সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস আজ রোববার সকালে বিশ্বের ১২৪ নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। বায়ুদূষণে ঢাকার এ অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার।

প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।

আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে আইকিউ এয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুর মান ২০১। বায়ুর এ মানকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে ধরা হয়।

রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর মধ্যে যেসব এলাকায় বায়ুর মান মারাত্মক দূষিত, সেগুলোর মধ্যে আছে সাভারের হেমায়েতপুর (৩১০), ঢাকার মার্কিন দূতাবাস (২৫৩) এবং তেজগাঁওয়ের শান্তা ফোরাম (২১১)।

কোনো অঞ্চলে পরপর তিন দিন বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি থাকলে সেখানে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। ঢাকায় গত জানুয়ারিতে একাধিক দিন বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি হয়েছে।

আজ অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর বায়ুর মানও নাজুক। এর মধ্যে বায়ুর মান চট্টগ্রামে ১০৪, রাজশাহীতে ১৬৭ ও খুলনায় ১৬১।

সেই সতর্কবার্তায় ঢাকাবাসীর উদ্দেশে আইকিউ এয়ারের পরামর্শ, বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরও একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।

ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২ দশমিক ৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ বেশি।

গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে একটি দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী। দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ।

আরও পড়ুনঢাকায় বায়ুদূষণ কমার লক্ষণ নেই, জানুয়ারিতে ভয়াবহ ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বদলে যাওয়া বাংলা ভাষা

ফেব্রুয়ারি এলেই নিয়ম করে একুশ আসে। আর তার পিছু পিছু আসে মাতৃভাষা নিয়ে নতুন নতুন বয়ান। কেমন আছে আমাদের মাতৃভাষা, কী তার হালচাল? বছরের এগারো মাস কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে কাটিয়ে কেবল ফেব্রুয়ারিজুড়েই চলে এসব প্রশ্নের তত্ত্বতালাশ। চারদিকে রব ওঠে, সাইনবোর্ড বাংলা করো, উচ্চশিক্ষার বইগুলো বাংলা করো, প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে বাংলার একটি কোর্স বাধ্যতামূলক করো, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে বাংলা চর্চার খোঁজ লাগাও। ফেব্রুয়ারি শেষ হতে না হতেই এসব তোড়জোড়ে ভাটা পড়ে। টেলিভিশনের চ্যানেলগুলোতে ভাষা নিয়ে আবেগপ্রবণ বিজ্ঞাপনগুলো উধাও হতে থাকে। আবার ধুলা জমে শহীদ মিনারের সিঁড়িতে।

সিঁড়িগুলো অপেক্ষা করে আরেকটি ফেব্রুয়ারির। যেমন অপেক্ষা করেন ফুল ব্যবসায়ী। যেমন অপেক্ষা করেন কালো পাঞ্জাবি ও শাড়ির বিক্রেতা। যেমন অপেক্ষা করেন দীর্ঘ-ইকার দিয়ে ভুল বানানে শ্রদ্ধাঞ্জলি লেখা কম্পোজিটর।

কিন্তু লজ্জার মাথা খেয়ে প্রশ্নটি প্রতিবছরই ফিরে ফিরে আসে। কেমন আছে আমাদের মাতৃভাষা, কী তার হালচাল? জীবনের গতি আর ভাষার গতি কি তাল মিলিয়ে চলতে পারছে? সহজ হচ্ছে কি তার অবাধ যাতায়াত? এই যেমন ঢাকার রাস্তায় যানজটে আটকে থাকা স্থবির সময়ে কেমন রূপ পায় বিরক্তির ভাষা? একই রাস্তায়, একই সময়ে অনিয়মের ফেরে থমকে থাকা বিভিন্ন বাহনের চালকের ভাষা কী একই রকমভাবে প্রকাশ পায়? রিকশাওয়ালা, সিএনজিচালক, ট্রাকচালক, পাঠাওয়ের মোটরবাইক চালক, উবারচালক আর দামি প্রাইভেট কারের চালকের ভাষার ধরন কি একই রকম? স্থান আর সময় এক হলেও শ্রেণিচরিত্রভেদে ভাষা যে বদলে যায়, সেসব নিয়ে দিস্তা দিস্তা কথা বলেছেন সমাজ-ভাষাবিজ্ঞানীরা।

এমনকি একই ঘরে বয়সভেদেও বদলে যায় ভাষার বিন্যাস। এত দিন অন্তত সমাজের ভাষা বিষয়ে এমন সহজ বোধগম্য তত্ত্বই প্রচার করে গেছেন সমাজ-ভাষার গবেষকেরা। কিন্তু এই ডিজিটাল যন্ত্রপাতির নয়া দুনিয়ায় একেকটা প্রজন্মের নতুন নতুন নাম ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে সবাই কি সবার ভাষা ঠিক ঠিক বুঝতে পারছে?

সাহিত্যের ভাষায় কোন রীতি প্রয়োগ করা হবে—সাধু না চলিত, এ নিয়ে ইতিহাসে বিস্তর যুদ্ধ হয়ে গেছে। তারপর আমাদের দেশে টেলিভিশনের ভাষারীতি নিয়েও চলেছে তর্কযুদ্ধ। এখন চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাষা ব্যবহার নিয়ে চিন্তাপর্ব। যন্ত্র কিছু দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে এরই মধ্যে। যন্ত্রেরও রয়েছে পোষা তোতাপাখি। কারও জন্মদিনে বা মৃত্যু হলে সে বিলায় রেডিমেড শব্দ বা বাক্য। এইচবিডি মানে হ্যাপি বার্থ ডে, আরআইপি মানে রেস্ট ইন পিস, আরও আছে এলওএল মানে লাফ আউট লাউড। এসব কষ্ট করে টাইপ করতে না চাইলেও সমস্যা নেই। আছে বিচিত্র রঙিন ইমোজি আর মিম।

বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ফেসবুক। ফেসবুকের রয়েছে সাতটি রিঅ্যাকশন—লাইক, লাভ, কেয়ার, হাহা (হাসি), ওয়াও, স্যাড, অ্যাংরি। কিন্তু এর বাইরেও তো অসংখ্য অনুভূতি রয়ে যায়! হাহা হাসি না দিয়ে কেউ যদি মুচকি বা বাঁকা হাসি দিতে চায়! কেউ যদি অ্যাংরি না দিয়ে অভিমান প্রকাশ করতে চায়! অন্যদিকে ইমোজির ভুলভাল ব্যবহার নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ তো লেগেই আছে!

বাকি থাকে কমেন্ট অপশন। বাংলা টাইপ যে জানে না বা জানতে চায় না, সে লেখে রোমান হরফে হাস্যকর বাংলা। সেসব নিয়েও তৈরি হয় মিম আর টিকটক। আর রোমান হরফে বাংলা না লিখে এবার সরাসরি বাংলা বর্ণমালার অদ্ভুত ব্যবহার শুরু হয়েছে যেখানে ‘প্রিয়’ হয়ে যাচ্ছে ‘পিও’, ‘স্যরি’ হয়ে যাচ্ছে ‘ছঋ’।

কিন্তু তার চেয়েও এ শতাব্দীতে পৃথিবীজুড়ে বড় সংকট তৈরি হচ্ছে যোগাযোগের ভাষা নিয়ে। মায়েরা কি বুঝতে পারছেন সন্তানের টিকটকের ভাষা? কিংবা বাবারা কি মন দিয়ে শুনতে পারছেন র‍্যাপ সংগীতের ভাষারীতি? প্রতিদিন কি বদলে যাচ্ছে না সম্মানের ভাষা। স্নেহের ভাষা! পারস্পরিক বোঝাপড়া বা সহনশীলতার ভাষা! আবুল হাসানের ‘মাতৃভাষা’ কবিতার মতো, বেদনার ভাষা! বৈষম্যের ভাষা! যেমন বলেছিলেন তিনি, ‘আর পৃথিবীতে এখনো আমার মাতৃভাষা, ক্ষুধা!’ বিশ্বব্যাপী বদলেছে কি ক্ষুধার ভাষা?

ফারজানা সিদ্দিকা, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ