গত কয়েক দিন ধরে আমেরিকানরা দেখেছে, প্রযুক্তি খাতের একজন অনির্বাচিত বিলিয়নেয়ার ফেডারেল সরকারের বড় অংশ ধ্বংস করছে। ইলন মাস্ক বড়াই করে বলেছেন, তিনি জীবন রক্ষাকারী ইউএসএআইডি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার ব্যাপারে ‘খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছেন। 

স্থায়ী মার্কিন মালিকানার অধীনে গাজার বসতি উচ্ছেদ করা, বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ হিসেবে পুনর্নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে এই সম্মান ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং গাজা ‘শুধু পরিষ্কার’ করার জন্য তার প্রস্তাবের পক্ষে গিয়েছিল। এটি এতটাই বিস্ময়কর ছিল, বেশ কয়েক দিনের মধ্যে দেশ-বিদেশে তা মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে পড়েছিল। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে কিছু নতুন ধাক্কা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এটি আচার হয়ে উঠেছে।

তাই ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার অভ্যন্তরীণ সমালোচনা মূলত মার্কিন মালিকানা কার্যকর করতে গাজায় মার্কিন সেনা মোতায়েন করার পরামর্শের ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ করে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, এটি ধারণা হিসেবে মন্দ এবং তা মার্কিনদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এ সময় তিনি শুধু ১৯৮৩ সালে হিজবুল্লাহ বোমায় নিহত ২৪১ মার্কিন মেরিনের কথা মনে করিয়ে দেন। বারাক ওবামার হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের প্রধান রহম ইমানুয়েল এই সপ্তাহে আমাকে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গাজা দখলের মধ্য দিয়ে বৈরুত বিপর্যয় এবং ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণের ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ উভয়েরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এটি ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টান্ত’। প্রকৃতপক্ষে, এটি ‘ইরাক ও লেবানন’-এর চেয়ে কঠিন কিছু হবে। অথচ ট্রাম্পের কাছে প্রত্যাশা ছিল,  মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ থেকে মার্কিনিদের বের করে আনা, তাদের পুরোনো ও তিক্ত যুদ্ধে নিমজ্জিত করা নয়।

অন্যরা সময়ের বিবেচনায় ট্রাম্পকে দোষ দিয়েছেন। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রক্রিয়াটিকে স্থগিত করেছিলেন বটে, তবে এতটা অস্থিতিশীল করেননি। প্রায় ৫০০ দিন ধরে গাজায় বন্দি থাকা ইসরায়েলি পরিবারগুলো এখন আশঙ্কা করছে, হামাস জিম্মিদের মুক্তি বা যুদ্ধবিরতি পালন চালিয়ে যাওয়ার সব উৎসাহ হারিয়েছে। যেখানে চূড়ান্ত পরিকল্পনা গাজাবাসীকে নির্মূল করা এবং গাজাকে মার্কিন মালিকানাধীন সৈকত রিসোর্টে পরিণত করা, সেখানে কেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তির সঙ্গে লেগে থাকবে?

ট্রাম্প গাজাকে পাইকারিভাবে মার্কিনিদের দখল নেওয়ার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে সৌদি আরবকে ইসরায়েলের সঙ্গে এমন শর্তে একটি চুক্তি করতেও চাপ দেন, যা দেশটি সেই দুঃস্বপ্নের সম্ভাবনা এড়াতে আগেই প্রত্যাখ্যান করত। শর্তটি হলো, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ছিনিয়ে নেওয়া। এটিকে ট্রাম্পের কূটনৈতিক অগ্রগতির পুরস্কার হিসেবে দেখেছিলেন। এই অঞ্চল নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ছিল। মনে করুন, কীভাবে তিনি ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।

অন্যথায়, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলের জন্য মার্কিন প্রশাসন অনুমোদন দেবে। এটি ছিল একটি হুমকি, যা ঘটনাক্রমে ট্রাম্পের হাতে পুনরুজ্জীবিত হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে। এই সপ্তাহে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি আগামী মাসে পশ্চিম তীরের ভবিষ্যতের বিষয়ে তার চিন্তাভাবনা জানাবেন। এসব বিশ্লেষণ ও সমালোচনা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এখানে তাৎপর্যবহ ও বড় একটি বিষয় উঠে আসেনি। তাড়াহুড়া করে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে বড় ভুলটি এড়িয়ে যায়। এটি শুধু আরেকটি পররাষ্ট্রনীতির প্রস্তাব নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশকে জাতি নির্মূলের মাধ্যমে ৬ হাজার মাইল দূরে অন্য মানুষের জমি চুরি করা এবং একটি লাভজনক রিয়েল এস্টেট সুযোগের জন্য কাজটি করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনিরা অন্য দেশে ‘স্থানান্তরিত’ হওয়ার সম্ভাবনা দেখে আনন্দিত হবেন এবং সম্ভবত কিছু লোক ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং হামাসের নিপীড়নের কারণে হতাশ হয়ে বেরিয়ে আসার সুযোগটি লুফে নেবেন। কিন্তু অনেকেই তাতে সাড়া দেবে না। এ জমির সঙ্গে তাদের যুক্ততা রয়েছে, যা দূরের একজনের প্রতিশ্রুতি বদৌলতে বিক্রি হতে পারে না।
 
ইহুদিদের  উগান্ডা থেকে মাদাগাস্কার, আলাস্কা থেকে রাশিয়ার এক কোণ দেওয়ার জন্য তাদেরও বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল। কোনোটি কখনও বিশেষ আকর্ষণ করতে পারেনি। কারণ, তারা শুধু একটি জায়গা নিজেদের পূর্বপুরুষের জন্মভূমি হিসেবে বিবেচনা করেছিল। ঠিক ফিলিস্তিনিরাও এসব ছোট ছোট ভূমিকে একইভাবে দেখে। এটাই উভয় জাতির জন্য ট্র্যাজেডি।

দু’পক্ষই যে কোনো উপায়ে সেই জমি ভাগ করে নেওয়াটা কল্যাণকর হবে। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিও তাদের উচ্ছেদ করতে পারেন না।

জোনাথন ফ্রিডল্যান্ড
গার্ডিয়ানের কলাম লেখক;
দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বল ছ ন র জন য ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিও বার্গাস য়োসা আর নেই

নোবেলজয়ী কালজয়ী সাহিত্যিক মারিও বার্গাস য়োসা আর নেই। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার রাজধানী লিমায় ৮৯ বছর বয়সে মারা যান পেরুর এই লেখক। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। নোবেলজয়ী এই সাহিত্যিকের প্রয়াণের মধ্য দিয়ে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের সোনালি যুগের প্রজন্মের অবসান হলো।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে য়োসার বড় ছেলে আলভারো বার্গাস য়োসা লেখেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের বাবা মারিও বার্গাস য়োসা স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন। পরিবারের সদস্যরা এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন।’ এক্সে পোস্ট করা এ ঘোষণায় সই করেছেন আলভারোর দুই সহোদর গোনসালো ও মরগানা বার্গাস য়োসা।

১৯৩৬ সালে দক্ষিণ পেরুর অ্যারিকুইপায় মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে মারিও বার্গাস য়োসার জন্ম। ২০১০ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত য়োসা লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠ লেখকদের একজন। স্প্যানিশ ভাষার এই ঔপন্যাসিক স্পেনেরও নাগরিক।

১৯৬০ ও ’৭০–এর দশকে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের বিস্ময়কর উত্থানের সময়কার কালজয়ী লেখকদের একজন য়োসা। ওই সময়ের কালজয়ী সাহিত্যিকদের মধ্যে রয়েছেন কলম্বিয়ার গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস ও আর্জেন্টিনার হুলিও কোর্তাসার।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে য়োসার স্বাস্থ্যের অবনতির খবর ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। গত অক্টোবরে তাঁর ছেলে আলভারো বলেন, তাঁর বয়স ৯০ বছর ছুঁই ছুঁই। এই বয়সে এসে সবারই কাজের মাত্রা কিছুটা কমাতে হবে।

নোবেলজয়ী এই সাহিত্যিকের মৃত্যুতে সোমবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে পেরু। এ সময় সরকারি ভবন ও স্থাপনায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

য়োসার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য টাইম অব দ্য হিরো’, ‘আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্টরাইটার’, ‘দ্য গ্রিন হাউস’, ‘ডেথ ইন দ্য আন্দিজ’, ‘দ্য ওয়ার অব দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘দ্য ফিস্ট অব দ্য গোট’। প্রায় ৩০টি ভাষায় তাঁর লেখা অনূদিত হয়েছে।

লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের সোনালি যুগের লেখক মারিও বার্গাস য়োসা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওয়াক্‌ফ আইনের প্রতিবাদ কেন সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ নিল মুর্শিদাবাদে
  • মুসা (আ.)-এর বিয়ের শর্ত
  • মারা গেছেন অভিনেত্রী গুলশান আরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হবে দাফন
  • যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেলেন গুলশান আরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হবে দাফন
  • যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেলেন গুলশান আরা, দাফন হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
  • যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন অভিনেত্রী গুলশান আরা, দাফন হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
  • ব্যাচেলর পয়েন্টের ‘পলি চেয়ারম্যান’ খ্যাত গুলশান আরা মারা গেছেন
  • ‘ছবি তোলার নাম করে একজন প্রেম নিবেদন করে বসলেন’
  • লক্ষ্মীপুরে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু
  • নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিও বার্গাস য়োসা আর নেই