মন্ত্রিসভার আকার বেঁধে দিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
Published: 9th, February 2025 GMT
নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রিসভার আকার বেঁধে দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এতে সর্বোচ্চ ২৩ মন্ত্রী এবং ১২ প্রতিমন্ত্রী দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যমান ৪৩ মন্ত্রণালয় ও ৬১ বিভাগকে ২৫ মন্ত্রণালয় ও ৪০ বিভাগে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছে এই কমিশন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর হাতে কোন কোন মন্ত্রণালয় থাকবে, তাও নির্দিষ্ট করা হয়েছে প্রস্তাবে।
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ এর আগে প্রকাশ করা হলেও গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার হাতে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তুলে দেওয়া হয়। পরে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত সুপারিশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ মন্ত্রণালয় হবে ২৭টি। এতে দু’জন টেকনোক্র্যাটসহ মন্ত্রী হবেন ২৩ জন। প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হবেন ১২ জন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব একজন, মুখ্য সচিব ১৭ জন ও সচিব থাকবেন ৪২ জন। একাধিক বিভাগ সংবলিত মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়া এবং সমন্বয়ের জন্য একজন মুখ্য সচিব থাকবেন।
রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের আপন বিভাগ ও জনবিভাগ থাকবে রাষ্ট্রপতির অধীনে। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একীভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি একজন প্রতিমন্ত্রী রাখার ব্যাপারে প্রস্তাব করেছে কমিশন। এ ছাড়া অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোতে একজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। বাকি মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলোতে একজন মন্ত্রী থাকবেন।
পাঁচ গুচ্ছে থাকবে ৩৫টি মন্ত্রণালয়
মন্ত্রণালয়গুলোকে সমপ্রকৃতির পাঁচটি গুচ্ছে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিধিবদ্ধ প্রশাসনে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, ভূমি, পার্বত্য চট্টগ্রাম, তথ্য, আইন, বিচার ও সংসদ, পররাষ্ট্র এবং খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্যে থাকবে অর্থ, পরিকল্পনা, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভৌত অবকাঠামো ও যোগাযোগে থাকবে যোগাযোগ, নৌপরিবহন, অসামরিক বিমান চলাচল,
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি, গণপূর্ত ও নগরায়ণ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। কৃষি ও পরিবেশে– কৃষি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, মৎস্য ও পশুসম্পদ, পানিসম্পদ এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়নে– শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি, ধর্ম, সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু এবং শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়।
নারীদের দেখভালে সব মন্ত্রণালয়ে নারী কর্মকর্তা
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে এখন প্রচুরসংখ্যক নারী কর্মরত রয়েছেন। কমিশন মনে করে, প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও তার অধীন অফিসে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে তদারকির জন্য একজন নারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। অবদলিযোগ্য পদে নারীদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পুলিশের কাছে মামলা বা অভিযোগ করার ব্যাপারে নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। এ সমস্যা সমাধানে প্রতিটি থানায় নারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া উচিত। জেলা মহিলা অধিদপ্তরে জনবল বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়।
জনপ্রশাসন সংস্কারে স্থায়ী কমিশন
স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এই স্থায়ী কমিশনের প্রাথমিক দায়িত্ব হবে সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, সংস্কার বাস্তবায়ন প্রস্তাব সরকারের কাছে উপস্থাপন এবং তা বাস্তবায়নে সরকারকে ক্রমাগত কারিগরি সহায়তা দেওয়া। এ লক্ষ্যে স্থায়ী সংস্কার কমিশন প্রথমেই সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে তা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে। দ্বিতীয়ত, সময় স্বল্পতার কারণে এই কমিশন যেসব সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রণয়ন করতে পারেনি, সেগুলো এবং অন্যান্য নতুন নতুন উদ্ভাবনী সংস্কার নিয়ে প্রস্তাবিত স্থায়ী সংস্কার কমিশন কাজ করতে পারে। সরকারি বিভাগের/দপ্তরের জনবলের যৌক্তিকীকরণ এবং সরঞ্জামের তালিকা হালনাগাদ করা দীর্ঘদিনের মুলতবি বা অনিষ্পন্ন কাজ। সরকারি বিভাগ ও দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি করপোরেশন ও কোম্পানির পুনর্গঠনসহ সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বা কাঠামোগত সংস্কার; যেমন বিলুপ্তি, একত্রীকরণ, বেসরকারীকরণ নিয়েও প্রস্তাবিত স্থায়ী সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন কাজ করতে পারে।
এই কমিশন পাঁচ কমিশনার নিয়ে গঠিত হতে পারে, তাদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রস্তাবিত এই কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির পদমর্যাদার, চারজন কমিশনার হবেন সরকারের মুখ্য সচিবের পদমর্যাদার।
প্লট বরাদ্দ ও শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা কমানোর সুপারিশ
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রেখে গণভোট চালুর প্রস্তাব করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তাদের প্রস্তাবে স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের ভোট, বাজেটের ৩০ শতাংশ স্থানীয় সরকারের জন্য বরাদ্দ, বিতর্কিত সংসদ সদস্যের প্রত্যাহারের বিধান এবং বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার হওয়ার সুপারিশ রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষমতা ইসির হাত থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন আপত্তি জানালেও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবে সুপারিশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে বিদ্যমান শর্ত শিথিল করে ১০ শতাংশ ১০ জেলা এবং ৫ শতাংশ উপজেলা/থানায় দলের অফিস এবং ন্যূনতম ৫ হাজার সদস্য থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের মেয়াদকালে কমিশনারদের দায়িত্বে অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগ উঠলে তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে সুরাহার চলমান বিধান কার্যকর করার কথাও বলা হয়েছে। পাশাপাশি চলমান আসনভিত্তিক নির্বাচনের বদলে আনুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হলেও কোনো সুপারিশ করা হয়নি। সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়ে সুপারিশ করা থেকে তারা বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি রাজনীতিবিদদের ওপর ছেড়ে দেওয়াই যৌক্তিক বলে কমিশন মনে করছে।
সংসদের আগে স্থানীয় সরকারের ভোট আয়োজনের সুপারিশ করে কমিশন বলেছে, পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে পরিচালিত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৫ শতাংশই মনে করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া উচিত।
গণভোট চালুর সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়। তবে পঞ্চদশ সংশোধনী মামলার রায়ে আদালত গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনেন। তবে আদালতের রায়ে গণভোটের বিধানটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিরে আসা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই গণভোটের বিধানটি আগামী সংসদে পাসের সুপারিশ করা হচ্ছে।
নির্বাচিত প্রতিনিধিকে মেয়াদ পূরণের আগে প্রত্যাহারের বিধান চালুর সুপারিশ করে বলা হয়েছে, রিকল বা প্রতিনিধি প্রত্যাহারের মাধ্যমে কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা নির্ধারিত সংখ্যক স্বাক্ষরের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে পদচ্যুত করার জন্য পুনর্নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কমিশনের সুপারিশ ইসির মাধ্যমে একজন নতুন জনপ্রতিনিধি নিয়োগ বা পুনর্নির্বাচন।
জাতীয় নির্বাচনে ‘না ভোট’ ফের চালুর প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, ‘না ভোট’ নির্বাচনে যদি সর্বোচ্চ ভোট পায়, তাহলে সেই নির্বাচন বাতিল করে আবার নির্বাচনের বিধান করা। সে ক্ষেত্রে বাতিল নির্বাচনের কোনো প্রার্থী নতুন করে আর প্রার্থী হতে পারবেন না– এমন বিধান রাখা।
গত ১৫ জানুয়ারি সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়ে। সেদিন কমিশনগুলোর প্রধানরা প্রধান উপদেষ্টা ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র র স প র শ কর ন মন ত র মন ত র র ত মন ত র সরক র র র জন য রপত র
এছাড়াও পড়ুন:
‘লক্ষ্মীসোনা’ ৮ কোটি পার, পাঁচ লাখের বেশি লাইক
হৃদয় খানের গাওয়া ও সুরে ‘লক্ষ্মীসোনা’ গানটি ব্যবহার হয় ‘যদি একদিন’ সিনেমায়। গানে বাবা-মেয়ের ভালোবাসা, মান-অভিমান ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গানটি প্রকাশের পরপরই দর্শক হৃদয় স্পর্শ করে। আস্তে আস্তে শ্রোতাপ্রিয়তা বাড়ে এই গানের। ছয় বছর আগের সেই গানটি নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ইউটিউবে এই গানের ভিউ ৮০ মিলিয়ন বা ৮ কোটি পার করেছে। গানটির শিল্পী, গীতিকার-সুরকার তাই বেশ উচ্ছ্বসিত।
ইউটিউবে ‘লক্ষ্মীসোনা’ গানের মন্তব্যের ঘরে ১৯ হাজারের বেশি মতামত এসেছে। ছয় বছরে পাঁচ লাখের বেশি লাইক পড়েছে, একটিও ডিজলাইক নেই। মোনায়েম খান নামের একজন লিখেছেন, ‘হৃদয় খান আসলে ম্যাজিশিয়ান, লোকে ভুল করে মিউজিশিয়ান ডাকে...গানটা অসাধারণ হয়েছে।’
আলিফ হাসান লিখেছেন, ‘এত ভালো লাগে এই গানটা, ইচ্ছা করে সারা দিন শুনি।’ দুই সপ্তাহ আগে মালেক আহমেদ নামের একজনের একটি মন্তব্য এমন, ‘গানটা শুনলেই আমার মেয়েটার কথা মনে পড়ে। একা একা কাঁদি, আজ দুই মাস বিদেশের মাটিতে কলিজাটা ছাড়া।’
মুসাফির নামের একজন লিখেছেন, ‘ছয় বছর ধরে এই গানটা মাঝেমধ্যেই শোনা হয়, যেন এটা পুরোনো হওয়ার নয়। জীবনে শোনা অন্যতম শ্রেষ্ঠ গান।’ মাস দুয়েক আগের একটি মন্তব্য এ রকম, ‘ছয় বছর আগে প্রকাশিত হলেও আজই প্রথম গানটি শুনলাম। গানটি আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে।’
হৃদয় খান