দলের শীর্ষ নেতাদের ঠান্ডা মাথায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়: জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান
Published: 8th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিক্রম করেছি, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি। ফ্যাসিবাদ সরকার বিচারের নামে ঠান্ডা মাথায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের। ফ্যাসিস্ট সরকার জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে, প্রতীক কেড়ে নিয়ে দলকে নিষিদ্ধ করেছিল। তারপরও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। ভারতে পালিয়ে যেতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে।’
আজ শনিবার দুপুরে কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মিসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা তুলে ধরেন জামায়াতের আমির। দীর্ঘ ১৬ বছর পর কক্সবাজারে জামায়াতের বড় ধরনের কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মিসম্মেলনে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে উচ্ছ্বসিত নেতা-কর্মীরাও। সকাল আটটা থেকে সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া, মহেশখালী ছাড়াও জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া থেকে দলে দলে লোকজন আসতে থাকেন। সকাল ৯টার আগে কলেজ ক্যাম্পাসের বিশাল খেলার মাঠ, প্রধান সড়ক এবং পাশের ইলিয়াছ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের গণহত্যার বিচার না হলে শহীদদের আত্মার সঙ্গে বেইমানি করা হবে উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীদের ঘটানো সবগুলো খুনের বিচার হবে। ২৪–এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। আগে অপরাধের বিচার, তারপর অন্য কাজ। এ বিচার না হলে শহীদদের আত্মার সঙ্গে বেইমানি করা হবে। তাঁদের আত্মা কষ্ট পাবে। তাঁদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীনভাবে কথা বলার, সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে চলার সুযোগ পেয়েছি।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু মানি না। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সবাই সমান, ভাই ভাই। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে হবে।’ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জামায়াতে ইসলামী মানুষের জানমাল রক্ষা করবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।
সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, কুখ্যাত এই পুলিশ অফিসার পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বাইরে থেকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। এই ষড়যন্ত্রে পুলিশ সদস্যদের পা না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করে শফিকুর রহমান বলেন, গত ৫ আগস্টের এক দিন আগেও মানুষ জানতেন না, দেশে কী হবে। মাস্টারমাইন্ড নিয়ে কতজন কত কিছু বলেন। মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন মহান আল্লাহ। যাঁর ইশারায় সবকিছু চলে। তারপর দেশের ১৮ কোটি মানুষ, ছাত্র-জনতা মাস্টারমাইন্ড।
জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে কর্মিসম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কক্সবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগর আমির শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ আহসান উল্লাহ, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মোস্তাফিজুর রহমান, সেক্রেটারি শাহজালাল চৌধুরী, শহর জামায়াতের আমির আবদুল্লাহ আল ফারুক, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরোয়ার কামাল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সলিম উল্লাহ বাহাদুর, শহিদুল আলম বাহাদুর, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্মের ট্রাস্টি ও মহেশখালীর বাসিন্দা পরিমল কান্তি দাশ। সঞ্চালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম ও প্রচার সেক্রেটারি আল আমীন।
সম্মেলনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জামায়াতের চার প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আবদুল্লাহ আল ফারুক, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে হামিদুর রহমান আজাদ, কক্সবাজার-৩ (সদর-ঈদগাঁও-রামু) আসনে শহিদুল আলম বাহাদুর এবং কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনে নুর আহমদ আনোয়ারী। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের ভোট দিতে আহ্বান জানান জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত র আম র আম র শ
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের ডিজিটাইজেশনে ৪ উদ্যোগ, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ‘শর্টকোড’ চালুর সিদ্ধান্ত
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পুলিশের ‘হটলাইন’ সেবার পাশাপাশি ‘শর্টকোড’ চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশের ডিজিটাইজেশনে সরকারের চার উদ্যোগের মধ্যে এটি অন্যতম। আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পুলিশের সব ধরনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ কমান্ড অ্যাপ তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। অভিযোগ ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্সিডেন্টস ট্র্যাকিং সফটওয়্যার, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে শর্টকোড, অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি), অনলাইনে বা শর্টকোডের মাধ্যমে মামলা বা এফআইআরসহ বহুবিধ আধুনিকায়নের কাজও শুরু হয়েছে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বর্তমানে যে জাতীয় হেল্পলাইন ‘৩৩৩’ রয়েছে, তার সঙ্গে আরেকটি ৩ যোগ করে ‘৩৩৩৩’ ডায়াল করে নারী নির্যাতনবিষয়ক যেকোনো অভিযোগ করা যাবে। অথবা ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে সেবা অপশনে গিয়ে ৩ চাপলেও পুলিশের কল সেন্টারে ফরোয়ার্ড হয়ে যাবে। নারীরা যাতে নিঃসংকোচে অভিযোগ জানাতে পারেন, সে লক্ষ্যে কল সেন্টারে শতভাগ নারী সদস্য রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু ‘৯৯৯’ জীবন রক্ষাকারী এসওএস সেবা এবং এর কল সেন্টার ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ, তাই আপাতত এই ‘৩৩৩৩’ সেবাকে ‘৯৯৯ ’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। পাশাপাশি ‘৩৩৩৩ ’-এর কল সেন্টারের রিসিভার হিসেবে শতভাগ নারী কর্মী রাখারও চিন্তা সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।
অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, যুক্ত হচ্ছে অনলাইন এফআইআর পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে কল সেন্টারে প্রোফাইল ডাউনলোড হওয়ার পর কলটি সরাসরি সংশ্লিষ্ট থানায় চলে যাবে। বর্তমানে থানার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ফোন নম্বরের ডেটাবেজ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা আইসিটি বিভাগ থেকে করা হবে বলে জানান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, পুলিশের কমান্ড অ্যাপের প্রটোটাইপ তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আলোচনা করে অ্যাপ্লিকেশনটির আরও উন্নয়নের কাজ চলছে।
প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, বর্তমানে পুলিশ সদস্যরা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। তা ছাড়া তথ্য পাচারের ঝুঁকিও খুব বেশি। যেকোনো সদস্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে সব আলোচনা কপি করে নিয়ে যেতে পারেন। এ কারণে পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে ‘পুশ টু টক’ অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে তথ্য পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা থাকবে।
বাহিনীর সদস্যদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পুলিশ কমান্ড অ্যাপে কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকটি স্তরে থাকবে বলে জানান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, টিয়ার-১-এ থাকবেন পুলিশের আইজিসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। পরের স্তরে থাকবেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ জেলা পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। আর সবশেষে থাকবেন দেশের সব থানার পুলিশ কর্মকর্তারা।
তবে থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এখনই কমান্ড অ্যাপে সংযুক্ত করা হবে না বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বর্তমানে যেকোনো অভিযোগ তদন্ত বা কোনো ঘটনা ঘটলে সব ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ ও প্রচলিত অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পুলিশ কমান্ড সেন্টারের দায়িত্বে থাকা সদস্যরা সারা দিন এসব কাজেই ব্যস্ত থাকেন। এ ধরনের যোগাযোগের পুরো বিষয়কে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আদলে একটি ইন্সিডেন্টস ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে। এই ট্র্যাকিং সিস্টেমে সব ধরনের মেসেজ আদান-প্রদান ও যোগাযোগ সংরক্ষণ করা হবে। ফলে যেকোনো অপরাধের ঘটনায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটি একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমেই জানা যাবে। এর ফলে সেবা প্রদান সহজ ও সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের কাজের চাপও কমবে।