বোরো উৎপাদন যেন ঝুঁকিতে না পড়ে
Published: 9th, February 2025 GMT
কয়েক দফা বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে আমনের উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়েছে। শুল্ক কমিয়ে আমদানির অনুমোদন দেওয়ার পরও বাজারে চালের দাম আগের অবস্থায় ফেরানো যায়নি। যদিও বাস্তবে কতটা সংকট আর কতটা মিলমালিক ও বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সৃষ্ট সংকট, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েই গেছে। কেননা, বেসরকারি সংস্থা সিপিডির গবেষণা বলছে, কৃষক যে ধান ৩৩ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন, ভোক্তাকে সেই চাল ৬৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে, সরকার বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা ও তদারকি কৌশল এতটাই নাজুক যে সিন্ডিকেট করে যেকোনো পক্ষই বাজারে কারসাজি করতে সক্ষম। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারায় ধানের মতো প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সেদিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করাটা জরুরি। কেননা বোরোর উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে অবধারিতভাবে চালের বাজার আরও চড়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় এই ঝুঁকিটা আদৌ বুঝতে পারছে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। কেননা বোরো উৎপাদনের প্রধান একটি কেন্দ্র হলো সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল। আগাম বন্যা, অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাওরে ফসলহানির ঘটনা নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের বিপর্যয়ের পেছনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণও কম দায়ী নয়। কেননা, ফি বছরই ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের প্রকল্পগুলো সময়মতো শুরু হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হয় না। এবারও এর ব্যতিক্রম খুব একটা নেই।
এর মধ্যে আবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে ১৩টির মধ্যে ১১টি জলকপাট বিকল হয়ে রয়েছে। ফলে প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমির বোরোর আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। প্রথম আলোর ধর্মপাশা প্রতিনিধি সরেজমিনে জরাজীর্ণ জলকপাট দেখতে পেয়েছেন। স্থানীয় লোকজন জানান, কয়েক বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে জলকপাটগুলো মেরামত করা হচ্ছে। ফলে কিছুদিন না যেতেই সেগুলো বিকল হয়ে পড়ছে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, জলকপাটগুলো মেরামতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা মনে করি, জরুরি ভিত্তিতে জলকপাটগুলো মেরামত করা হোক। টেকসই জলকপাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক। কোনোভাবেই বোরো ধানের উৎপাদন যেন ঝুঁকিতে না পড়ে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে হিন্দুধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যকে অভিযোগপত্রের একটি কপি দিয়েছেন।
অভিযুক্ত আব্দুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তার পোস্টটির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা হয়।
আরো পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ফ্যাসিবাদমুক্ত নববর্ষ
৫ বছর পর কুবিতে নববর্ষ উদযাপন
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী (আব্দুর রহমান, আইন বিভাগ ১৮তম আবর্তন) লাগাতার সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটুক্তি করে যাচ্ছে। এর মধ্যে সোমবার (১৪ এপ্রিল) একটি পোস্টে সনাতন ধর্মকে ঘৃণিত ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখোনে ‘হিন্দুধর্ম। ইট'স রিকোয়াইর্স টু বি অ্যাগ্রেসিভলি রেপড, (গালি) ইন আ রুড ওয়ে। (গালি)।’ বলা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, এই বক্তব্য শুধু কুরুচিপূর্ণ নয়, বরং আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান এবং ঘৃণিত করে। এ ধরনের বক্তব্য কোনো সভ্য সমাজ বা শিক্ষাঙ্গনে মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বর্তমানে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞান ও সম্প্রীতির স্থান। এখানে এমন কোনো মত প্রকাশের সুযোগ থাকা উচিত নয়, যা অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে।
অভিযোগপত্রে তাদের দাবি, ওই শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘৃণিত কাজ না করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (১৪ এপ্রিল) এম এ হোসাইন নামের একটি পেইজে জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে জীবন্ত ছাগলকে পুড়িয়ে ফেলার একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেটার ক্যাপশন অপশনে লেখা ছিল ‘জনশ্রুতি আছে, পৃথিবীর নিকৃষ্ট ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। একটা নিরীহ জীবন্ত প্রাণীকে এভাবে আগুনে পুড়ে মারার অধিকার কি কোনো ধর্মে আছে?’
পরবর্তীতে স্ক্রিনশটটি আরো ছড়িয়ে পড়লে শেয়ারকৃত পোস্টটি ডিলিট করে ক্ষমা চেয়ে নতুন আরেকটি পোস্ট শেয়ার করেন। বর্তমানে অভিযুক্ত আবদুর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে রাখা হয়েছে।
আইন বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সজীব বিশ্বাস বলেন, “আব্দুর রহমান যেভাবে ফেসবুকে আমাদের ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করেছে, আমি তার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী কিভাবে একটা ধর্মকে নিয়ে এমনভাবে গালি দিতে পারে? আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলবো, বিগত বছরগুলাতে যেভাবে ধর্মকে অবমাননার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে, এবারো যেন তার ব্যতিক্রম না ঘটে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবদুর রহমান বলেন, “আমি আমার বক্তব্য প্রক্টর অফিসে দিয়েছি।”
আইন বিভাগের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. আলী মোর্শেদ কাজেম বলেন, “আমি এই বিষয়ে অবগত নই। ঘটনা সম্পূর্ণ না জেনে আমি তো কোন বক্তব্য দিতে পারছি না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা অভিযোগপত্রটি পেয়েছি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী যেহেতু আইন বিভাগের, সেহেতু আমরা ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি শৃংখলা কমিটির কাছে হস্তান্তর করবো।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমি অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ডেকে শোকজ করা হবে। তার লিখিত ব্যাখ্যা গ্রহণের পর নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী