কেজিপ্রতি আলু সংরক্ষণ ভাড়া ৮ টাকাই যৌক্তিক
Published: 9th, February 2025 GMT
হিমাগারে আলু রাখতে এ বছর কেজিপ্রতি ১ টাকা করে বেশি গুনতে হবে চাষিকে। গত বছর প্রতি কেজির ভাড়া ছিল ৭ টাকা, এবার তা ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। সব খরচ হিসাব করে মৌসুমভিত্তিক (এককালীন) এই ভাড়াকে যৌক্তিক বলছেন সংগঠনের নেতারা।
শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিএসএর নেতারা দাবি করেন, বর্তমানে উচ্চ ঋণের সুদহার, বিদ্যুৎ বিল, মজুরিসহ অন্যান্য খরচ যেভাবে বেড়েছে, তাতে ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী।
তিনি জানান, সারাদেশে এখন হিমাগার রয়েছে প্রায় ৪০০। ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য পরিচালন খরচের ধাক্কা সামলাতে না পেরে এর মধ্যে তিন শতাধিক হিমাগার রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু হিমাগার এরই মধ্যে ঋণখেলাপি হয়েছে। তিনি বলেন, হিমাগারে আলু আনা-নেওয়া (লোডিং-আনলোডিং), কর্মীর বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক সব খরচই বেড়েছে। এসব খরচ বিবেচনায় নিয়ে এ বছর আলু সংরক্ষণে কেজিপ্রতি ভাড়া দাঁড়ায় ৯ টাকা ৬২ পয়সা। চাষি ও সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ীর আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সমিতি। এই ভাড়া যৌক্তিক কিনা, তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যাচাই করতে পারে।
মোস্তফা আজাদ বলেন, হিমাগারে ৫০ কেজির বস্তায় আলু সংরক্ষণের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। গত বছর কেজিপ্রতি ৭ টাকা করে ৫০ কেজির বস্তার ভাড়া নেওয়া হয় ৩৫০ টাকা। তবে দেখা গেছে, অতীতে অনেক ব্যবসায়ী এ নিয়ম না মেনে ৭০ থেকে ৭২ কেজি আলু বস্তায় ভরে হিমাগারে রেখেছেন। তারাও ভাড়া দিয়েছেন ৩৫০ টাকা করে। সেই হিসাবে তাদের কেজিতে খরচ হয়েছে ৫ টাকার মতো। এবার এ ধরনের অনিয়ম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কারণেই একটি মহল অপপ্রচার ও ভাড়া কমানোর আন্দোলন করছে।
হিমাগার মালিকরা জানান, দেশে আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। এর মধ্যে হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৪৫ টনের মতো। চলতি বছর আলু উৎপাদন হতে পারে ১ কোটি ২০ লাখ টনের মতো। সেই হিসাবে বিপুল পরিমাণে আলু হিমাগারের বাইরে থাকবে এবং পণ্যটির দাম সেভাবে বাড়বে না। এতে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এমন বাস্তবতায় উদ্বৃত্ত আলুর রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
হিমাগার ভাড়া কৃষকদের সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পাঁচটি দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। সেগুলো হলো– ঋণের সুদহার ১৭ শতাংশ (দণ্ডসুদসহ) থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা, বিদ্যুৎ বিলের ইউনিটপ্রতি খরচ কমিয়ে ৫ টাকা করা, হিমাগারের বিভিন্ন ব্যয়ের ওপর ভ্যাট ও উৎসে কর প্রত্যাহার, ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় তিন মাসের বদলে বার্ষিক করা এবং হিমাগার খাতকে কৃষি শিল্প ঘোষণা করা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকের মৃত্যুর ১০ দিন পর চলে গেলেন বাগ্দত্তাও
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিভা সরকার মারা গেছেন। গতকাল শনিবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রতিভা সরকার (২১) সাতক্ষীরার বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বিপ্রজিৎ সরকার ও তালা উপজেলা মহিলাবিষয়ক অফিসের প্রধান সহকারী দেবকী রায় দম্পতির মেয়ে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে তালা উপজেলা সদরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়িয়া গ্রামে।
গত ৩০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সোনামুর মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের আরোহী প্রতিভা সরকার গুরুতর আহত হন। মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন অর্ঘ্য অমৃত মণ্ডল (২৬), যার সঙ্গে প্রতিভার বাগ্দান হয়েছিল। ঘটনাস্থলে অর্ঘ্য নিহত হন। তিনি ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ছিলেন। প্রতিভা ছিলেন ওই মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
প্রতিভার বাবা বিপ্রজিৎ সরকার বলেন, অর্ঘ্য ও প্রতিভা ৩০ জুন ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে সাতক্ষীরায় আসছিলেন। পথে গোপালগঞ্জে তাঁরা দুর্ঘটনায় পড়েন। ঘটনাস্থলে মারা যান অর্ঘ্য। প্রতিভাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গতকাল বেলা ১১টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, অর্ঘ্য অমৃত মণ্ডলের সঙ্গে প্রতিভা সরকারের বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের তারিখ ছিল ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু ১৭ জানুয়ারি অর্ঘ্যের এক জেঠা (বাবার চাচাতো ভাই) মারা যাওয়ায় বিয়ে পিছিয়ে দিয়ে পারিবারিকভাবে তারিখ পরে ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়। মৃত জেঠার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাড়িতে আসছিলেন অর্ঘ্য। বাগ্দত্তা প্রতিভাও ছিলেন তাঁর সঙ্গে। ইচ্ছা ছিল, ৩১ জানুয়ারি শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষে সবাই বসে তাঁদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করবেন।
আরও পড়ুনবাগ্দত্তাকে নিয়ে ফেরার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসক নিহত, পরিবারে মাতম৩১ জানুয়ারি ২০২৫নিহত অর্ঘ্য সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সদরের চণ্ডীপুর গ্রামের অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল ও মিনতি রানী মণ্ডল দম্পতির ছেলে। অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর তারকানাথ বিদ্যাপীঠের ক্রীড়াশিক্ষক। অর্ঘ্য মা–বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামে।
বিপ্রজিৎ সরকার জানান, প্রতিভার মরদেহ গতকাল রাত ১০টার দিকে তালায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে দিবাগত রাত ১২টায় মরদেহ নেওয়া হয় গ্রামের বাড়ি কয়রা উপজেলার মঠবাড়িয়ে গ্রামে। আজ গ্রামের শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।