সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

গাজীপুরে সাম্প্রতিক সময়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অনুসারী নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে একটি বিশেষ অভিযান শুরু করেছে যৌথবাহিনী।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে সারাদেশে একযোগে ওই অভিযান শুরু করে যৌথবাহিনী।

এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে এই যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

এর আগে গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের নাটক সাজিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ডেকে নিয়ে হত্যাচেষ্টা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অভিযোগ রয়েছে এ সময় তাদের সঙ্গে যুবলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২০ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এই বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ফয়সল হোসেন জানান, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর ব্যাপারে আজ রোববার প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মাহিম বলেন, আ ক ম মোজাম্মেল হকের ধীরাশ্রমের বাড়িতে লুটপাট হচ্ছে, এমন খবর দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হন কমপক্ষে ২০ জন।

এ দিকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি এবং সেগুলো জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। তাই অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করবে।

তিনি বলেন, লাইসেন্সধারী বেশিরভাগ অস্ত্র পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হলেও লুট হওয়া অস্ত্রের বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশে অস্ত্র প্রবেশ করানোর মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণে অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান ফের শুরু হবে।

আসিফ মাহমুদ বলেন, পরাজিত কোনো শক্তি যদি জনগণের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ অভিযানের নির্দেশনা দিয়েছে।

অপরদিকে হামলার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে গাজীপুর সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তাতে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি। হামলাকারী কাউকে ছাড়া হবে না, প্রতিটি হামলার জবাব দেওয়া হবে। যেসব পুলিশ রেসপন্স করতে দেরি করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

নাজমুল করিম খান বলেন, ‘আমি শুনেছি, আমার ওসি দুই ঘণ্টা পর আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তাকে সাসপেন্ড (বরখাস্ত) করা হবে। আমি বলতে চাই, যারা এই ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, তাদের পুলিশে চাকরি করতে দেওয়া যাবে না।’

বিএইচ

.

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: র ন ত কর ম মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙচুরের দায় সরকারের ওপরেই অনেকাংশে বর্তায়

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ২৬ নাগরিক। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে বাড়িটি ধ্বংস করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা-পরবর্তী একটি বিবৃতি দিয়ে এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই অনেকাংশে বর্তায়। এসব ঘটনার বিচার দাবি করেন তারা। 

গতকাল শুক্রবার দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৫ ফেব্রুয়ারি যেভাবে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িটি ক্রেন, বুলডোজার ব্যবহার করে ধূলিসাৎ করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে অন্য যেসব স্থাপনা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে ধ্বংস করা হয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা দেখে 

একটি সভ্য দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত, স্তম্ভিত ও লজ্জিত। এ ঘটনার আমরা বিচার চাই। 

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘এমন লজ্জাজনক ঘটনার নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর উপযুক্ত ভাষা আমাদের জানা নেই। ঘটনাটির আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর সম্পূর্ণ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানাতে চাই; কিন্তু কার কাছে জানাব? আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো হয় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, কিংবা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল; কিন্তু কেন? তাদের জনগণের কর ও অর্থে লালন-পালন করা হয় কি নীরব দর্শক হয়ে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্য? যখন তাদেরই নাকের ডগায় প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন তারা নীরব-নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালনের অর্থ কী? অপরাধের সহযোগী হওয়ার সমার্থক নয়?’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘কোনো ধরনের গণউত্তেজক সহিংসতা বা মব ভায়োলেন্স কেবল ফ্যাসিবাদের কর্মী-সমর্থক এবং তাদের আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকদের নাশকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টাকেই উৎসাহিত করবে। বিগত পতিত সরকার ও তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে নানা নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি তারা দেশে এখন আইনের শাসন নেই বলে দেশ-বিদেশে যে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, তার হাতও এতে শক্তিশালী হবে। তাই পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কোনো অসত্য ভাষণ বা উস্কানিমূলক উক্তিকে উসিলা করে এমন কোনো কাজ করা বা তাকে সমর্থন করা চলবে না, যাতে আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ইতোমধ্যে যা ঘটানো হয়েছে, সেসব ঘটনাকে আইনের আওতায় এনে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার করতে হবে।’

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরেই অনেকাংশে বর্তায়। সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা-পরবর্তী একটি বিবৃতি দিয়ে এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। যে কোনো দেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থান কিংবা স্থাপনা সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সেই দেশের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান, বাড়ি বা অন্য কোনো স্থাপনা– ওই স্থানে কারা কোন সময় বসবাস করেছেন বা কাদের নাম জড়িত, সেই নিরিখে বিচার্য নয়। মূল্যায়ন যে যেভাবেই করুক, তার ওপরে তার সুরক্ষার প্রশ্নটি নির্ভর করে না। এটা সভ্য সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।’ 

তারা আরও বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই এভাবে ঐতিহাসিক স্থান ও কীর্তিগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে সুরক্ষা করা হয়। অনেক নির্মম নির্দয় শাসকের বাসভবনও দর্শকরা তাই দেখতে পান। তাদের কীর্তি-অপকীর্তি সম্পর্কেও বহু বছর পরও মানুষ জানতে পারেন। আমরা তাই ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সবিস্তার ব্যাখ্যা দাবি করছি এবং এর সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবহেলাসহ যারা দায়ী, তাদের জবাবদিহি ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘৩২ নম্বর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাড়ি ভাঙার সঙ্গে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের শক্তি প্রদর্শনের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এটা এক ধরনের গণউত্তেজক সন্ত্রাসের প্রদর্শন বলেই জনগণের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, যা ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ভাবমূর্তিকেই ম্লান করে দেয়। এটা আমাদের গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, তারুণ্য আমাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের মূল শক্তি হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, সেই তরুণদের একাংশকে কোনো দেশি বা বিদেশি অপশক্তি বিপথে পরিচালিত করতে নেপথ্যে সক্রিয় রয়েছে কিনা– এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটিও আজ খতিয়ে দেখা খুবই জরুরি।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী, আনু মুহাম্মদ, খুশী কবির, পারভীন হাসান, ড. ইফতেখারুজ্জামান, শামসুল হুদা, সারা হোসেন, সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সুব্রত চৌধুরী, নুর খান, শাহনাজ হুদা, নোভা আহমেদ, জোবাইদা নাসরীন, মোহাম্মদ সেলিম হোসেন, শাহ-ই-মবিন জিন্নাহ, জাকির হোসেন, রেজাউল করিম চৌধুরী, মনীন্দ্র কুমার নাথ, সাঈদ আহমেদ, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আশরাফ আলী, শাহাদত আলম, রেজাউল হক, হানা শামস আহমেদ ও মুক্তাশ্রী চাকমা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে
  • গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক কর্মীকে গুলি
  • আজ থেকে সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’
  • সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু আজ
  • সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু
  • আজ থেকে সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’
  • সুপ্রিম কোর্টেও ম্যুরাল ভাঙার শঙ্কা, কয়েক স্তরের নিরাপত্তা
  • নৈরাজ্য করলে কঠোর ব্যবস্থা: প্রধান উপদেষ্টা
  • ভাঙচুরের দায় সরকারের ওপরেই অনেকাংশে বর্তায়