শুরু হল কেএসআরএম ফুটবল টুর্নামেন্ট
Published: 9th, February 2025 GMT
টার্ফের সবুজ গালিচায় সাদা আলোর অপরূপ দৃশ্য। চারপাশে সারিবদ্ধ দর্শকের ভিড়। থেমে থেমে উল্লাসের সুর বেজে উঠছে দর্শক ও খেলোয়াড়দের মাঝে। রেফারি বাঁশিতে ফুঁ দিতেই শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। তবে এ যুদ্ধ সংঘাতের নয়, সৌহার্দ্যের ফুটবল যুদ্ধ। প্রথম দিন প্রতিটি ম্যাচে ফুটবল শৈলীতে শেষমেশ জয়ের হাসি হাসে ছয়টি দল।
তবে গোলে স্বপ্নভঙ্গ হলেও দারুণ খেলে সবার মন কেড়েছে প্রতিটি ফুটবল দল। টানটান উত্তেজনার মধ্যে টুর্নামেন্টের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয় ছয়টি ম্যাচ। হালিশহর কেএসআরএম টুর্নামেন্টের চিত্র এটি।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর কেএসআরএম টার্ফে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন কেএসআরএমের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নবাব সিরাজুদ্দৌলা, সেলিম উদ্দিন, করিম উদ্দিন, সরওয়ার জাহান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (করপোরেট) শামসুল হক ও পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) জসিম উদ্দিনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে কেএসআরএম গ্রুপের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে ২৮টি দল। প্রথম দিনে ১২টি দলই তাদের নৈপুণ্য দেখাতে সক্ষম হয়।
৫২ ম্যাচের প্রতিযোগিতামূলক এ টুর্নামেন্টের খেলা চলবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
কেএসআরএম ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন ও খেলাধুলার মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা এবং ইতিবাচক মনোজাগতিক পরিবর্তনে বদ্ধপরিকর।
ঢাকা/চিশতী/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসআরএমের রড উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে এখন ২৪ লাখ টন
ইস্পাত খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি বিএসআরএম গ্রুপের বার্ষিক রড উৎপাদনক্ষমতা ৬ লাখ টন বেড়ে ২৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি মিরসরাইয়ে নিজস্ব শিল্পাঞ্চলে নতুন কারখানা চালুর ফলে কোম্পানিটির উৎপাদনক্ষমতা বেড়েছে। তাতে বাজার হিস্যায় বিএসআরএমের আধিপত্য আরও বাড়বে।
রড উৎপাদনের মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেটের উৎপাদনক্ষমতার সম্প্রসারণ ঘটেছে নতুন কারখানায়। এতে বছরে বিলেট উৎপাদনক্ষমতাও বেড়ে ২৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে কোম্পানিটির। এর মানে, মধ্যবর্তী কাঁচামাল উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে কোম্পানিটি।
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিএসআরএম গ্রুপের দুটি কোম্পানি হলো বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড। নতুন কারখানাটি বিএসআরএম স্টিলসের।
নতুন কারখানায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তৈরি হচ্ছে তারজাতীয় রড, যা ওয়্যার রড নামে পরিচিত। নাট, বল্টু, স্ক্রু, ঝালাই করার উপকরণ, যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির মধ্যবর্তী কাঁচামাল হিসেবে ওয়্যার রড ব্যবহার করা হয়। নতুন এই পণ্য আগে শতভাগ আমদানি–নির্ভর ছিল। এই কারখানা চালুর পর আমদানি–নির্ভরতা ধারাবাহিকভাবে কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে ১১৪টি কোম্পানি মোট ১ লাখ ৬০ হাজার টন ওয়্যার রড আমদানি করেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার। ওয়্যার রড আমদানিকারকদের মধ্যে বিএসআরএম গ্রুপের কোম্পানি বিএসআরএম ওয়্যারস লিমিটেডও রয়েছে।
—বিএসআরএম সব সময় গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য বাজারজাত করে। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রড এবং প্রথমবারের মতো ওয়্যার রড তৈরি হবে নতুন কারখানায়। এটি পুরোদমে চালু হলে ওয়্যার রডের আমদানি–নির্ভরতা কমবে।—আমের আলীহুসাইন, এমডি, বিএসআরএম গ্রুপবিএসআরএম গ্রুপ জানায়, তাদের নতুন কারখানায় ৫ লাখ টন রড এবং ১ লাখ টন ওয়্যার রড উৎপাদন করা হবে।
বিএসআরএম স্টিলসের নতুন কারখানাটিতে ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণসহায়তা দিয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাংক। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ কোটি ডলার বা ৬০০ কোটি টাকা ঋণসহায়তা দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। তা ছাড়া ঋণ দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড (এসসিবি) বাংলাদেশ ও স্থানীয় ব্র্যাক ব্যাংক।
পরিবেশবান্ধব কারখানা হিসেবে এতে অর্থায়ন করেছে জাইকা। যেমন কারখানায় পরিচ্ছন্ন বাতাস নিঃসরণ নিশ্চিত করতে আধুনিক এয়ার পলিউশন কন্ট্রোল (এপিসি) ব্যবস্থা এবং পানির শতভাগ পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটিসহ সর্বাধুনিক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া কারখানার ছাদে স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও জ্বালানিসাশ্রয়ী উৎপাদনপদ্ধতির কারণে প্রতিবছর ১০ হাজার টন গ্রিনহাউস গ্যাস (কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো) নিঃসরণ কম হবে। জাইকা জানায়, বিএসআরএমের প্রকল্পটি তাদের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ অর্থায়ন কর্মসূচির আওতায় দেওয়া প্রথম করপোরেট ঋণ।
জানতে চাইলে বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমের আলীহুসাইন বলেন, দেশের মানুষ এখন পণ্যের গুণগতমান নিয়ে সচেতন। বিএসআরএম সব সময় গুণগতমানের পণ্য বাজারজাত করে। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রড এবং প্রথমবারের মতো ওয়্যার রড তৈরি হবে নতুন কারখানায়। এটি পুরোদমে চালু হলে ওয়্যার রডে আমদানি–নির্ভরতা কমবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
আমের আলীহুসাইন আরও বলেন, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে প্রথমবার বিনিয়োগ করেছে জাপানি সংস্থা জাইকা। এতে দেশে বেসরকারি খাতে জাইকার বিনিয়োগের দরজা খুলে গেছে। দেশের জন্য গর্বের এই কারখানা।
উৎপাদনক্ষমতায় দ্বিতীয়, বাজার হিস্যায় প্রথম
১৯৫২ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে এককভাবে বিএসআরএম গ্রুপ রড উৎপাদনক্ষমতা ও বাজার হিস্যায় শীর্ষ স্থানে অবস্থান করে আসছিল। এবার ছয় লাখ টন রড তৈরির নতুন কারখানা চালু হলেও গ্রুপটি উৎপাদনক্ষমতায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। কারণ, দীর্ঘদিন দ্বিতীয় স্থানে থাকা আবুল খায়ের গ্রুপ গত জানুয়ারিতে তাদের বার্ষিক রড উৎপাদনক্ষমতা ১৮ লাখ টন বাড়িয়ে ৩০ লাখ টনে উন্নীত করেছে। ফলে তারা এখন এক নম্বরে আছে।
তবে উৎপাদনক্ষমতা যা–ই হোক, এখন পর্যন্ত বাজার হিস্যায় সবচেয়ে এগিয়ে বিএসআরএম গ্রুপ। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রুপটির দুই কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে উভয় প্রতিষ্ঠান মোট ১৮ লাখ ১৪ হাজার টন রড উৎপাদন করেছে। আর রড বিক্রি হয়েছে ১৭ লাখ ৩৯ হাজার টন। অন্যদিকে আবুল খায়ের গ্রুপের স্টিল কোম্পানি একেএস(আবুল খায়ের স্টিল) শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়ায় তাদের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি।
তবে কোম্পানিগুলোর কাঁচামাল আমদানির হিসাব থেকেও বাজার হিস্যা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। যেমন শেষ ২০২৪ সালে দেশে রড তৈরির কাঁচামাল আমদানি হয়েছে মোট ৫৬ লাখ ৩৬ হাজার টন। এর মধ্যে বিএসআরএম গ্রুপ কাঁচামাল আমদানি করেছে ১৮ লাখ ৭৬ হাজার টন বা ৩৩ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে আবুল খায়ের গ্রুপের অবস্থান দ্বিতীয়। তারা ১১ লাখ টনের মতো কাঁচামাল এনেছে, যা মোট আমদানির ১৯ শতাংশ।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা জিপিএইচ ইস্পাতের আমদানি সাত লাখ টন। চতুর্থ অবস্থানে আছে কেএসআরএম গ্রুপ। তারা আমদানি করেছে ছয় লাখ টন। রড তৈরির এসব কাঁচামাল গলিয়ে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ রড ও সমজাতীয় পণ্য তৈরি হয়। এর বাইরে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড থেকে এবং স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল সংগ্রহ করে কোম্পানিগুলো, যা পরিমাণে খুবই কম।
সামনে নতুন প্রকল্প
দেশের বাজারে রডের চাহিদা আগের তুলনায় কমেছে। এর কারণ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্থবিরতা। তারপরও কোম্পানিগুলো নতুন বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। বিএসআরএম গ্রুপের সদ্য চালু হওয়া কারখানাটির নির্মাণকাজ অবশ্য শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে।
এ নিয়ে বিএসআরএম গ্রুপের এমডি আমের আলীহুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছর আগে যখন এই প্রকল্পের পরিকল্পনা হচ্ছিল, তখন দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ভালো ছিল। এখন সাময়িকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমলেও এই অবস্থা সামনে থাকবে না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। চাহিদাও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, ইস্পাত খাতে বিএসআরএম ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করে আসছে। সামনে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলেও বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।