পাওনা টাকা চাওয়ায় ফুফাতো ভাই লাঠি দিয়ে মামাতো ভাইকে পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার বিকেলে নেত্রকোনার পূর্বধলায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম নজরুল ইসলাম (৪০)। নজরুল উপজেলার ছোছাউড়া গ্রামের আক্কাছ উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় মুদির দোকানি ছিলেন। আর অভিযুক্ত ফুফাতো ভাই মানিক মিয়া একই গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম তাঁর বাড়ির পাশে একটি মুদি ও চায়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা করে আসছিলেন। তাঁর দোকান থেকে বাকিতে পণ্য কেনেন তাঁর ফুফাতো ভাই মানিক মিয়া। কিন্তু দীর্ঘদিন হলেও পাওনা ২০০ টাকা পরিশোধ করেননি মানিক। সম্প্রতি নজরুল তাঁর ফুফাতো ভাই মানিককে টাকা পরিশোধ করতে বেশ কয়েকবার তাগাদা দেন। শুক্রবার সকালে মানিক নজরুলের দোকানে গেলে টাকার জন্য আবার তাগাদা দেন। এ সময় দুজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় লোকজন উভয়কে থামিয়ে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মানিক বাড়ি ফিরে যান।

ওই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নজরুল স্থানীয় স্টেশন বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বাড়ির পাশেই মানিক লাঠি দিয়ে নজরুলকে পিটিয়ে আহত করেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় নজরুল মারা যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিক মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ করা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। তবে পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াদ মাহমুদ বলেন, নিহত নজরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নজর ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রবেশপথে বারোয়ারি পসরা

অমর একুশে বইমেলার প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। স্টল নির্মাণ নিয়ে হাতুড়ি–বাটালির ঠুকঠাক এখনো চলছে। বারোয়ারি মেলার আবহ আবার ফিরতে শুরু করেছে প্রবেশপথে। বিশেষ করে টিএসসির পাশের ফটকের সামনে থেকে মেলার মূল প্রাঙ্গণ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বসেছে হরেক পণ্যের পসরা। সেখানে কচি ডাবের পুডিং থেকে শুরু করে চুড়ি, ফিতা, ইমিটেশনের গয়না, ভিউকার্ড, কাপড়ের পুতুলসহ বিকোচ্ছে অনেক কিছু।

গতকাল শনিবার বিকেলে দেখা গেল, মেলার ভেতরেও চলছে ফেরিওয়ালাদের অবাধ বেচাকেনা। গাছে গাছে এখন আমের মুকুল দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কে জানে কোথা থেকে এসব ফেরিওয়ালা ডালাভরা কাঁচা আম এনে বিক্রি করছেন কাসুন্দি মাখিয়ে। আছে চিনাবাদামওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা এমন নানা পদের ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতার দল। একাডেমি তাদের প্রতি সদয় হলেও বই বিক্রেতাদের অনেকেই এ নিয়ে বেশ উষ্মা প্রকাশ করলেন। অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বললেন, এভাবে চলতে থাকলে বইমেলা আবার বারোয়ারি মেলায় পরিণত হবে।

গতকাল মেলার তথ্যকেন্দ্রে নতুন বইয়ের নাম এসেছে ১০২টি। প্রবীণ অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান বিকেলে স্বপ্ন-৭১–এর স্টলে আমিনা মাহমুদ মিনার কবিতা তোমাকে চাই বারবার–এর মোড়ক উন্মোচন করেন। তিনি বললেন, বয়সের কারণে এত ভিড়ের মধ্য বইমেলায় আসতে পারেন না। অনেক দিন পর মেলায় এসে পুরোনো দিনের অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে। মেলার পরিবেশ বেশ ভালো লেগেছে তাঁর।

মেলায় এবারের নতুন বইয়ের মধ্যে আগামী প্রকাশনী এনেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের উপন্যাস জুলাই ক্যালাইডোস্কোপ। প্রথমা প্রকাশন এনেছে মাসউদ আহমাদের অদ্বৈত মল্লবর্মণের জীবন ও সময়কেন্দ্রিক উপন্যাস তিতাসের বুনো হাঁস, ভাষা প্রকাশ এনেছে লোকসাহিত্যবিষয়ক বই যাকির সাইদ সংগৃহীত ও সম্পাদিত মুন্সীগঞ্জের মেয়েলি গীত, রিদম প্রকাশনা সংস্থা এনেছে জসিম মল্লিকের উপন্যাস তোমার স্বপ্নের হাতে, বিশ্বসাহিত্য ভবন এনেছে রকিবুল হাসানের প্রবন্ধ সংস্কৃতি পরম্পরা: অভিঘাত অভিজ্ঞান, ঐতিহ্য এনেছে মেসবাহ্ কামালের কবিতা পৃথিবী শোষণহীন একদিন, বাংলা প্রকাশ এনেছে ড. মাহবুব হাসানের প্রবন্ধ গদ্যের ম্যাজিক, অনন্যা এনেছে মতিন রায়হানের নির্বাচিত কবিতা, বৈতরণী এনেছে নিজাম বিশ্বাসের কবিতা জলমাকড়ের নৌকাবাইচ, কথাপ্রকাশ এনেছে দন্ত্যস রওশনের কিশোর গল্প গল্পবেলা, স্বপ্ন–৭১ এনেছে তৌহিদুল ইসলামের রম্যরচনা বিয়ে বাড়িতে ইয়ে, পাঞ্জেরী এনেছে রফিকুর রশীদের কিশোর উপন্যাস সেই এক ভুতুড়ে ক্লাব, বাংলা একাডেমি এনেছে আজাদ রহমানের বাংলা খেয়াল তৃতীয় খণ্ড, সময় এনেছে দীপু মাহমুদের উপন্যাস উষ্ণতা।

গতকাল প্রথমা প্রকাশনের স্টলে শিশুতোষ বই বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আছে বাদল সৈয়দের মৃথিবী ও ইসমাইল আরমানের আজব কারিগর। বিক্রেতারা জানালেন, বড়দের বইয়ের মধ্যে ফারুক চৌধুরীর আত্মজীবনী জীবনের বালুকাবেলায়, মতিউর রহমানের রাজনীতিবিষয়ক বই মুক্ত গণতন্ত্র রুদ্ধ রাজনীতি, আতাউর রহমান খানের স্বৈরাচারের দশ বছর, মিজানুর রহমানের ঢাকা পুরাণ–এর কাটতি বেশি ছিল।

আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল শনিবার শিশুপ্রহর থাকবে না। তবে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ছিল শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা। আর বিকেলে মেলামঞ্চে ছিল ‘একজন মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। মূল প্রবন্ধে বিশিষ্ট অনুবাদক রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী বলেন, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ছিলেন একাধারে শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, প্রশাসক, কবি, লেখক, অনুবাদক ও সুফিবাদ চর্চাকারী। তাঁর লেখালেখির জগৎ বিচিত্র। তিনি ভাষা, সমাজ, শিক্ষা প্রসঙ্গে জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ যেমন লিখেছেন, তেমনি রচনা করেছেন সুখপাঠ্য ভ্রমণকাহিনি। অনুবাদের ক্ষেত্রেও তিনি তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন আবদুস সেলিম ও মোহাম্মদ হারুন রশিদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ