Samakal:
2025-04-13@03:18:02 GMT

কৃষক অবহেলিত কেন?

Published: 9th, February 2025 GMT

কৃষক অবহেলিত কেন?

দীর্ঘকাল ধরে কৃষকসমাজ অবহেলিত। তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদিত হয়, কিন্তু রাষ্ট্র তাদের যথাযথ মূল্য ও স্বীকৃতি দেয় না। অনেক কৃষক এখনও আধুনিক প্রযুক্তি, ভালো বীমা এবং সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত।

সরকার কিছু উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিলেও মূল সমস্যাগুলো এখনও রয়ে গেছে। কৃষকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকরী সহায়তা, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং সঠিক মনোযোগ তাদের নাজুক অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে। তাদের স্বার্থরক্ষা এবং তাদের উন্নয়ন অবশ্যই দেশের উন্নতির জন্য অপরিহার্য। তারা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, কিন্তু তাদের পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ এখনও নেওয়া হয়নি। আমাদের দেশে কৃষকদের যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো ঋণের বোঝা, মূল্যহীন ফসলের দাম, অভ্যন্তরীণ বাজারে তাদের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির অভাব, প্রশিক্ষণের স্বল্পতা এবং দুর্বল বীমা ব্যবস্থা ইত্যাদি। সরকার ভর্তুকি মূল্যে সার, কীটনাশক ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সরবরাহ, কৃষি তথ্যসেবা এবং সেচ ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়ে তাদের জন্য কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করছে। এই উদ্যোগগুলো আরও উন্নত এবং ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে কৃষকরা প্রকৃত সুবিধা পান।

একই সঙ্গে কৃষকদের সংগঠিত করা, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই জরুরি। প্রয়োজন কৃষকদের জন্য আরও সমন্বিত পরিকল্পনা এবং তাদের জীবিকার উন্নয়নের জন্য প্রকৃত নীতি গ্রহণ করতে হবে। কৃষি খাতের প্রতিটি স্তরে প্রয়োগযোগ্য সঠিক নীতি এবং সমর্থন কৃষককে তাদের অবহেলা থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে।

দেশের মানুষকে কৃষকদের প্রতি আরও সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। কারণ তারাই আমাদের খাবার সরবরাহের প্রধান অবলম্বন। কৃষকদের প্রতি অবহেলা এবং তাদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। শুধু সরকারি নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের সবারই এই সমস্যার প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। কৃষকদের সঠিক মূল্য ও সম্মান দেওয়া, তাদের জীবিকা নিশ্চিত করা এবং তাদের খাদ্য নিরাপত্তা ঠিক রাখতে বড় ধরনের পরিবর্তন দরকার।

প্রথমত, কৃষির আধুনিকীকরণ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। অনেক কৃষক এখনও ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন, যা তাদের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। আধুনিক প্রযুক্তির প্রবর্তন, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার কৃষকদের জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে। এগুলোর উপযোগিতা এবং ব্যবহার সবার কাছে নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। ঋণের চাপ ও বঞ্চনা, অস্বচ্ছ কৃষিবাজার, প্রকৃত দামে ফসল বিক্রি করতে না পারা– এই সমস্যাগুলোর সমাধান ছাড়া তাদের জীবনমান উন্নত করা সম্ভব নয়। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি, বেসরকারি খাতেরও এই বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত। এ ছাড়া কৃষকদের জন্য স্থায়ী সুদহীন ঋণ, অর্থনৈতিক সুরক্ষা এবং সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা জরুরি।

তৃতীয়ত, একটি কার্যকর এবং স্বচ্ছ কৃষিবাজার ব্যবস্থা তৈরি করা দরকার। এখনও অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাযন না, যেহেতু মধ্যস্বত্বভোগীরা অধিকাংশ লাভ নিয়ে যায়। ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে আধুনিক বাজার ব্যবস্থা, সরাসরি কৃষক-বাজার লিঙ্ক এবং সরবরাহ চেইন উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া, কৃষকদের সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং কৃষি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোও গুরুত্বপূর্ণ। কৃষক পরিবারের সদস্যদের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা তাদের উন্নয়নে সহায়ক হবে।

তবে, সব সমস্যার মূলে রয়েছে কৃষি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন এবং কৃষকদের উন্নতির জন্য সঠিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা। একমাত্র তখনই তারা তাদের মেধা ও পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পাবেন এবং তারা দেশের উন্নয়নে সঠিকভাবে অবদান রাখতে পারবেন।

আক্তার মনি
শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
aktermonia031@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর দ র জন য ব যবস থ অবহ ল সমস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি মুছে দিল দুর্বৃত্তরা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সংলগ্ন ছাত্র আন্দোলন চত্বরে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ‘পাটাতন’ অঙ্কিত গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংবলিত গ্রাফিতি রাতের কোনো এক সময় মুছে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার রাতেও গ্রাফিতিগুলো রঙিন ছিল। রাতের কোনো এক সময় গ্রাফিতির ওপর কালো রঙের স্প্রে দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে।

পাটাতনের সাধারণ সম্পাদক সায়েম মোহাইমিন জানান, গণহত্যার ইতিহাসকে যদি ভুলে যাওয়া হয়, তাহলে গণহত্যা বারবার হবে। তাই পাটাতন থেকে জুলাইয়ের শহীদদের স্মৃতিকে গ্রাফিতি আকারে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছেন তারা। বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন চত্বর থেকেই এ আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়েছিল, বাংলা ব্লকেড এখান থেকেই করা হয়। এখানে এমন ঘৃণ্য কাজ করা কেবল গণহত্যার দোসরদের দ্বারাই সম্ভব। এ ধরনের কাজের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। 
প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন তিনি। সেই সঙ্গে জুলাইয়ের স্মৃতিতে ক্যাম্পাসে একটি ‘স্মৃতি মিনার’ তৈরি করতে অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, ‘গ্রাফিতি মুছে ফেলার মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসররা জুলাইকে মুছতে চায়, ছাত্র আন্দোলন চত্বরকে মুছতে চায়, তারা জানে না– যা কিছু রক্ত দিয়া লেখা হয়, তা মুছা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, পাশাপাশি জুলাইকে বাঁচিয়ে রাখতে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস রাখতে চাই।’

কুবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভর ভাষ্য, গণআন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে যৌক্তিক দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তারা। এ আন্দোলনে অনেকে শহীদ হয়েছেন। তাদের স্মৃতিতে গ্রাফিতি অঙ্কনের জন্য ‘পাটাতন’ সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। ছাত্রদলও এমন কিছু করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে যারা এগুলো মুছে দিতে চাইছে, হয়তো তারা ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ কিংবা প্রশাসনে থাকা স্বৈরাচারের দোসর। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, স্বৈরাচার এখনও বিদ্যমান।

কুবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইউসুফ ইসলাহী বলেন, ‘পাটাতন যে গ্রাফিতি অঙ্কন করেছিল, সেগুলো যারাই মুছে দিয়েছে, তারা ফ্যাসিস্টের পদলেহী বলেই আমরা মনে করি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।’

সহকারী প্রক্টর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ জানান, প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ ও দাবি এলে হয়তো প্রশাসন আমলে নেবে। গণআন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাই এর স্মৃতি সংরক্ষণে দাবি-দাওয়া আমলে নিয়ে প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিমের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আর জুলাই স্মৃতি মিনার করার ব্যাপারে রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত আবেদন করলে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অবিরাম কাজ করেও যারা কোনো নাম-দাম পান না
  • চেন্নাই প্লে’অফ খেলবে, দাবি ব্যাটিং কোচের
  • এখনও পুরনো যেসব রীতিতে চৈত্রসংক্রান্তি পালন করেন রংপুরের মানুষ
  • এখনও পুরনো রীতিতে চৈত্রসংক্রান্তি পালন করেন রংপুরের মানুষ
  • রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ থামলেও প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী
  • গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি মুছে দিল দুর্বৃত্তরা
  • বামপন্থার পুনর্জাগরণ হচ্ছে না কেন
  • খুলনা ওয়াসা: প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ 
  • লালগালিচা দেখে চটে গেলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা