দাম না পেলে চাষে আগ্রহ হারাবে কৃষক
Published: 9th, February 2025 GMT
পণ্যের ন্যায্য দাম না পেলে উৎপাদনে আগ্রহ হারাবেন কৃষক। কৃষিপণ্যের যৌক্তিক দাম নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। কৃষকের ব্যবসায়িক দক্ষতা তৈরি করতে হবে, যেন তারা বুঝতে পারেন কোন ফসল কতটা চাষ করতে হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের (খানি) খাদ্য ও পুষ্টি অধিকারবিষয়ক প্রচারাভিযান প্রকল্পের বার্ষিক পরিকল্পনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।
খানি সেক্রেটারিয়েট সংগঠন পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্কের (প্রান) আয়োজনে সভায় খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার উপায়, সুযোগ ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটসহ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে কীভাবে খাদ্য ও নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
খানির সহসভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিকী বলেন, বাজারে যখন কোনো কিছুর দাম বেড়ে যায় আমরা সবাই উদগ্রীব হই। দাম কমে যখন কৃষককে তার উৎপাদিত ফসল ফেলে দিতে হয়, তখন আমরা আর কিছু বলি না।
তিনি আরও বলেন, বাজার বলতে আমরা শুধু ঢাকাকে বুঝি। প্রান্তিক কৃষকরাও তাদের ফসল নিয়ে ঢাকামুখী হতে চায়। স্থানীয় চাহিদা অনুসারে বাজার তৈরি নিয়ে ভাবতে হবে।
এনজিও ফোরাম অন এডিবির প্রধান নির্বাহী রায়ান হাসান বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি আমাদের মূল কাজের ক্ষেত্র হওয়া উচিত। রাজনৈতিক অর্থনীতির ফোকাস থেকে সরবরাহ চেইন স্পষ্টভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি।
খানির সেক্রেটারিয়েট ও প্রানের প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ বলেন, আমাদের মাথায় এখনও খোরপোশের কৃষি রয়ে গেছে। নতুন পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করতে চাচ্ছি না। অনেক জায়গায় কন্ট্রাক্ট ফার্মিং আসছে। এটা করপোরেট ফার্মিংয়ের প্রথম ধাপ।
লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইনের (লিড) প্রধান অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক খসড়া তৈরি করছি। এখানে ‘রাষ্ট্র খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারে’র পরিবর্তে, ‘রাষ্ট্র খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকিবে’ ব্যবহার করা হবে। এতে খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িত ও বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্সের প্রধান মোহন কুমার মণ্ডল, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চের প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী, বিন্দু নারী উন্নয়ন সংস্থার প্রধান জান্নাতুল মাওয়া, কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় জাতিসংঘ মহাসচিব, ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক আজ
চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে তিনি ঢাকা আসেন। এ সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ সকালে বৈঠক করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এ বৈঠকে গুরুত্ব পাবে অন্তর্বর্তী সরকারের গণতন্ত্রে উত্তরণ, রোহিঙ্গা ইস্যু ও মানবাধিকার।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরটিকে ভিভিআইপি হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। আজ সকালে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ মহাসচিবের অবস্থানরত হোটেলে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এর পর ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন গুতেরেস। বৈঠক শেষে ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টাও তাঁর সফরসঙ্গী হবেন। সেখান থেকে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাংলাদেশে কাজ করা জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা নিজ নিজ কার্যক্রম সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ব্রিফ করবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন তিনি। রাতেই কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব।
আগামীকাল শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে যাবেন আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে জাতিসংঘের সব কর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। এর পর সেখান থেকে দুপুরে হোটেলে ফিরে তিনি গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন এবং বাংলাদেশের যুবসমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এ দিন বিকেলে একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিং হওয়ার কথা রয়েছে। আর সন্ধ্যায় আন্তোনিও গুতেরেসের সৌজন্যে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আগামী রোববার সকালে তাঁর ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর প্রসঙ্গে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফর রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, জাতিসংঘ বিভিন্ন সরকারের সময়ে বাংলাদেশিদের পাশে থেকেছে। ফলে জাতিসংঘের সহযোগিতা ও সংহতি চলবে। কী
ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হবে এবং অগ্রাধিকার বিষয়গুলো কী, তা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বা আগামীতে নির্বাচিত সরকার জাতিসংঘকে জানাবে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
কক্সবাজারজুড়ে নিরাপত্তা বলয় কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর নিয়ে কক্সবাজারজুড়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।
এ ছাড়া উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্ধিত ২০ নম্বর এলাকার একটি মাঠ তৈরি করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের বসানোর জন্য। এই মাঠেই লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন ড. ইউনূস ও আন্তোনিও গুতেরেস। মাঠটির পাশেই আরেকটি অংশে তৈরি করা হয়েছে হেলিপ্যাড, যার কাছে একটি সেন্টারে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও নারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দু’জন।
পাশাপাশি ১৮ নম্বর ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গা সাংস্কৃতিক স্মৃতি কেন্দ্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সেবা এবং ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তাই এসব স্থানের যাতায়াতের রাস্তাগুলো করা হয়েছে মেরামত, বসানো হয়েছে নতুন ইট। একই সঙ্গে নতুন করে সেজেছে পরিদর্শনের স্থানগুলো।
আশ্রয় শিবিরে কার্যক্রমগুলোর তত্ত্বাবধান করছে সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে রয়েছে পুলিশ, এপিবিএন, জেলা প্রশাসন এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ক্যাম্প পর্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখছে পুলিশ। এসএসএফ কক্সবাজারে চলে এসেছে, তারা সব বিষয় সমন্বয় করছে। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।