মাদারীপুরে মানব পাচারকারী দালালের বিরুদ্ধে মামলা করায় বাদীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্বামী ফারুক মাতুব্বরের কোনো হদিস না পাওয়ায় দালালের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন লিপি আক্তার। তাঁর অভিযোগ, এ মামলা করায় তাঁকে ও সাক্ষীকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন আসামি খাইরুন নেছা।

ভুক্তভোগী পরিবারটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাদারীপুর শহরের সবুজবাগ এলাকার মৃত একরাম আলী মাতুব্বরের ছেলে ফারুক মাতুব্বরের সঙ্গে ১৪ লাখ টাকায় স্পন্সর ভিসার মাধ্যমে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি হয় দালাল খাইরুন নেছা ও দাদন ব্যাপারী দম্পতির। ইতালির উদ্দেশে ২০২৪ সালের ৩ জুন বাড়ি থেকে বের হন ফারুক। ৭ লাখ টাকা নগদ নিয়ে প্রথমে তাঁকে বাংলাদেশ থেকে ভারতের মুম্বাই নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ৪ জুন নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরে। তার পর মিসর হয়ে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ফারুকের ওপর অমানবিক নির্যাতন করে ভিডিও কলে তা পরিবারকে দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। পরিবার নিরুপায় হয়ে শিউলী আক্তার নামের এক নারীর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কয়েক দফায় আট লাখ টাকা পাঠায়। সর্বশেষ গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ফারুক। এর পর থেকে তাঁর কোনো সন্ধান না পেয়ে দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দালাল নানা টালবাহানা শুরু করে। স্থানীয়দের মাধ্যমে দালালকে ফারুকের সন্ধান দিতে বললেও দালাল তাতে কর্ণপাত করেনি। এর পর নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মাদারীপুর আদালতে মামলা করেন। মামলায় সদর উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের দাদন ব্যাপারীকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া তার স্ত্রী খাইরুন নেছাসহ আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর ২২ জানুয়ারি দাদন ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

দাদন ব্যাপারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর ফারুকের পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন দাদনের স্ত্রী ও মামলার অন্যতম আসামি খাইরুন নেছা। তাঁর স্বামী জামিন পেলে যে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও শাসানো হয়। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খাইরুন নেছা।  

মামলার বাদী লিপি আক্তার বলেন, ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাঁর স্বামীর সন্ধান দিতে পারছে না দালাল। ধারণা করা হচ্ছে, নির্যাতন করে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। স্বামীর সন্ধান ও দালালের বিচারের পাশাপাশি আসামি পক্ষের হুমকি-ধমকির পর নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চান তিনি।

মামলার সাক্ষী জাহিদুল ইসলাম বলেন, সত্য ঘটনার সাক্ষী হওয়ায় দালাল তাঁর লোকজন নিয়ে তাঁকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তিনি বলেন, শিউলী আক্তার নামের একজনের ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠিয়েছেন খাইরুন নেছা, যার রসিদ আদালতে দেওয়া হয়েছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে খাইরুন নেছা দাবি করেন, পারিবারিক বিরোধের কারণে তাঁর স্বামীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া তারা কোনো টাকা নেননি।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়ায় চার সাংবাদিককে ৫ বছরের বেশি কারাদণ্ড

রাশিয়ার বিরোধীদলীয় প্রয়াত নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগ তুলে ‘চরমপন্থা’র দায়ে চার সাংবাদিককে সাড়ে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন মস্কোর নাগাতিনস্কি ডিস্ট্রিক্ট আদালত।

গত মঙ্গলবার আদালত সাংবাদিক আন্তোনিনা ফাভোরস্কায়া, কনস্তান্তিন গাবোভ, সের্গেই ক্যারেলিন ও আরতিয়ম ক্রিগেরকে দোষী সাব্যস্ত করেন। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ ওই সংগঠনকে আগে থেকেই ‘চরমপন্থী’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। আদালতের এ রায় আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সমাজ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত চারজনই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন, তাঁরা শুধু নিজেদের সাংবাদিকতা পেশার দায়িত্ব পালন করার কারণেই শাস্তি পাচ্ছেন।

নাভালনিকে যেসব অভিযোগে দণ্ডিত করা হয়েছিল, সেগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রশ্ন আছে। অনেকেই বলছেন, তাঁকে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্যই ওই মামলা ও সাজা দেওয়া হয়েছিল। এমন পরিপ্রেক্ষিতে নাভালনির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাংবাদিকদের সাজা দেওয়ার বিষয়টি আরও বেশি বিতর্কিত হয়ে উঠেছে।

এই রায় ভিন্নমতের প্রতি রাশিয়ার ব্যাপক দমন-নিপীড়নের সর্বশেষ নজির। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে এ ধরনের দমন-নিপীড়ন আরও তীব্র হয়েছে।

রুশ কর্তৃপক্ষ ক্রেমলিনবিরোধী সমালোচকদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর শিকার হচ্ছেন বিরোধী রাজনীতিক, মানবাধিকারকর্মী ও স্বাধীন সাংবাদিকেরা। ইতিমধ্যে শত শত মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ বিচারিক হয়রানির ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের মধ্যে আন্তোনিনা ফাভোরস্কায়া ও আর্তিয়ম ক্রিগার ছিলেন সোতা ভিশন নামের স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। কনস্তান্তিন গাবোভ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে একজন ফ্রিল্যান্সার প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রয়টার্সও। আর সের্গেই ক্যারেলিন একজন ফ্রিল্যান্স ভিডিও সাংবাদিক। তিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে (এপি) নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

আরও পড়ুনরাশিয়ায় কারাবন্দী নাভালনির মৃত্যু, পুতিনের সমালোচনায় বিশ্বনেতারা ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

দণ্ডপ্রাপ্ত চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রুশ কৌঁসুলিরা অভিযোগ এনেছেন, তাঁরা অ্যালেক্সি নাভালনির দুনীতিবিরোধী ফাউন্ডেশনের (এফবিকে) সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

এই সংগঠনকে ২০২১ সালে বেআইনি ঘোষণা করে ‘চরমপন্থী’ তকমা দেয় রুশ কর্তৃপক্ষ। আর এটি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিরোধীদের দমনের একটি কৌশল বলে মনে করেন অনেকেই।

দণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের মধ্যে আন্তোনিনা ফাভোরস্কায়া ও আর্তিয়ম ক্রিগার ছিলেন সোতা ভিশন নামের স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। কনস্তান্তিন গাবোভ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে একজন ফ্রিল্যান্সার প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রয়টার্সও। আর সের্গেই ক্যারেলিন একজন ফ্রিল্যান্স ভিডিও সাংবাদিক। তিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে (এপি) নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

নাভালনি দীর্ঘদিন ধরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে শক্তিশালী সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে একের পর এক অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি খ্যাতির শীর্ষে উঠে আসেন। তিনি আর্কটিক অঞ্চলের একটি কারাগারে ১৯ বছরের সাজা ভোগ করা অবস্থায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা যান।

আরও পড়ুনমৃত্যুর আগের দিনও মজা করেন নাভালনি, ছিলেন চনমনে১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

নাভালনিকে যেসব অভিযোগে দণ্ডিত করা হয়েছিল, সেগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রশ্ন আছে। অনেকেই বলছেন, তাঁকে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্যই ওই মামলা ও সাজা দেওয়া হয়েছিল। এমন পরিপ্রেক্ষিতে নাভালনির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাংবাদিকদের সাজা দেওয়ার বিষয়টি আরও বেশি বিতর্কিত হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুনঅ্যালেক্সি নাভালনি খালি খালি মরেননি০৩ মার্চ ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ