আম্মার ভয়ে প্রেম করিনি, এখন আম্মাই বলে, তুমি খুঁজে আনো
Published: 9th, February 2025 GMT
প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৫। ভালো চাকরি করি। পারিবারিক অবস্থাও ভালো। কিন্তু ইদানীং হতাশ হয়ে পড়ছি। কারণ, আমার বয়সী বন্ধুবান্ধব, কাজিন, প্রায় সবার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার হচ্ছে না। ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করার পর সব সময় ভেবেছি আগে ক্যারিয়ারটা দাঁড় করাই, তারপর বিয়ে করব। নিজের দায়িত্ব যদি নিতে না পারি, আরেকজনের দায়িত্ব নেব কীভাবে। ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে করতেই আসলে সময় চলে গেছে। এখন আর বিয়ের জন্য মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। বয়স ৩৫ শুনলেই মেয়েপক্ষ মনে করে ছেলের কোনো না কোনো সমস্যা আছে। হয়তো আগে বিয়ে হয়েছে, কিংবা অন্য কিছু।
সারা জীবন আম্মার ভয়ে প্রেম করতে পারিনি। এখন আম্মাই বলে, ‘তুমি খুঁজে আনো।’ আমি কোথা থেকে খুঁজে আনব? এখন তো আর সামনাসামনি বা অনলাইনে মেয়েদের সঙ্গে ফ্লার্ট করার বয়স নেই। বাধ্য হয়ে বন্ধুবান্ধব, অফিসের কলিগদেরও বলেছি, আমার জন্য মেয়ে দেখতে। কেউ কেউ চেষ্টা করছে। কিন্তু আশপাশের অধিকাংশ মানুষই কেন যেন ব্যাপারটাকে ‘ফান’ মনে করে। অনেকে টিটকারি দেয়। দেখা হলেই খোঁচা মেরে কথা বলে।
এ জন্য এখন আর পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে যেতে চাই না। আমি তো যাই-ই না, আম্মাও যেতে চান না। আমি বুঝি, আম্মাও আসলে কষ্ট পাচ্ছেন। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে তাঁকেও নানা রকম কথা শুনতে হয়।
সব মিলিয়ে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস একদম হারিয়ে ফেলেছি। কাজে মন দিতে পারি না। সবাইকে এড়িয়ে চলতে ইচ্ছা হয়। রাতে ঘুম হয় না। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকি। ফেসবুক, ইউটিউব, সিনেমা—কোনো কিছুই দেখতে ইচ্ছা করে না। খেতে ইচ্ছা করে না। বাসার মানুষজনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অকারণেই রাগ দেখাই। এমনও হয়, টানা এক সপ্তাহও বাসায় কিছু খাই না। কারণ, সবার সঙ্গে খেতে বসলেই বিয়ের আলাপ উঠবে।
দুনিয়ার সবকিছু অসহ্য লাগে। ইচ্ছা করে সব ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাই। আমি জানি না কার কাছে সাহায্য চাইব। কিংবা সাহায্য করার মতো আদৌ কেউ আছে কি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা
উত্তর: আপনার কষ্টকর সময়ের কথাগুলো নিজের ভেতরে আবদ্ধ করে না রেখে আমাদের কাছে লেখার জন্য ধন্যবাদ। এটি নিজের প্রতি যত্ন ও দায়িত্বশীলতারই প্রকাশ। আপনি বলেছেন, ‘ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করার পর সব সময় ভেবেছি আগে ক্যারিয়ারটা দাঁড় করাই, তারপর বিয়ে করব। নিজের দায়িত্ব যদি নিতে না পারি, আরেকজনের দায়িত্ব নেব কীভাবে।’ এই মুহূর্তে আপনার নিজের এই ভাবনার জন্য নিজেকে খানিকটা দোষী মনে হলেও আপনার ভাবনাটি কিন্তু অযৌক্তিক ছিল না। বিয়ে নিঃসন্দেহে একটি বড় দায়িত্ব। জীবনের বিশাল এক পরিবর্তনও বটে।
আমরা যখন কোনো একটি বাধা বা সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন আমরা আবেগীয়ভাবে কেমন বোধ করব, বা সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করব, তা মূলত নির্ভর করে নিজের সম্পর্কে আমাদের সামগ্রিক ধারণা এবং সামাজিক সহযোগিতার ওপর। সংকটের সময় নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা বা ধারণা আমাদেরকে আরও দুর্বল করে দেয়। সংকটকালীন সময়ে তাই নিজের প্রতি সদয় থাকা, নিজেকে মমতা মাখানো কথা বলা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, যখন কষ্ট হবে তখন গভীরভাবে কয়েকটি শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে আপনি নিজেকে বলতে পারেন, ‘এই মুহূর্তে আমি কষ্টে আছি, মানসিক চাপে আছি। এই সময়টা কেটে যাবে। আমি একা নই। আমাদের সবার জীবনেই দুঃখ থাকে, সমস্যা থাকে। আমি নিজের প্রতি সদয় থেকেই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে পারি। আমি ধৈর্য ধরতে পারি, আমি শক্তিশালী হতে পারি।’ গবেষণায় দেখা গেছে, নিজের প্রতি ইতিবাচক ও মমতাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মানসিক শক্তি জোগায় এবং সমস্যা সমাধানের জন্য মস্তিষ্ককে প্রস্তুত করে।
আপনার বয়স ৩৫ কিন্তু এখনো অবিবাহিত, নানা মানুষ নানা কথা বলছে, ফলে আপনি একধরনের সংকোচ ও লজ্জার অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। আপনি কি মূলত এই সংকোচ ও লজ্জা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই বিয়েকে গুরুত্ব দিচ্ছেন? নাকি জীবনের সুখ–দুঃখগুলোকে ভাগ করে নেওয়ার জন্য, জীবনকে উদ্যাপন করার জন্য একজন সঙ্গী প্রয়োজন বলেই বিয়েকে গুরুত্ব দিচ্ছেন? নিজেকে প্রশ্ন করুন। যদি প্রথমটি আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে বয়সকে বড় বাধা মনে হতে পারে। কিন্তু যদি দ্বিতীয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে বয়স বড় কোনো বাধা হওয়ার কথা নয়। যেকোনো বয়সেই মানুষ পছন্দের একজন মানুষের সঙ্গে জীবন শুরু করতে পারে।
আপনি বিয়ের ব্যাপারে সহকর্মী ও বন্ধুদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন, এটি খুব ইতিবাচক একটি বিষয়। কেননা আমাদের জীবনে যা কিছু প্রয়োজন, তা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে করা আমাদেরই দায়িত্ব। আর সামাজিকভাবে বা কিছু বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে আপনি যে বিদ্রূপের মুখোমুখি হচ্ছেন, তা-ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সামলে নেওয়া প্রয়োজন। নিজেকে গুটিয়ে না রেখে প্রকাশ করা প্রয়োজন। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অন্য কারও মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন ও অনধিকার চর্চা মনে হলে আমরা সরাসরি তা বলে দিতে পারি। নিজের প্রতি সদয় ও শ্রদ্ধাশীল থাকা, আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রকাশ করতে পারা, সমস্যা সমাধান করা, অন্যের যেকোনো আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারার জন্য আমাদের মানসিক ও আবেগীয় বিকাশ এবং যোগাযোগের দক্ষতা প্রয়োজন হয়। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ বা আত্ম উন্নয়নমূলক বই সে ক্ষেত্রে সহযোগী ভূমিকা পালন করতে পারে।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই-মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
ই-মেইল ঠিকানা: [email protected]
(সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা,
প্রথম আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’), ফেসবুক পেজ: fb.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য় র জন য আম দ র আপন র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
মুখোশ পরে এসে মোটিফে আগুন দেয় দুর্বৃত্ত, ডিউটিতে ছিল না কেউ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এবারের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য বানানো দুটি মোটিফে আগুন দেওয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গেছে। মোটিফ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে মুখে মুখোশ লাগানো কালো জামা পরিহিত অজ্ঞাত যুবককে প্রাচীর টপকে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দিতে দেখা গেছে। এ সময় মোটিফের আশপাশে নিরাপত্তারক্ষী, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য অথবা পুলিশের কেউ উপস্থিত ছিল না।
শনিবার ভোর চারটা ৪৪ মিনিট থেকে ৪টা ৫০ মিনিটের মধ্যে আগুন লাগিয়ে বের হয়ে যায় অপরিচিত সেই যুবক। সিসিটিভি ফুটেজ এবং সরেজমিন ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।
আনন্দ শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত দুই সপ্তাহ থেকে চারটি মোটিফ তৈরির কাজ চলছিল চারুকলা জয়নুল গ্যালারি সংলগ্ন মাঠে। একটি প্যান্ডেলে পাশাপাশি চারটি মোটিফ তৈরি করছিলেন শিল্পীরা।
এরমধ্যে শেখ হাসিনার ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’র মোটিফটিকে লক্ষ্য করেই আগুন দেওয়া হয়। সেই মোটিফ পুরোপুরি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তার পাশে থাকা শান্তির প্রতীক ‘শান্তির পায়রা’ অর্ধেক জ্বলে গেছে। তবে পাশে মাছের মোটিফে ফয়েল পেপার থাকায় তাতে আগুন লাগেনি এবং বাঘের মোটিফ অক্ষত রয়েছে।
মোটিফ তৈরির কাজে থাকা আল আমিন সমকালকে বলেন, আমরা রাত দশটার দিকে কালকের মত কাজ শেষ করে চলে যাই। আমরা থাকার সময় আশেপাশে মানুষের চলাচল ছিল। তবে এমন ঘটনা ঘটবে কেউ আশা করেনি। জানলে হয়ত নিরাপত্তা বেশি থাকতো। তিনি জানান, গত ১৬-১৭ বছর থেকে তিনি মোটিফের কাজটি করেন, তবে কখনও এমন পরিস্থিতি হয়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, প্যান্ডেলে টানানো ত্রিপল পুড়ে গেছে। তবে আবার সেটি লাগানোর কাজ চলছে। শিল্পীরা পুনরায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চারুকলা অনুষদের অফিস সহায়ক আনোয়ার বলেন, আমাদের তিনজন নিরাপত্তারক্ষী। সবাই সারাদিন কাজে ব্যস্ত ছিল। সারাদিন কাজ করায় সবাই ক্লান্ত ছিল। তখন তো ভোর চারটা। অনেকে ঘুমিয়ে পড়ছিল, কেউ কেউ নামাজে গিয়েছিল। অর্থাৎ আশেপাশে কেউ ছিল না। এই সুযোগ কাজে লাগায় তারা।
জানা গেছে, চারুকলার দায়িত্বে পুলিশরা ছিল। তবে তারা প্রবেশ গেটের পাশে ছিল। মোটিফের পাশে ছিল না। অন্যদিকে প্রক্টরিয়াল টিমের কেউই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
আনন্দ শোভাযাত্রা কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আড়াই লাখ টাকা আগাম বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরমধ্যে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, শৃঙ্খলা উপকমিটি, পুলিশের সঙ্গে মিটিংয়ের আপ্যায়ন বাবদ ৫০ হাজার টাকা, প্রক্টরিয়াল টিম এবং প্রক্টর অফিসের খরচ বাবদ ৬০ হাজার টাকা, পহেলা বৈশাখের আপ্যায়ন বাবদ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে মোটিফের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় গুরুত্ব দেয়নি কেউ।
এ দিকে সিসিটিভি ফুটেজের কথা জানিয়ে শনিবার দুপুরে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, কালো টি-শার্ট, ব্রাউন প্যান্ট, কালো স্যান্ডেল পড়া ও পিছনে চুলে ঝুঁটি করা একটা ছেলে চারুকলার তিন নম্বর গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং আগুন দিয়ে একইপথে ছবির হাটের দিকে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, প্রবেশ করে প্রথমে সে মোটিফের গায়ে লিকুইড ঢেলে দেয়। তারপর সে পর্দার আড়ালে গিয়ে লাইটারে আগুন জ্বালিয়ে পুনরায় ফায়ার করেছে।
প্রক্টর বলেন, গত দুই সপ্তাহ থেকে লাগাতার কাজ করছেন শিল্পীরা। তারা ক্লান্ত। এটা শৈল্পিক কাজ। চাইলেই মুহূর্তে তৈরি করা সম্ভব নয়। আমরা শিল্পীদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি, তারা যদি এটাকে পুনর্নির্মাণ করতে পারেন।
এ দিকে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ মনে করেন, ফ্যাসিবাদী পক্ষের কেউ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, খুব সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের পক্ষের একটা শক্তি এখানে ঘাপটি দিয়ে আছে। তারাই এই কাজ করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছি। একটা সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং আইনিভাবে শক্তহাতে দেখা হবে।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনা অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান। সদস্য হিসেবে রয়েছেন আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক হোসেন কামাল তুষার ও বিজ্ঞান অনুষদের সহকারী প্রক্টর ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী এবং সদস্যসচিব আছেন চারুকলা অনুষদের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল প্রাং।