চ্যাম্পিনয়স ট্রফির প্রস্তুতিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের দারুণ শুরু
Published: 8th, February 2025 GMT
এক সময় নিয়মিতই অনুষ্ঠিত হওয়া তিন জাতির টুর্নামেন্ট এখন বিলুপ্ত প্রায়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতির জন্যই মূলত ছয় বছর পর আবার ফেরানো হয়েছে ত্রিদেশীয় সিরিজের লড়াই। লাহোরে আজ শনিবার লড়াইয়ের শুরুতেই বাজিমাত করেছেন নিউজিল্যান্ড। স্বাগতিক পাকিস্তানকে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭৭ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। প্রথম ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৪৭.
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডের রানের চাকা শুরুতে ঘুরেছে ধীর গতিতে। ৪৫.৪ ওভারে ২৫৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর সময়ও মনে হয়নি কিউদের রান ৩০০ ছাড়াবে। কিন্তু সব অনুমান ভুল প্রমাণ করেছেন গ্লেন ফিলিপস। তাঁর ঝোড়ো গতির ৭৪ বলে ৬ চার ও ৭ ছক্কায় করা ১০৬ রানের কল্যাণেই নিউজিল্যান্ডের রান ৫০ ওভার শেষে ৩৩০ স্পর্শ করেছে।
নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করার পথে শেষ ৫ ওভারে মিশেল ব্রেসওয়েলকে সঙ্গে নিয়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন ফিলিপস। এই ৩০ বলে দুজন মিলে করেছেন ৮৪ রান। এমনকি ফিলিপসের শেষ ৫৬ রান এসেছে মাত্র ১৯ বলে। শেষ ওভারে সেঞ্চুরি পূরণ করার পথে শাহিন শাহ আফ্রিদির এক ওভারেই ফিলিপস করেছেন ২৫ রান। অন্য প্রান্তে অপরাজিত থাকা ব্রেসওয়েল করেছেন ২৩ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৩১ রান।
ফিলিপসের আগে ৩৯ রানে ২ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল। দুজন মিলে গড়েন ১১২ বলে ৯৫ রানের জুটি। উইলিয়ামসন ৮৯ বলে ৫৮ আর মিচেল করেন ৮৪ বলে ৮১ রান। পাকিস্তানের হয়ে শাহিন ৩ উইকেট নিলেও ১০ ওভারে দিয়েছেন ৮৮ রান। ৪১ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন আবরার আহমেদ।
জবাব দিতে পাকিস্তানকে ভালো শুরু এনে দেন ফখর জামান। তবে তাঁকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি ২০১৫ সালের পর প্রথম ওপেন করতে নামা বাবর আজম। ফিরে যান ২৩ বলে ১০ রান করে। ফখর এক প্রান্তে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে দলের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখলেও অন্য প্রান্তে উইকেট পড়েছে নিয়মিত বিরতিতে। তবে দারুণ ব্যাট করতে থাকা ফখর দলীয় ১১৯ রানে ফিরে গেলে বড় ধাক্কা খায় পাকিস্তান। ৬৯ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৪ রান করেন এ ওপেনার।
ফখরের বিদায়ের পর সালমান আগা (৪০) ও তায়াব তাহির (৩০) কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন বটে। যদিও তা মিলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। শেষ পর্যন্ত ২৫৪ রানের বেশি আর করতে পারেনি পাকিস্তান। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৩ উইকেট করে নিয়েছেন ম্যাট হেনরি ও মিচেল স্যান্টনার। সোমবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য ট কর কর ছ ন প রথম উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শেষ মহা আয়োজন
কিছু ভালো লাগছে না, সৌম্যদ্বীপ অঙ্ক কষতে বসে যায়। আবার ভালো লাগছে, সে অঙ্কই কষে। মা সোমা রানী দের ভাষায়, ‘ছেলে অঙ্ক করতে খুব পছন্দ করে।’ এবার ‘ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় গণিত উত্সব’-এ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে শেষ হলো দুদিনব্যাপী চলা জাতীয় গণিত উত্সব ২০২৫। প্রতিযোগী শিক্ষার্থীদের আনন্দ–উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ২৩তম এই উৎসবের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী পর্ব।
এবারের উৎসবে সারা দেশের ১৮ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭৫ হাজার ৫৯৬ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে। তার মধ্যে ১৫টি আঞ্চলিক গণিত উৎসবের ১ হাজার ২০০ বিজয়ীকে নিয়ে শুক্রবার থেকে চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিজয়ী হয় ৮৫ জন। যাদের মধ্য থেকে কয়েক ধাপে বাছাই শেষে নির্বাচিত একটি দল বাংলাদেশ থেকে আগামী জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় ৬৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে।
সমাপনী দিনের সকাল শুরু হয়েছিল রুবিকস কিউব মেলানোর মধ্য দিয়ে। এই প্রতিযোগিতা দুটি পর্বে হয়। এরপর ব্যান্ড ‘এসেইস’ তিনটি গান পরিবেশন করে।
মঞ্চে এসে গত জানুয়ারিতে ২৬তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জেতার অভিজ্ঞতা শোনায় আট বছরের আরিয়েত্তি ইসলাম। সে জানায়, তার রোবট বানাতে ভালো লাগে। আর এ জন্য তাকে গণিতও শিখতে হচ্ছে। এ ছাড়া তামজিদ রহমান ‘ব্লাডলিংক’ নামে একটি অ্যাপ বানানোর অভিজ্ঞতা শোনায় শিক্ষার্থীদের। রক্তদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরির এই অ্যাপের জন্য গত বছর তিনি পেয়েছেন ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড।
একেক পর্ব শেষ হচ্ছিল আর মঞ্চ থেকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই পরীক্ষার ফল নিয়ে আসবেন বিচারকেরা। শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম মজার বিষয় ছিল স্বপন দিনারের জাদু। এরপর মুখ দিয়ে নানা বাদ্যযন্ত্রের শব্দ বিটবক্সিং করে ‘বিটমসফিয়ার’-এর সদস্যরা। একপর্যায়ে মঞ্চে আগত অতিথি ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, এই প্রতিযোগিতা শুধু গণিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এর সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার চর্চার জন্য নানা প্রতিযোগিতা ও কর্মশালা থাকে।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, বাইরের জগতের দিকেও তাকাতে হবে। আইনস্টাইন বলেছেন, জ্ঞানের চাইতে কল্পনার জগৎ মূল্যবান। এ জন্য চারদিকে সবকিছুর দিকে তাকাতে হবে। প্রকৃতির কাছে যেতে হবে। এ ছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের ‘মাদক’, ‘মিথ্যা’ ও ‘মুখস্থ’—এই তিনকে ‘না’ বলান।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহতেশামুল হক খান বলেন, গণিত উৎসব যাঁরা শুরু করেছিলেন, তাঁদের স্বপ্ন এখন সফল। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্বজুড়ে নাম করেছে। এই আয়োজন শুধু প্রতিযোগিতাই নয়, এর মাধ্যমে গণিতের প্রতি চর্চা বাড়বে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন নিজেদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাবে, তেমনি দেশও সমৃদ্ধ হবে।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস দীর্ঘ যাত্রায় যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান।
বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম মজুমদার অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষার্থীদের বেশি চাপ দেবেন না। এই প্রতিযোগিতা মজার অভিজ্ঞতা অর্জনের। এটার জন্য কোচিং করার মতো বিষয়ে চাপ দেওয়া যাবে না। গণিতের পাশাপাশি পদার্থবিজ্ঞান ও প্রোগ্রামিংও শেখার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি আবদুল হাকিম খান, সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারী মুনির হাসান। কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া শরমিন খালেক, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, টালিখাতার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত খান, সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ ব্রাদার লিও পেরেরা এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফারজানা আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সেলর জাহিদ হোসাইন খান।
পদকজয়ী যারাএবার চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস হয়েছে প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে নারায়ণগঞ্জের এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সৌম্যদ্বীপ দাস, জুনিয়র ক্যাটাগরিতে সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের আবরার জাহিদ পাঠান। একই সঙ্গে সৌম্যদ্বীপ প্রাইমারি ও জুনিয়র ক্যাটাগরির মধ্য থেকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য অলিম্পিয়াড হয়ে জামিলুর রেজা চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারও পেয়েছে। এ ছাড়া সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোহাম্মদ মারজুক রহমান এবং হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম কলেজের মো. রায়হান সিদ্দিকী।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্মৃতি পুরস্কারের মধ্যে জামাল নজরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছে চট্টগ্রাম কলেজের মো. রায়হান সিদ্দিকী, জেবুন্নেসা হাশেম পুরস্কার আগা খান একাডেমির ফাতিমাহ শেখ, জামিলুর রেজা চৌধুরী নান্দনিক সমাধান ও তাজিমা এইচ মজুমদার পুরস্কার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মনামী জামান, আবিদ রেজা স্মৃতি পুরস্কার মতিঝিল সরকারি বয়েজ হাইস্কুলের প্রজেশ ভৌমিক, এম সেকেন্দার আলি স্মৃতি পুরস্কার সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের এহাব ফারাজ ভুঁইয়া, গৌরাঙ্গ দেব রায় স্মৃতি পুরস্কার রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মো. জামিউল হোসেইন, সজল-কাজল স্মৃতি পুরস্কার সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের সাইফান সাওয়াদ, প্রকৌশলী লুৎফর রহমান স্মৃতি পুরস্কার বাকালিয়া সরকারি কলেজের জিতেন্দ্র বড়ুয়া ও খোদাদাদ খান স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের মো. নাফিস নূর তাসিন।
পদকজয়ী ও বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে অতিথিরা সনদ, ক্রেস্ট, মেডেল ও টি-শার্ট তুলে দেন।
প্রাইমারি ক্যাটাগরির বিজয়ীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া সৌম্যদ্বীপ দাস প্রথম আলোকে বলে, ‘গণিত একটি আর্ট। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের গণিত অনুশীলন করি। গণিত ছাড়াও পদার্থবিজ্ঞান ভালো লাগে। আমি এআই নিয়ে কাজ করতে চাই।’