দুর্ঘটনায় মৃত্যু কিন্তু মামলা খুনের, গ্রেপ্তার শিক্ষক
Published: 9th, February 2025 GMT
ঢাকার গাবতলীতে বাল্কহেডে কাজ করার সময় পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যান এক শ্রমিক। পরে থানায় হত্যা মামলা করেন স্বজনরা। পুলিশ অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলেও মামলায় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অভিযোগ উঠেছে।
কী ঘটেছিল সেদিন
গাবতলী বেড়িবাঁধের দ্বীপনগর ঘাটে বাল্কহেড থেকে গত ১ জানুয়ারি বিকেলে বালু খালাসের কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। বালু নিতে একে একে বাল্কহেডে নামছেন তারা। নামার আগমুহূর্তে এক শ্রমিক বাঁ দিকে হেলে পড়েন। তাঁর মাথা বাল্কহেডের সিঁড়িতে আঘাত লাগে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ব্যক্তি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার মৃত দুলাল শেখের ছেলে মুকুল শেখ (৪০)। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দ্বীপনগর ঘাটে বাল্কহেড থেকে বালু খালাসের একটি সিসিটিভি ফুটেজ সমকালের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, ৪টা ১২ মিনিটে বালুর খালি ঝুড়ি হাতে বাল্কহেডের নামার সময় বাঁ পাশে মুকুল লুটিয়ে পড়েন। এর পর অন্য শ্রমিকরা তাঁকে ধরাধরি করে মাথায় পানি দেন। কিন্তু চেতনা ফেরেনি।
থানায় হত্যা মামলা
এ ঘটনায় ঢাকার দারুসসালাম থানায় হত্যা মামলা করেন মৃতের স্বজনরা। শাহজাদপুরের শেলাচাপড়ী গ্রামের ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে আটজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়। সম্প্রতি এ ঘটনায় শেলাচাপড়ী পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক লোকমান হোসেন সরকারকে (৭৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি কারাগারে রয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় আলোচনা সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মৃত মুকুলের চাচা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী আশরাফ আলী বলেন, ‘থানায় একটি হত্যা মামলা করেছি। একজন আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।’ এ সময় সিসিটিভি ফুটেজের কথা বলতেই তিনি মোবাইল সংযোগ কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
মামলার এজাহারে লেখা হয়, ১ জানুয়ারি দ্বীপনগর ঘাটে কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন মুকুল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পথে বেড়িবাঁধে সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজের সামনে পরিকল্পিতভাবে মুকুলকে আসামিরা হাতুড়ি ও রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। মুকুলকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাঁর ভাই শফিকুল শেখ ওরফে রাব্বানিকে মারধর করে। স্থানীয়দের সহায়তায় শফিকুল ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়।
নেপথ্যে রাজনৈতিক বিরোধ
আসামি লোকমানের ছেলে মো.
কামরুজ্জামান আরও জানান, গত ৬ ডিসেম্বর স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মিজানকে কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী (বালু শ্রমিক) মৃত মুকুল শেখ, আশরাফ আলী, শাহজাদপুর পৌর শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরেফিন রহমান স্বাধীন ও তাঁর বাবা মিজানুর রহমান বেপারিসহ ৫৫ জনকে আসামি করা হয়। ধারণা করছি, এ মামলা থেকে বাঁচতে হত্যার ‘নাটক’ সাজিয়েছে তারা।
তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার দারুসসালাম থানার উপপরিদর্শক এস এম শামসুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। বাল্কহেডের শ্রমিক ও ঘাটের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি মুকুল শেখ কর্মস্থলে মারা গেছে। তারপরও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলার বাদী আশরাফ হত্যা মামলার আসামি। তবে নির্দেশনা না থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ঘটন য় আওয় ম তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ভিডিও দেখে দালালের বাড়ি ঘেরাও
সমুদ্রপথে ইউরোপে লোক পাঠানোর কথা বলে অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন ঝালকাঠির বাসন্ডা ইউনিয়নের দারখী গ্রামের আকাশ মোল্লা। সম্প্রতি ছোট ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন তিনি। জাঁকজমক অনুষ্ঠানের সেই ভিডিও আপলোড করেন সামাজিক মাধ্যমে। এরপর শুরু হয় বিপত্তি। ভিডিও থেকে তাঁর অবস্থান নিশ্চিত করে গত শনিবার বাড়িতে চলে আসেন প্রতারিত যুবকদের স্বজন। বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন তারা। অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশলে পালিয়ে যান আকাশ ও তাঁর স্ত্রী।
জানা গেছে, মালয়েশিয়া থেকে ১৮ লাখ টাকায় সমুদ্রপথে অস্ট্রেলিয়া নেওয়ার কথা বলে মালয়েশিয়া প্রবাসী যুবকদের ইন্দোনেশিয়া দ্বীপে আটকে রাখেন আকাশ মোল্লা। এরপর নির্যাতন করে আরও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। দেশ থেকে টাকা না পাঠালে নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। তাঁর কবল থেকে মুক্তি পেতে কোনো উপায় পাচ্ছিলেন না ভুক্তভোগী যুবকরা। সম্প্রতি আকাশের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে নির্যাতনের ভিডিওসহ প্রমাণ নিয়ে শনিবার বিকেলে ঝালকাঠিতে এসেছেন তারা। প্রথমে আকাশ বাড়িতে আছে জানালেও পরে অস্বীকার করেন স্বজনরা। এক পর্যায়ে আকাশের স্ত্রী সুমনা আক্তার সাথি উত্তেজিত হয়ে ভুক্তভোগীর স্বজনদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। কিছুক্ষণ পর সাংবাদিক ও প্রশাসনের লোকজন এলে তিনিও উধাও হয়ে যান। রাত ৮টার দিকে সদর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. আমিনুল, এসআই ফরিদ হোসেন এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ বিষয়ে অভিযোগ শোনার জন্য থানায় নিয়ে যান ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনের।
এ সময় কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর এলাকার অরুণ মিয়ার সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘একটু ভালো থাকার আশায় ছেলে আলাউদ্দিনকে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে তাকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে আকাশ। আরও টাকা চেয়ে নির্যাতন করেছে। সে এখানে আছে জানতে পেরে এসেছি। আকাশকে না পেলেও তার স্ত্রী ঘরেই ছিল। সে কীভাবে পালিয়ে গেল? পুলিশ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পিছু হটেছে।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, সাধারণত যেখানে ঘটনা ঘটে, সেখানে মামলা হয়। তা ছাড়া আকাশ মোল্লার বাড়িতে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পেলে তাঁকে কীভাবে আইনের আওতায় আনা যায় দেখা হতো। তাই আমাদের কিছুই করার নেই।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মাদারীপুরের পূর্ব সাইচপাড়া গ্রামের পারুল বেগমের ছেলে আরাফাত সরদার ও ভাইয়ের কাছ থেকে আকাশ
ব্যাংক এজেন্ট ও চেকের মাধ্যমে ১৮ লাখ করে মোট ৩৬ লাখ টাকা নিয়েছেন তিন কিস্তিতে। এরপর ইন্দোনেশিয়া দ্বীপে নিয়ে আটক করে আরও টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে আরও ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন।
একই কায়দায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার রখিবপাড়া গ্রামের মৌসুমী আক্তারের স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী সুমন হালদার ও তাতিকান্দি গ্রামের মরজিনা বেগমের ছেলে তাইম হোসেন ও ভাই তমিজ হোসেনের কাছ থেকেও ৩৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। শুধু তারা নয় এ রকম ৪০ যুবককে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে জিম্মি করে নির্যাতন ও বাড়তি টাকা আদায় করছেন আকাশ। ভুক্তভোগীদের স্বজনরা আকাশের বাড়িতে অবস্থান নিলে তাঁর স্ত্রী গেম না দেওয়ার (অস্ট্রেলিয়া না পাঠানোর) হুমকি দিয়েছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আকাশ তাঁর ভাই পলক ও বাবা কবির মোল্লা মালয়েশিয়া থাকতেন। এক বছর আগে কবির মোল্লা দেশে এসে এসএ পরিবহনের পাশে ভাঙারি ব্যবসা শুরু করেন। পলকের বিয়ে উপলক্ষে ছয় মাস আগে ঝালকাঠি আসেন তারা। লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন। তারা হঠাৎ করে বড়লোক হয়ে গেছে বলে জানান প্রতিবেশীরা। এলাকার কারও সঙ্গে তাদের তেমন ওঠাবসা নেই।
আকাশ ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ভাই রাতুল হাসান পলক বলেন, ভাই-ভাবি বাসায় নেই। ভাই মালয়েশিয়া থাকাকালে এ ধরনের কোনো চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা জানি না। আমিও মালয়েশিয়া থাকি। বিয়ে করতে বাড়ি এসেছি। ভাই মালয়েশিয়া থেকে কিছু দিন আগে এলেও ভাবি বাড়িতেই থাকেন।
পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায় বলেন, ভুক্তভোগী যুবকদের স্বজনরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।