বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নারী উদ্যোক্তা
Published: 9th, February 2025 GMT
ঘরোয়াভাবে খাবার প্রস্তুত করার সময় বিভিন্ন বর্জ্য তৈরি হয়, যা আবাসিক বা গৃহস্থালি বর্জ্য বলা যায়। এই আবাসিক বর্জ্য সঠিকভাবে আবার ব্যবহারোপযোগী করলে পরিবেশ দূষণ যেমন কমে, তেমনি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। সম্প্রতি এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট।
তারা আবাসিক বর্জ্য আবার ব্যবহারোপযোগী করার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে– সে বিষয়ে খাদ্যপণ্য নিয়ে কাজ করেন এমন নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি খুলনার কেডিএ অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত বিজয়গাথা কমিউনিটি সেন্টারে ২০ নারী উদ্যোক্তা এতে অংশ নেন।
প্রস্তুতকৃত খাদ্যপণ্য ব্যবসায় আগে থেকে কত পরিমাণ খাবার লাগবে, তা নির্ধারণ করা হলে অতিরিক্ত খাবার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এ ছাড়া খাবার প্যাকেজিংয়ের জন্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার না করে কাগজ দিয়ে তৈরি অথবা ফয়েল পেপার দিয়ে তৈরি করা পণ্য ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে ফের ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তারা এসব বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন।
‘কেক অ্যান্ড বাইট’-এর উদ্যোক্তা রুমি রহমান বলেন, ‘পচনশীল উচ্ছিষ্ট ফেলে না দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করি, যা কিচেন গার্ডেনে সার হিসেবে ব্যবহার করি। আবার অনেক পণ্য রয়েছে, যা ভোক্তার কাছে আকর্ষণীয় ও পরিবেশবান্ধব। প্লাস্টিকের বদলে আমি অনেক ক্ষেত্রে কলাপাতা ব্যবহার করি।’
ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাফনা আক্তার বলেন, ‘উদ্যোক্তারা সংসার সামলানোর পাশাপাশি ব্যবসা সামলান। ব্যবসায়ের কাঁচামাল ক্রয় বা সংসারের বাজার করার সময় তারা যদি পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করেন এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে দেন তাহলে তা পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যেমন পাট দিয়ে তৈরি করা বাজারের ব্যাগ বা পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সময় প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন।’
লেখক: উন্নয়নকর্মী
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ব যবহ র পর ব শ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
‘প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও’
যশপ্রীত বুমরার ডেলিভারিটি ছিল লেগ স্টাম্পে। খুব দ্রুতই অবস্থান তৈরি করে নিলেন করুন নায়ার, ফ্লিক শটে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা!
নিজের বোলারকে ছক্কা হজম করতে দেখেও হাততালি দিয়ে উঠলেন মুম্বাই অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। একই ওভারের পঞ্চম বলে আবার ছক্কা। এবার স্লোয়ার ডেলিভারি উড়ে গেল লং অফ দিয়ে। অবাক চোখে চেয়ে দেখলেন বুমরা। এই দুই ছক্কার মাঝে হয়েছে একটি চারও। সব মিলিয়ে ছয় বলেই ১৮ রান। সময়ের সেরা পেসার বুমরার বলে নায়ারের এই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠার কথা অনেকেরই।
নায়ার সেই বিরল দুর্ভাগাদের একজন, যিনি ভারতের হয়ে অপরাজিত ট্রিপল সেঞ্চুরি করেও তিন ম্যাচ পর বাদ পড়ে আর কখনো জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি। আইপিএলে ব্র্যাত্য হয়ে পড়েছিলেন ৩০ বছর বয়সেই। হারিয়ে গিয়েছিলেন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট থেকেই। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর নায়ার টুইট করেছিলেন, ‘প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।’
গতকাল রাতে নায়ারের সেই টুইট দিয়ে একটি পোস্ট করেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। ক্যাপশনে লেখা, ‘আমাদের হৃদয় ভরে গেছে।’ সঙ্গে চোখের কান্না লুকানোর ইমোজি, ভালোবাসারও। শনিবার রাতে আইপিএলের মুম্বাই–দিল্লি ম্যাচ সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত হওয়ার কথা নায়ারেরই।
দিল্লি ক্যাপিটালসের ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান আইপিএলে ম্যাচ খেলতে নেমেছেন প্রায় তিন বছর পর। ফাফ ডু প্লেসির ইমপ্যাক্ট বদলি হিসেবে নেমে করেছেন ৪০ বলে ৮৯ রান। ৫ ছক্কা আর ১২ চারে শুধু দিল্লির জন্য রানই তোলেননি, নিজের ভেতরে জমে থাকা খেদই যেন একের পর এক বের করে দিয়েছেন।
আইপিএলে নেমেছেন বছর তিনেক পর, তবে ফিফটিটি করেছেন প্রায় সাত বছর বিরতির পর। সুনির্দিষ্টভাবে বললে ২ হাজার ৫২০ দিন পর। আইপিএলে আর কোনো ব্যাটসম্যানের দুটি ফিফটির মধ্যে এত বড় ব্যবধান নেই।
নায়ার মাঝের দীর্ঘ সময়ে খেলার সুযোগই পেয়েছেন মাত্র তিন আসর। মাঠে নেমেছিলেন ৮ ম্যাচে। তাতে মাত্র ৩৭ রান তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারে বড় প্রশ্ন তুলে দেয়।
২০২২ সালের পর আর সুযোগই পাননি। ওই সময় বাদ পড়েছিলেন রাজ্য দল কর্নাটক থেকেও। অমন ঘোর অন্ধকার সময়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটে উঠেছিল নায়ারের সেই আর্তি—প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।
ক্রিকেট তাঁকে সেই সুযোগ দিয়েছে। অর নায়ার তা দুই হাত ভরে লুফে নিয়েছেন। সেটা কতটা, কিছু সংখ্যায় চোখ রাখলেই বোঝা যাবে। এক মৌসুম অপেক্ষা করে বিদর্ভে যাওয়া নায়ার সেই টুইটের পর থেকে গতকালের আগপর্যন্ত প্রথম শ্রেণি, লিস্ট ‘এ’ ও ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি মিলিয়ে করেছেন ৩ হাজার ৩৫ রান, সেঞ্চুরি ১২টি। ভারতের আর কোনো ক্রিকেটার এই সময়ে এর চেয়ে বেশি রান বা সেঞ্চুরি করতে পারেননি।
ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে নর্দাম্পটনশায়ারের হয়েও খেলেছেন দুই মৌসুম, রান করেছেন ৫৬ গড়ে। এ সময়ে দলগতভাবে জিতেছেন রঞ্জি ট্রফি, ফাইনালে উঠেছেন বিজয় হাজারে ট্রফির। ওয়ানডে সংস্করণের বিজয় হাজারেতে নায়ারই ছিলেন শীর্ষ ব্যাটসম্যান। ব্যাট করেছেন আট ইনিংসে, আউট হয়েছেন মাত্র দুবার। অপরাজিত ইনিংসগুলো ছিল এ রকম—১২২*, ৮৮*, ১৬৩*, ১১১*, ১২২*, ৮৮*। যে দুটিতে আউট হয়েছেন, তার একটিতে ১১২, আরেকটিতে ২৭।
প্রায় একা হাতে বিদর্ভকে ফাইনালে তোলার পর ট্রফি জিততে না পারলেও নায়ার আবার আইপিএলে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। যদিও দিল্লি তাঁকে সস্তা দামেই কিনেছে (৫০ লাখ রুপি)।
নায়ারের দৃষ্টি ছিল অবশ্য মাঠে নামার সুযোগ পাওয়ার দিকেই। যদিও দিল্লির প্রথম চার ম্যাচে সেই সুযোগটা আসেনি। অবশেষে পঞ্চম ম্যাচে সুযোগ এসেছে ডু প্লেসিকে চোটের কারণে তুলে নেওয়ায়। আর আইপিএল প্রত্যাবর্তনের প্রথম সুযোগেই নায়ারের ব্যাটে ছুটল আগুনের ফুলকি, যে আগুনে পুড়লেন বুমরার মতো বোলারও।
ম্যাচটা অবশ্য নায়ারের দল শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি। মুম্বাইয়ের ২০৫ রান তাড়া করতে নেমে হেরেছে ১২ রানে। তবে নায়ার জিতেছেন ঠিকই। প্রিয় ক্রিকেট তাঁকে আরেকটা সুযোগ তাঁকে দিয়েছে। বয়স এখন ৩৩ বছর। কখনো আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে সুযোগ না পাওয়া নায়ার এখন সেদিকেও হয়তো একটা সুযোগ চাইতে পারেন।