ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার কিছু প্রশ্নপত্রে এলোমেলো অবস্থা দেখা গেছে। একই সেটের বহুনির্বাচনী অভীক্ষায় (এমসিকিউ) প্রশ্নের ক্রম ভেঙেছে, আবার চারটি প্রশ্ন দুইবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি হিউম্যান এরর। খুবই অল্পসংখ্যক এমন প্রশ্নে হয়েছে। এগুলো শনাক্তকরণ চলছে। গতকাল শনিবার পরীক্ষা শেষে কিছু প্রশ্নপত্রে এমন ভুল নজরে আসে। 

এবার ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের দুটি সেট (সেট ‘এ’ ও সেট ‘বি’) পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হয়। প্রশ্নপত্রটি মোট সাত পাতার। একই সেটের প্রশ্নপত্রে দুই রকম ক্রম দেখা গেছে। সেট ‘এ’র কিছু প্রশ্নপত্রে সেট ‘বি’র ক্রম এবং সেট ‘বি’র কিছু প্রশ্নপত্রে সেট ‘এ’র ক্রম অনুযায়ী প্রশ্ন ছাপা হয়েছে। এতে চারটি প্রশ্ন দুইবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষার এমসিকিউ অংশের ওএমআর কম্পিউটারের মাধ্যমে স্ক্যান করে মূল্যায়ন করা হয়। 

কম্পিউটারকে একটি সেটের জন্য একটি উত্তরপত্র ঠিক করে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী কম্পিউটার নম্বর ঠিক করে। তবে একই সেটের প্রশ্নে এমসিকিউর ক্রমধারা ঠিক না থাকলে কীভাবে সেগুলো মূল্যায়িত হবে, তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

‘গ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়ক ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মাহমুদ ওসমান ইমাম সমকালকে বলেন, এটি একটি হিউম্যান এরর। কিছু প্রশ্নপত্রে ‘এ’ সেটের দুই নম্বর পৃষ্ঠা ‘বি’ সেটে ছাপা হয়েছে, আবার ‘বি’ সেটেরটা ‘এ’ সেটে ছাপা হয়েছে। ফলে সেটে প্রশ্নের ক্রম ভেঙেছে। আবার কয়েকটা প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। তবে এগুলো অল্পসংখ্যক প্রশ্নপত্রে ঘটেছে। আমরা সেগুলো শনাক্ত করছি। কারও প্রতি বৈষম্য করা হবে না।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, কোন হলে, কোন কেন্দ্রে, সেই হলগুলোয় আলাদা রিড করাচ্ছি; সেই প্যাটার্ন দিয়ে নিচ্ছি। ওই প্যাটার্ন দিয়ে ফল তৈরি করা হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র

এছাড়াও পড়ুন:

সুরা ফাতিহার অর্থ ও ফজিলত

সুরা ফাতিহা কোরআন শরিফের প্রথম সুরা। ‘ফাতিহা’ শব্দের অর্থ ‘সূচনা’, ‘উদ্বোধন’ বা ‘প্রারম্ভিকা’। এ অর্থ থেকেই এ সুরার গুরুত্ব বোঝা যায়। নামাজে অন্য যেকোনো সুরা পড়ার আগে এটি পড়তে হয়। এর মানে নামাজ পড়তে সুরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে অন্য সুরা বা আয়াতগুলো পড়তে হয়।

সুরা ফাতিহা এমন এক সুরা, কেউ যখন এর একটি করে আয়াত পড়তে থাকে, আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে সেই আয়াতের জবাব দিতে থাকেন। এই সুরা যেন আল্লাহর সঙ্গে তাঁর বান্দার সরাসরি যোগাযোগ।

সুরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ:

আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন

আর রাহমানির রাহিম

মালিকি ইয়াওমিদ্দিন

ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তায়িন

ইহদিনাছ ছিরাতল মুস্তাকিম, ছিরাতল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম, গয়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দল্লিন

সুরা ফাতিহার অর্থ:

১.সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই।

২.যিনি পরম করুণাময়, পরম দয়াময়;

৩.বিচার দিনের মালিক।

৪.আমরা তোমারই উপাসনা করি, তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি;

৫.তুমি আমাদের চালিত করো সঠিক পথে,

৬.তাঁদের পথে, যাঁদের তুমি অনুগ্রহ দান করেছ,

৭.যারা (তোমার) রোষে পতিত হয়নি, পথভ্রষ্ট হয়নি।

এই সাতটি আয়াতের মধ্যে প্রথম তিনটি আয়াতে আছে আল্লাহর পরিচয়। আর শেষ তিন আয়াতে আছে আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনা।

আল্লাহর পরিচয় হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি পরম দয়ালু ও করুণাময়; কারণ তিনিই মহাবিশ্বের প্রতিপালন করছেন। তাই তিনিই আমাদের মাফ করে দেওয়ার চূড়ান্ত অধিকারী। তিনি যেহেতু বিচার দিবসের প্রভূ, সেই বিচারে তিনিই আমাদের প্রতি দয়া বর্ষণ করার একমাত্র ত্রাণকর্তা।

সুরাটির শেষ তিন আয়াতের প্রথমেই আল্লাহর কাছে আমরা সরল পথ দেখিয়ে দেওয়ার পথনির্দেশ চাচ্ছি। কোন পথ সরল? আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসুলকে যে পথে চালিত করেছেন। এটি হলো আল্লাহর কাছে আমাদের প্রত্যাশা। যিনি নবী-রাসুলদের পথ দেখিয়েছেন, তিনি ছাড়া আমাদের কে আর সর্বোত্তম পথ দেখাতে পারেন!

নামাজে অন্য যেকোনো সুরা পড়ার আগে সুরা ফাতিহা পড়তে হয়

সুরাটির পঞ্চম আয়াতে বলা হচ্ছে, তুমি আমাদের সরল পথ দেখাও। এর পরেই কথাটি আরেকটু বিশদ করে পর পর দুই আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ যাঁদের পরম অনুগ্রহ করেছেন, তাঁদেরকে দেখানো পথটিই হলো এ সরল পথ। কারা আল্লাহর এই অনুগ্রহ পেয়েছেন? যাঁরা পথভ্রষ্ট হননি। এ জন্য তাঁরা আল্লাহর ক্রোধেরও শিকার হননি।

প্রথম অংশে আল্লাহর পরিচয় আর শেষ অংশে আল্লাহর কাছে আমাদের প্রত্যাশার মাঝখানে বলা হয়েছে, ‘ইয়া কানা বুদু ওয়া ইয়া কানাস্তাইন।’ অর্থাৎ, ‘আমরা তোমারই উপাসনা করি, তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।’ এই আয়াতকে বলতে পারি আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। তাঁর কাছে আমাদের নিঃশর্ত আত্মনিবেদনের সম্পর্ক। আমাদের একমাত্র ইবাদত আল্লাহরই প্রতি। সব সাহায্যও আমরা তাঁর কাছেই চাই।

সুরা ফাতিহার ফজিলত:

একবার মহানবী (সা.) একদল সাহাবিকে একটি সামরিক অভিযানে পাঠালেন। দীর্ঘদিনের পথ। পথে সাহাবিরা একটি লোকালয় খুঁজে পেলেন। তাঁরা ভাবলেন, কিছুদিন এখানে বিশ্রাম নেওয়া যাবে। লোকালয়ের মানুষ সাহাবিদের মোটেও ভালো চোখে দেখল না। তারা কোনো সাহায্য তো করলই না, তার ওপর খুবই রুক্ষ ও অমানবিক আচরণ করল। সাহাবিরা সিদ্ধান্ত নিলেন এখানে এক রাতের বেশি থাকা ঠিক হবে না। কাল সূর্যোদয়ের আগেই রওনা দিতে হবে।

সেই রাতে লোকালয়ের গোত্রপ্রধানকে এক বিষাক্ত সাপে কামড় দিল। লোকালয়ের চিকিৎসকেরা হাজার চেষ্টা করেও বিষ নামাতে পারল না। বিষ নামানো না গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। এবার লোকজন বাধ্য হয়ে নবী (সা.)-এর সাহাবিদের কাছে এসে বলল, ‘আপনাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে সাপের বিষ নামাতে জানে? আমাদের এক দলনেতাকে সাপে কামড় দিয়েছে।’

একজন সাহাবি বলে উঠলেন, ‘আমরা আপনাদের কাছ থেকে কোনো ভালো আচরণ পাইনি, তবু চেষ্টা করে দেখতে পারি। যদি তিনি সুস্থ হন, তবে এর বিনিময় কী হবে?’

লোকালয়ের লোকেরা বলল, ‘যে আমাদের দলনেতাকে সুস্থ করতে পারবে, তার জন্য ৩০টি বকরি পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়েছে।’

সাহাবিরা রাজি হলেন। তাঁরা দলনেতার পাশে গিয়ে সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করা শুরু করলেন: ‘সব প্রশংসা শুধু আল্লাহর, যিনি জগৎসমূহ প্রতিপালন করেন। যিনি দয়াময় ও পরম দয়ালু। যিনি বিচার দিবসের মালিক। আমরা শুধু আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই। আপনি আমাদের সরল সঠিক পথ দেখান। তাদের পথ, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন। তবে তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি আপনার শাস্তি বর্ষিত হয়েছে, যারা পথভ্রষ্ট। আমিন।’

সুরা ফাতিহা: নিরাময়ের অনন্য ঘটনা

কিছু বর্ণনা অনুযায়ী, তারা সাতবার সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত করেছিলেন। তারপর সামান্য থুতু নিয়ে ক্ষতস্থানে মেখে দিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরই লোকালয়ের দলপতি সুস্থ অনুভব করতে লাগলেন। তিনি রোগমুক্ত হয়ে গেলেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সাহাবিদের ৩০টি বকরি পুরস্কার দেওয়া হলো।

ফিরে আসার পথে এক সাহাবির মনে হলো, আচ্ছা এ বকরিগুলো তো আল্লাহর আয়াত ব্যবহার করে পেয়েছি। এগুলো খাওয়া কি হালাল হবে?

এরপর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন, এখন কিছু করার দরকার নেই। আগে মদিনায় ফিরে যাওয়া যাক। মহানবী (সা.) এ ব্যাপারে কী বলেন, তা জানা প্রয়োজন। সাহাবিরা মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়ে সবকিছু খুলে বললেন।

মহানবী (সা.) এ ঘটনা শুনে অবাক হলেন। তিনি বললেন, ‘তোমরা কী করে জানলে যে সুরা ফাতিহা দিয়ে রোগের চিকিৎসা হয়? আমি তো এ ব্যাপারে কিছুই বলিনি।’

এরপর মহানবী (সা.) হাসতে হাসতে বললেন, ‘এগুলো সবার মধ্যে ভাগ করে দাও এবং আমার জন্য একটি অংশ রেখো।’

সাহাবিরা খুশি হয়ে চলে গেলেন এবং বকরিগুলো সবার মধ্যে বণ্টন করে দিলেন।

হাদিসটি আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ শরিফে হাদিসটি রয়েছে।

সুরা ফাতিহার গুণ

সম্পর্কিত নিবন্ধ