ধ থাকতে পারে না। নির্মাণের পর লাইব্রেরি চালু না করায় এলাকার তরুণ সমাজ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দ্রুত লাইব্রেরি চালুর দাবি তাঁর।
উপজেলা গীতিনাট্য সংসদ সভাপতি কাদির কিবরিয়া বলেন, শিবপুরে মননশীল চর্চার কোনো জায়গা নেই। মননশীল ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার জন্য নির্মিত পাবলিক লাইব্রেরিটি চালু করতে দাবি জানালেও অদৃশ্য কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
শিবপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নূর উদ্দিন মো. আলমগীর জানান, একটি পাবলিক লাইব্রেরি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বন্ধ থাকবে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এত টাকা খরচ করে যে উদ্দেশ্যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে আজ সেই উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হচ্ছে। এখানে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। এটি দুর্নীতির একটি অংশ।
শিবপুরের ইউএনও মোছা. ফারজানা ইয়াসমিনের ভাষ্য, পাবলিক লাইব্রেরির জন্য নির্মিত ভবনটি সংস্কার করতে হবে। এ জন্য জেলা পরিষদের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
নরসিংদী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আ. ওহাব রাশেদ জানান, লাইব্রেরিটিকে একটি মালটিপারপাস অর্থাৎ লাইব্রেরি থেকে আরও উন্নত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত চালু করা হবে।