আজ চকলেট দিবস। এই দিনে কেউ চকলেট উপহার পাবেন আর কেউ উপহার দেবেন। চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো চলুন জানা যাক। চকলেট খাওয়ার ভালো মন্দ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন ল্যাবএইড হসপিটালের সিনিয়র পুষ্টিবিদ কামরুন আহমেদ।
এই পুষ্টি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, নাকি মন্দ—এটি এখনো পুরোপুরি মীমাংসা হয়নি। বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা কখনো চকলেটকে ভালো বলছেন, আবার কখনো এর উপকারিতা বেশি নয় বলেও রায় দিয়েছেন। তবে উপকারিতার পক্ষেই রায় পড়েছে বেশি। উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক করে এবং হৃদ্যন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া চকলেট রক্তে শর্করার হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়।’’
‘‘চকলেট তৈরির মূল উপাদান কোকোয়া। গবেষণায় এই কোকোয়ার নানা অদ্ভুত গুণের কথা জানা গেছে। প্রাচীন মায়া সভ্যতায় দৌড়ানোর সহায়ক হিসেবে চকলেট পাউডার ব্যবহার করা হতো। এটি খেলে নাকি বেশি দৌড়ানো যেত! আর বর্তমান শতাব্দীর গত দশকে জানা গেছে, চকলেটে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ডায়রিয়া নিরাময়ে বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে। নযুক্তরাষ্ট্রের ওহিওর সেইন্ট ভিনসেন্ট মার্সি মেডিকেল সেন্টারের কার্ডিওলজি বিভাগের গবেষক ওয়াইস খাজা বলেন, চকলেট খুব ভালো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। শরীরের প্রদাহজনিত রোগ কমাতে এটি ভালো কাজে দেয়। আমরা মনে করি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হওয়ার কারণেই এর উপকারী দিক বেশি। চকলেট খেলে ক্যানসার ও স্মৃতিভ্রমের ঝুঁকিও কমে আসে।’’—যোগ করেন কামরুন আহমেদ।
আরো পড়ুন:
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে যা যা খেতে পারেন
নাক কান গলার যত্নে যেসব অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি
কামরুন আহমেদ জানান, সব চকলেটেই যে সমান গুণ আছে, তা কিন্তু নয়। কারণ, সব চকলেট একই রেসিপিতে তৈরি হয় না। কোকোয়া বীজে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক একটি পুষ্টিকণা চকলেটকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিণত করে এবং প্রদাহজনিত রোগ কমানোর জন্য কাজ করে। কালো কুচকুচে ডার্ক চকলেটে এসব গুণ বেশি থাকে, দুধ মেশানো বা সাদা রঙের চকলেটে থাকে অনেক কম।
যেসব চকলেটের ৭০ শতাংশ কোকোয়া দিয়ে তৈরি, সেগুলোকেই বলা হয় ডার্ক চকলেট। মূলত তৈরির প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে কোন চকলেটে কী পরিমাণ কোকোয়া থাকবে। চকলেটে কোকোয়া যত বেশি থাকবে, সেটি স্বাস্থ্যের জন্যও বেশি উপকারী হবে।
আমরা বাজারে যেসব চকলেট কিনি, সেগুলো কি বিশুদ্ধ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না। ওয়াইস খাজা বলেন, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত চকলেটে থাকে দুধ ও চিনি। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এগুলো খুব একটা পুষ্টিকরও নয়। তবে ওয়াইস খাজা এও জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরনের চকলেটের গুণ নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা কম হয়েছে। তাই ডার্ক চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও কতটুকু উপকারী, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, দিনে দুইবারের বেশি ডার্ক চকলেট না খাওয়াই ভালো।
গবেষকদের মতে, কোকোয়া শব্দটি এসেছে কাকাওয়া থেকে। এর অর্থ ঈশ্বরের খাবার। ৫০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে সময় চকলেটকে মনে করা হতো ‘ঈশ্বরের খাবার’ হিসেবে। ১৫০০ থেকে ৫০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত মধ্য আমেরিকায় বসবাসকারী ওলমেক জাতিভুক্ত মানুষেরা এই নাম দিয়েছিলেন। মায়া সভ্যতার মানুষেরা পানীয় হিসেবে পান করত চকলেট। এ সময় শুধু ধনীদের খাবার ছিল এটি। তবে ইউরোপীয়রা মায়া সভ্যতা আবিষ্কারের পর থেকে চকলেট জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সবার খাবারে পরিণত হয়। ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য মেক্সিকো এলাকায় এ সময় চকলেটকে ‘স্বর্গীয় ও অবসাদ দূরকারী পানীয়’ মনে করা হতো। এ সময় প্রবাদ ছিল, এক কাপ চকলেট পানীয় পান করলে একজন মানুষ আর কিছু না খেয়েই সারা দিন হাঁটতে পারেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে চকলেটের ঔষধি গুণ প্রথম জানা যায়। জ্যঁ আন্তোইন ব্রুটাস নামের এক ফরাসি ফার্মাসিস্ট প্রথম গড়ে তুলেছিলেন চকলেট মিশিয়ে ওষুধ তৈরির কারখানা। যদিও তা টিকে থাকেনি। শেষে বহুজাতিক কোম্পানি নেসলে কিনে নিয়েছিল ওই কারখানা। এই শতকেই দুধ মেশানো চকলেট তৈরির রেসিপি আবিষ্কৃত হয়। ২০০৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে চকলেটে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া হৃদযন্ত্র ও ত্বকের জন্যও উপকারী চকলেট।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব স থ য র জন য উপক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধে বাংলাদেশের লাভ কী
ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছে বাংলাদেশ। এত দিন বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ ছিল। গত মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্থলপথে সুতা আমদানির সুবিধা বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভারত বাতিল করার এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ এমন সিদ্ধান্ত নিল। সুতা আমদানি বন্ধ করায় বাংলাদেশের কী লাভ হলো?
মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগ
ভারত থেকে সুতা আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও কম মূল্যে সুতা রপ্তানির অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, স্থলসীমান্তে বাংলাদেশ কাস্টমসে যে পরিমাণ সুতা আমদানির কথা বলা হয়, এর চেয়ে বেশি সুতা দেশে আসে। লোকবলের অভাবে সশরীরে পরিদর্শন করার সক্ষমতা কম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। এই সুযোগে ৩০ কাউন্টের সুতার চালানের ভেতরে ৮০ কাউন্টের সুতা আনার অভিযোগও আছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বাংলাদেশের সুতার চেয়ে কম দামে ভারত সুতা রপ্তানি করত। গড়পড়তায় দেশের বাজারের সুতার চেয়ে ৩ থেকে ৫ শতাংশ কম দামে ভারত থেকে সুতা আসত। বেনাপোল সীমান্তের আশপাশে সুতা মজুত করা হতো এবং আমদানি আদেশ পাওয়ার দু–এক দিনের মাথায় পণ্য পাঠিয়ে দিতেন ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা।
এত দিন বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আসার সুযোগ ছিল। সুতার সূক্ষ্মতা ও স্থূলতা পরিমাপ হয় কাউন্ট দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের স্থলবন্দরে সুতার সূক্ষ্মতা ও স্থূলতা মাপার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই। কয়েক বছর আগে বেনাপোল স্থলবন্দরে সুতার সূক্ষ্মতা ও স্থূলতা পরিমাপের জন্য যন্ত্রপাতি বসালেও দুই মাসের মাথায় তা অকেজো হয়ে যায়। ফলে অনেক আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বেশি কাউন্টের সুতা এনেছেন।
শুল্ক কর্মকর্তারা জানান, স্থলপথে সুতা এলে প্রকৃতভাবে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা কঠিন। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য চলে আসে। তাই সমুদ্রপথে সুতা আনলে আমদানির প্রবাহ এক জায়গা দিয়ে হয়, তাতে শুল্ক কর্মকর্তা ও আমদানিকারকদের জন্য সুবিধা হয়।
চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান এবং দেশে উৎপাদিত সুতার দাম প্রায় একই রকম হলেও স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় সুতার দাম অনেক কম থাকে। অর্থাৎ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা সুতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে আসে। এতে দেশের সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।
কী লাভ হবে বাংলাদেশের
মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সুতা আনা বন্ধ হবে। এতে স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা পাবে। আবার ভারত থেকে সমুদ্রপথে সুতা আমদানি করলে আর্থিকভাবে লাভ হবে। আবার স্থলপথের চেয়ে সমুদ্রপথে সময় খুব বেশি লাগবে না।
জানা গেছে, ভারতের কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও গুজরাট থেকে বাংলাদেশে সুতা আসে। সড়কপথে সুতা আসতে ১০-১২ দিন সময় লাগে। অন্যদিকে চেন্নাই সমুদ্রবন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আসতে সময় লাগে দুই সপ্তাহের মতো। আর সমুদ্রপথে পণ্য এলে তিন-চার দিন বেশি সময় লাগে। কিন্তু জাহাজে সুতা আনলে ভাড়া ১০ শতাংশ কম পড়ে।
এ বিষয়ে বিটিএমএর পরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, নিট পোশাকশিল্পের মালিকেরা আগে যত সুতা লাগত, এর চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি সুতা আমদানি করতে পারে। স্থলপথে সুতা আমদানিতে এই সুযোগের অপব্যবহার হয়। তিনি বলেন, স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধ করায় এসব অনিয়ম বন্ধ হবে। এতে স্থানীয় উৎপাদকেরা লাভবান হবেন।
২০২৪ সালে সুতা আমদানি বেড়েছে ৩১%
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর প্রায় ১২ লাখ টন সুতা আমদানি করেছেন দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। এই সুতার বড় অংশই এসেছে ভারত থেকে। গত বছর যে পরিমাণ সুতা আমদানি হয়েছে, তা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
দেশের নিট কাপড়ের বেশির ভাগ এবং ওভেন কাপড়ের প্রায় অর্ধেক সুতার সরবরাহ করে দেশি স্পিনিং মিলগুলো।
বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, দেশের ৫১৯টি স্পিনিং মিল রয়েছে। এসব স্পিনিং মিল নিট কাপড়ের ৮৫-৯০ শতাংশ এবং ওভেন কাপড়ের প্রায় ৪০ শতাংশ সুতা সরবরাহ করে থাকে। এত স্পিনিং মিল থাকার পরও ভারত থেকে আমদানি করা সুতায় দাম একটু কম থাকায় আমদানি বাড়ছে।
কেন আমদানি বেড়েছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে স্পিনিং মিলের মালিকেরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে অধিকাংশ স্পিনিং মিল উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে না। এ ছাড়া গত দুই বছরে গ্যাসের দাম ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এতে সুতার উৎপাদন খরচও বেড়েছে। অন্যদিকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা দেশি বস্ত্রকলের সুতা ব্যবহারে নগদ সহায়তার হারও কমানো হয়েছে। এতে অনেক রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার মালিকেরা ভারতের সুতা ব্যবহারে উৎসাহী হন।