ব্যবসায়ীরা তাঁদের সমস্যার কথা বলতে পারছেন না
Published: 9th, February 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে। প্রবাসীদের আস্থা অর্জন করায় গত ছয় মাসে আমরা প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক ধারা দেখতে পাচ্ছি। বর্তমান সরকারের সময়ে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে ভালো দিক এটি।
তবে সরকার মোটাদাগে ব্যবসায়ীদের আস্থায় নিতে পারেনি। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে, তা আইন অনুযায়ী নিজস্ব গতিতে চলুক। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কথাও সরকারকে শুনতে হবে। বাণিজ্য সংগঠনগুলোর বেশির ভাগই এখন প্রশাসক দিয়ে চলছে। এসব সংগঠনে নির্বাচন হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীরা তাঁদের সমস্যার কথা যথাযথ ফোরামে বলতে পারছেন না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়লে বিনিয়োগে সুখবর আসবে না। বিনিয়োগ না হলে নতুন কর্মসংস্থানও বাড়বে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের ব্যবসায়ীরা স্বস্তিতে না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। আইএমএফের পরামর্শে সরকার নতুন করে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর কর–ভ্যাট বাড়িয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। সুদের হার বাড়িয়ে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তারও সুফল দেখা যাচ্ছে না; বরং ব্যাংকগুলোর মুনাফা বেড়েছে তাতে। আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অধিকার আদায়ের নামে ভাঙচুর–বিক্ষোভের বহু ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনার আগে আলোচনা করে সমাধান করা যায়। আমরা দেখছি, আইনশৃঙ্খলা কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যদি উন্নতি না হয়, তাহলে অর্থনীতিতে সুদিন ফিরবে না।
সরকার সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ। তবে অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলা, কীভাবে সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হবে, তাতে লাভবান হবেন কারা—এসব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দরকার। সমস্যা হলো সরকার নিজের কথা নিজে বলছে। অন্য কারও সঙ্গে কথা বলছে না। আমাদের চাওয়া হলো সরকার কথার চেয়ে কাজ বেশি করে দেখাক। যেমন সরকারের কাছ থেকে আমরা শুধু ডলার পাচার হওয়ার কথা শুনছি। এখন আমরা দেখতে চাই, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এনেছে সরকার। অন্তত একটা উদাহরণ তৈরি করা হোক।
সবচেয়ে বড় চাওয়া হলো সরকারের এখন নির্বাচনের আবহ তৈরি করা দরকার। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার আসবে। অন্তর্বর্তী সরকার অভিজ্ঞতাগুলো নতুন সরকারকে শেয়ার করবে। নির্বাচনের আবহ তৈরি হলে অর্থনীতিতে গতি আসবে।
— আমিরুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রিমিয়ার সিমেন্ট ও সী কম গ্রুপ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আদালতে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ
লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সহায়ক কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ওই নিয়োগ বাতিল চেয়ে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।
জানা গেছে, কম্পিউটার অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে ১৪ জন, জারিকারক পদে ৪ জন ও অফিস সহায়ক পদে ৬ জনসহ ২৪ জন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন আদালত। কম্পিউটার অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহায়ক ও জারিকারক পদে লিখিত পরীক্ষা হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি। অপারেটর পদে ৪ মার্চ ও বাকি দুই পদে ৫ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা হয়। ৫ মার্চ ফল প্রকাশ করে ওইদিনই নিয়োগপত্র ইস্যু করে কর্তৃপক্ষ। এসব নিয়োগে আত্মীয়করণ, লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থ বিনিময়ের মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসরদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে সচেতন নাগরিক সমাজ। এ নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন স্বপন বলেন, ২৪টি পদের সবক’টিই দুর্নীতি ও আত্মীয়করণের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত শর্তাবলি অনুযায়ী শারীরিক যোগ্যতা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন সনদপত্রসহ যোগদান করতে বলা হয়েছে। জেলার বাইরে নিয়োগপ্রাপ্তরা এত অল্প সময়ে কীভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করলেন– এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল পূর্বনির্ধারিত।
তিনি আরও বলেন, কর্মসূচি ও মাইকিং করা হলে ৮ মার্চ নিয়োগ স্থগিতসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। নিয়োগ স্থগিত করায় দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। স্থগিত আদেশকে তোয়াক্কা না করে ফের আদেশ বহাল করা হয়, যা দুঃখজনক।
এই নিয়োগ বাতিল করে ফের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি করে সচেতন নাগরিক সমাজের অন্যতম সদস্য আবজাল হোসেন বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে তাদের শাস্তি দিতে হবে। নতুবা সচেতন নাগরিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে জেলা জজকোর্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু ফাত্তাহ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর বলার কিছু নেই। কোর্ট কর্তৃপক্ষও কিছু বলবে না।
এর আগে একই দাবিতে ৬ থেকে ৮ মার্চ তিন দিন শহরে মাইকিং করা হয়। বলা হয়, জেলা আদালতে প্রতিটি পদের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বহিরাগত ও স্বৈরাচারের দোসরদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। এক দিন পর ৯ মার্চ শহরের মিশন মোড় চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাকও দেওয়া হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৮ মার্চ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। পরে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে ফুঁসে উঠেছে সচেতন নাগরিক সমাজ।