যানজট কাটাতে কোটি টাকা ব্যয়, তবুও কাটেনি দুর্ভোগ
Published: 9th, February 2025 GMT
তীব্র যানজটে নাকাল হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহরের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হাঁসফাঁস করছেন তারা। স্থানীয়রা বলছেন, গোটা শহর যেন পরিণত হয়েছে অটোরিকশা, রিকশা ও মিশুকের নগরীতে।
নবীগঞ্জ শহরের অধিকাংশ ফুটপাত চলে গেছে ভ্রাম্যমাণ ও কাঁচাবাজার ব্যবসায়ীদের দখলে। কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর বাস টার্মিনাল এবং কাঁচাবাজারের জন্য করা বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি কোনো কাজেই আসছে না। অভিযোগ রয়েছে, যানজট নিরসনে বিভিন্ন সময় আশ্বাসের কথা শোনালেও, মাঠ পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ খুবই উদাসীন।
পৌর কর্তৃপক্ষ শহরে চলাচলের জন্য প্রায় ৮০০ রিকশা ও মিশুকের অনুমতি (নম্বরপ্লেট) দিয়েছে। অথচ শহরে চলাচল করছে হাজারো মিশুক ও রিকশা। পরিকল্পিতভাবে নেওয়া এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।
নবীগঞ্জ শহরের ভেতরের মূল সড়কে যত্রতত্র বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্রাক দাঁড় করিয়ে যাত্রী ও মালপত্র উঠানামা করানো হচ্ছে। এতে যানজট পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। নির্ধারিত কাঁচামালের দোকানের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রোথ সেন্টার নির্মাণ করে ব্যবস্থা দিলেও তারা সড়কের ওপর দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন।
নবীগঞ্জ শহরের পানি নিষ্কাশন, যানজট ও পথচারীদের চলাচলের সুবিধার্থে ফুটপাত নির্মাণে কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ করা হলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এর মধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় করা হয়েছে ড্রেনের কাজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে নয়ছয় কাজ করে দায়সারা হয়েছে এসব প্রকল্পের ক্ষেত্রে। কয়েক মাসের মধ্যেই ড্রেনের ওপরের টাইলস ভেঙে গিয়ে ফুটপাতগুলো অনেক স্থানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শহরের বাসিন্দারা জানান, নতুন বাজার আব্দুল মতিন চৌধুরী স্কয়ার, ওসমানী সড়ক, মধ্যবাজার, জে কে স্কুল রোডের ওপর কাঁচামালের হাট বসানো হয় নিয়মিত। ফলে ওই সড়কে রিকশা নিয়েও চলাচল করা যায় না। নতুন বাজার এলাকায় ওয়ান বাই রোড থাকলেও কোনো যানবাহনের চালক তা মেনে চলেন না। পৌর শহরের পুরোনো গরুর বাজারে কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের জন্য গ্রোথ সেন্টার নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর কিছুদিন কাঁচামালের ব্যবসায়ীরা গ্রোথ সেন্টারে হাট বসান।
নবীগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জগামী বাস শহরের নতুন বাজার গাজীরটেক (আব্দুল মতিন) স্কয়ার ট্রাফিক পয়েন্টে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করার ফলে সারাক্ষণ লেগে থাকে তীব্র যানজট।
শহরের নতুন বাজার এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে কাঁচামালের বাজার। গাড়িগুলো সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামাসহ ব্যবসায়ীদের মালপত্র তোলা হয়। পৌর শহরের ছালামতপুর পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ হলেও ওই বাসস্ট্যান্ডের কোনো প্রভাব নেই।
সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল মালিক জানান, শহরের যানজট সমস্যার সমাধান করতে উচ্ছেদ নয়, একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা দরকার। যানজটে আটকে পড়া আজির চৌধুরী নামে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক জানান, নেতারা ভোট হারানোর ভয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত, যানজট নিরসন ও অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে চান না।
শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, থানা পয়েন্ট, ওসমানী রোড (উত্তরা ব্যাংকের সামনে), হাসপাতাল সড়কের খালিক মঞ্জিলের সামনের সড়ক, হাসপাতাল গেট, শেরপুর রোডের রাজা কমপ্লেক্সের সামনে, শেরপুর রোডের বাংলা টাউনের ইসলামী ব্যাংকের সামনে, রুদ্রগ্রাম রোডের সোনার খনি ব্রিজ পর্যন্ত এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কের ওপর রাখা থাকে ছোট-বড় যানবাহন। এতে পথচারীদের চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি বাইপাস সড়কের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শেফু। তিনি জানান, হবিগঞ্জ সদর, বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জের লোকজন বিভাগীয় শহর সিলেট যেতে চাইলে নবীগঞ্জ হয়ে গেলে প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা কমে। এতে সময় ও খরচ বাঁচে।
এ অবস্থায় হবিগঞ্জ সড়ক থেকে ছালামতপুর পর্যন্ত একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে জানান মুজিবুর রহমান।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, প্রায় বছরখানেক আগে এখানে বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কয়েক মাস আগে সেটি একনেকে পাসও হয়। এর পর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
নবীগঞ্জ পৌরসভার সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী জানান, নবীগঞ্জ শহরের যানজট স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। ইউএনও অনুপম দাস অনুপ জানান, যানজট নিরসনের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র য নজট র জন য র স মন র ওপর সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিশোধ নিতেই বড় শাহীনকে খুন, নারীকে দিয়ে পাতা হয় ফাঁদ
৫ আগস্টের পর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর এবং বাবা-মাকে মারধরের প্রতিশোধ নিতেই শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শেখ শাহিনুল হক শাহিন ওরফে বড় শাহিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার শিষ্য শাহনেওয়াজ পারভেজ রনি। হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হীরা ঢালিকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেন রনি। হীরার প্রেমের ফাঁদে পড়েই গত ১৫ মার্চ রাতে দৌলতপুর থেকে নগরীর বাগমারায় যান বড় শাহীন। সেখানেই মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় বড় শাহীনকে।
গতকাল শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য স্বীকার করেছেন শাহনেওয়াজ পারভেজ রনি ও হীরা ঢালী। গত ৭ এপ্রিল তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জবানবন্দি গ্রহণের পর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ১৫ মার্চ রাতে খুলনা নগরীর বাগমারা খালপাড় রোডের ফাঁকা রাস্তার উপর দুর্বৃত্তরা গুলি করে বড় শাহিনকে হত্যা করে। শাহীনের বিরুদ্ধে খুলনা নগরীর দৌলতপুরের আলোচিত শহীদ ওরফে হুজি শহীদ হত্যাসহ একাধিক মামলা ছিল। হত্যার ঘটনার শাহীনের মা রহিমা বেগম বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে খুলনা সদর থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার এসআই মনির হোসেন বলেন, ১৫ বছর পূর্বে শাহনেওয়াজ পারভেজ রনি পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শাহীন ওরফে বড় শাহীনকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর প্রতিশোধের সুযোগ খুঁজতে থাকেন শাহীন। গত বছর ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর এলাকায় ফিরে শাহীন লোকজন নিয়ে মহেশ্বরপাশায় রনির বাড়িতে হামলা চালায়। ওইদিন রনির বাবা-মাকে মারধর করে তারা। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী রনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী হীরাকে ব্যবহার করেন।
তিনি জানান, গত ডিসেম্বর থেকে শাহীনের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে রনি। জানুয়ারি মাসে শাহীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করেন হীরা। এক সময়ে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। বাগমারা এলাকার একটি বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন হীরা। সেখানেও যাতায়াত ছিল শাহীনের। শাহীনের যাবতীয় খবরাখবর রনির কাছে আদান প্রদান করতে থাকেন হীরা। বিষয়টি টের পাননি শাহীন। গত ১৫ মার্চ দৌলতপুর ছিলেন শাহীন। রাতে হীরা ঢালীর ভাড়া বাড়িতে ডেকে আনা হয় শাহীনকে। রাত সোয়া ১১টার দিকে সুযোগ বুঝে হীরা ঢালী এবং তার স্বামী রনির উপস্থিতিতে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী খুব কাছ থেকে শাহীনের মাথায় দুটি গুলি করেন। ঘটনাস্থলে শাহীনের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে রনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে খালিশপুর চলে যান এবং স্ত্রী হীরা ঢালী ঘরেই অবস্থান করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনাস্থলে হীরা ঢালী এবং রনির উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য হীরাকে কেউ যাতে সন্দেহ না করে সেজন্য বাগমারার ভাড়া বাসাটি ছাড়েননি হীরা। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করার জন্য পুলিশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
খুলনা সদর থানার ওসি হাওলাদার সানোয়ার হুসাইন মাসুম জানান, গত ৭ এপ্রিল নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আমিনুর এবং হীরা ঢালীকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করতে চান রনি এবং হীরা ঢালী। শুক্রবার বিকেলে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের খাস কামরায় হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন তারা দু’জন। জবানবন্দি পরবর্তী আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। বড় শাহীন হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ছয়জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে।