৩৮ কোটি টাকার ভবন পড়ে আছে, রোগীরা থাকছেন বারান্দায়
Published: 9th, February 2025 GMT
যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ১৫ মাস আগে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় ১০০ শয্যার কার্যক্রম আজও শুরু করা যায়নি। এতে নতুন ভবন থাকতেও রোগীদের বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উপরন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে তিনটি গুচ্ছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের এ অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ছয়তলাবিশিষ্ট হাসপাতালের মূল ভবন ২১ কোটি ৪৬ লাখ ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল এই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এই কাজ শেষ হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের পাঁচটি আবাসিক ভবন ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। গত ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট এসব ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। এ ছাড়া অক্সিজেন প্ল্যান্টসহ সরবরাহ লাইন স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কক্ষসংকটের কারণে ডায়রিয়া ওয়ার্ড খোলা হয়েছে শিশু ওয়ার্ড কার্যক্রম চলছে খোলা বারান্দায়। হিম বাতাস হু হু করে জানালার গ্রিল দিয়ে ভেতরে ঢুকছে। এতে রোগী ও স্বজনদের জবুথবু অবস্থা।
সম্প্রতি দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় কয়েকটি শয্যা ফেলে রোগী রাখা হয়েছে। পাঁচ রোগীকে শয্যায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারজনই শিশু। জানালার গ্রিল দিয়ে হিম বাতাস ঢুকছে। রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা কম্বল গায়ে জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৪ বছর বয়সী সাদিয়া খাতুনকে চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন তাঁর বাবা-মা। বাবা-মা তাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। সাদিয়ার বাবা শান্তি মিয়া বলেন, ‘শীতের মধ্যে বারান্দায় থাকা খুব কষ্টকর। ওয়ার্ডের ভিতরে বিছানা দিলে ভালো হতো। জানালা দিয়ে রাতে খুব ঠান্ডা বাতাস আসে। খাতা (কাঁথা), কাপড় গরম হতেই চায় না।’
শয্যাসংকটের কারণে ওয়ার্ডগুলোয় শয্যাসংকটের কারণে রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আছে চিকিৎসা ও কর্মচারীর সংকট। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার হলেও অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগেও রোগীদের চাপ থাকে।হাসপাতালে জায়গা সংকটের কারণে ডায়রিয়া ওয়ার্ড খোলা বারান্দায় স্থাপন করতে হচ্ছে। অথচ পাশেই ছয়তলা নতুন ভবন পড়ে রয়েছে। কিন্তু ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন না মেলায় ওই ভবন ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি দেখা গেছে, চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ছয়তলা ভবনের সামনে অ্যাম্বুলেন্সসহ কয়েকটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা আছে। গরু-ছাগল চরে বেড়াচ্ছে। হাসপাতালে ভবনের রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবনে স্থাপিত লিফট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র ও অক্সিজেন সরবরাহ লাইনও নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর নাজমুল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান। আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করে ভবনগুলো স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছি। এখন সব দায়দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আহসানুল মিজান রুমী বলেন, ‘প্রশাসনিক অনুমোদন না পেলে হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় আসবাব, জনবল, রোগীদের জন্য বরাদ্দ—এসব প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়। প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দুই দফায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে অগ্রগতির কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই।’
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য যশোর সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকেও ২০২৪ সালের ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আরেকটি চিঠি পাঠানো হয়। এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন মাসুদ রানা বলেন, ‘চিঠি পাঠানোর পরেই তো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলো। এরপর সরকার পরিবর্তন হয়ে গেল। এ জন্যে প্রশাসনিক অনুমোদন পেতে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা আবার নতুন করে চেষ্টা করব।’
চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনের অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) আফরিনা মাহমুদ বলেন, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো চিঠি পাওয়া গেছে। জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানসহ নানা কারণে অনুমোদনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। শিগগিরই লাইন ডিরেক্টরের মাধ্যমে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হবে।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চিকিৎসক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যাসংকটের কারণে ওয়ার্ডগুলোয় শয্যাসংকটের কারণে রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আছে চিকিৎসা ও কর্মচারীর সংকট। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার হলেও অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগেও রোগীদের চাপ থাকে।
তিনজন চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ ছাড়া জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে তিনজন চিকিৎসক আবার সপ্তাহে চার দিন করে প্রেষণে যশোর জেনারেল হাসপাতালে থাকেন। তাঁরা সপ্তাহে দুই দিন করে এই হাসপাতালে থাকেন।মুহাম্মদ আহসানুল মিজান রুমী, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাচৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পেলে এখানে ৭৪ জন চিকিৎসক নিয়োগে পেতেন। কিন্তু এখানে ৫০ শয্যার জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৩২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র আটজন। এতে এখানে এসে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
চিকিৎসক-সংকট থাকার কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আহসানুল মিজান রুমী বলেন, ‘তিনজন চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ ছাড়া জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে তিনজন চিকিৎসক আবার সপ্তাহে চার দিন করে প্রেষণে যশোর জেনারেল হাসপাতালে থাকেন। তাঁরা সপ্তাহে দুই দিন করে এই হাসপাতালে থাকেন। ফলে চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স স ব স থ য ও পর ব র ন চ ক ৎসক দ ন কর ভবন র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ–সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবিতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ
রাজধানীর শাহবাগে ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের বিচার এবং মঞ্চটির সংগঠক লাকী আক্তারকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবার ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের কর্মসূচি থেকে পুলিশের ওপর হামলার বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) ৮ নম্বর গেটের সামনে একদল শিক্ষার্থী এ বিক্ষোভ করেন। এতে এনএসইউর পাশাপাশি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কিছু শিক্ষার্থীও অংশ নেন। আয়োজকদের কোনো ব্যানার ছিল না। তাঁরা নিজেদের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী বলে দাবি করেছেন।
বিক্ষোভকারীরা প্রথমে এনএসইউর ৮ নম্বর গেটের সামনে জড়ো হন। সেখানে কয়েকজন বক্তৃতা করেন। বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে স্লোগান চলে। তাঁরা ‘শাহবাগীরা বাংলা ছাড়’, ‘শাহবাগ না বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। এরপর এনএসইউ গেট থেকে একটি মিছিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দু-একটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার সেখানে এসে শেষ হয়।
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সালাহউদ্দিন ওমর সাম্য বলেন, ‘২০১৩ সালে বাংলাদেশের বিভাজন শুরু হয় এই শাহবাগ থেকে, শাপলা চত্বরে গণহত্যার মাধ্যমে। এখন তারা আবারও নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্র বানাতে চক্রান্ত করছে। তারা আবারও ফিরে আসুক আমরা তা চাই না। আমরা তাদের বিচার চাই।’
এদিকে একই ধরনের দাবিতে বুধবার বিকেল শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে একটি মানববন্ধন করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। সেখানে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী বলেন, লাকী আক্তার ও গণজাগরণ মঞ্চের সাবেক মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে মবতন্ত্রের সূচনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দিয়েছিলেন তাঁরা।
ইনকিলাব মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সদস্যসচিব ফাতিমা আক্তার বলেন, সরকার ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার করেছে। তারপরও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করা অযৌক্তিক।
আরও পড়ুনপুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা৫ ঘণ্টা আগেএ সময় ইনকিলাব মঞ্চ থেকে সরকারের উদ্দেশে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করে শাপলা চত্বর ও পিলখানা গণহত্যার স্বাধীন বিচারিক তদন্ত কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা।