হামলা ও মারধরে আহত বিএনপির ১৭ নেতাকর্মী
Published: 8th, February 2025 GMT
রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পাবনার ঈশ্বরদী ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রতিপক্ষ ও দুর্বৃত্তদের হামলায় বিএনপির অন্তত ১৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই স্থানে প্রতিপক্ষের হামলা এবং এক স্থানে দুর্বৃত্তদের মারধরের শিকার হয়েছেন তারা।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীর হামলায় জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম সারোয়ারসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার পৌর শহরের মনিরামপুর বাজারে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুরের দিকে গোলাম সারোয়ার ২০-৩০ জন নেতাকর্মী নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে যান। এ সময় আগে থেকে অবস্থান নেওয়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ড.
তাৎক্ষণিক নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে গোলাম সারোয়ার অভিযোগ করে বলেন, এম এ মুহিতের সমর্থকরা লাঠিসোটা, হকিস্টিক, রড ও পাইপ নিয়ে তাদের মারধর করেছে। পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মুহিতের সমর্থক উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আরিফুজ্জামান আরিফ বলেন, শাহজাদপুরের রাজনীতিতে গোলাম সারোয়ারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উপজেলা নেতাকর্মীর না জানিয়ে হঠাৎ দলীয় কার্যালয়ে আসায় তৃণমূলের নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে প্রতিহত করেছেন।
উপজেলা স্বেচ্ছসেবক দলের বিলুপ্ত কমিটির নেতারা পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এতে বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম চৌধুরী সাকিক বলেন, গোলাম সারোয়ার শাহজাদপুরে সক্রিয় না থাকলেও শনিবার হঠাৎ দলবল নিয়ে দলীয় কার্যালয় দখলের পাঁয়তারা করেন। বিষয়টি সাধারণ নেতাকর্মীরা মেনে নেননি।
উপজেলা স্বেচ্ছসেবক দলের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ন কবির বলেন, গোলাম সারোয়ার ও তার পরিবার সুবিধাবাদী। দুঃসময়ে যারা দলের সঙ্গে ছিলেন না। তাদের নিয়ে হঠাৎ শাহজাদপুরে আগমন করার উদ্দেশ্য অন্য কিছু।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়ন উপলক্ষে কর্মী সমাবেশে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়ালসহ তার অনুসারীরা। তাদের অভিযোগ, রাজশাহী-১ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী শরীফ উদ্দীনের অনুসারীরা এ হামলা করেছে।
ভুক্তভোগী আবদুস সালাম শাওয়াল জানান, শনিবার বিকেলে তিনি বাড়ি থেকে জিয়া ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনারুল সরকারকে সঙ্গে নিয়ে প্রাইভেটকারে সমাবেশে যাচ্ছিলেন। তারা বারো মাইল এলাকায় পৌঁছালে ১০ থেকে ১৫ জন লাঠিসোটা ও রোড নিয়ে হামলা করে।
এ সময় তারা গাড়িতে ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করে। এতে আবদুস সালাম মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশী শরীফ উদ্দিন বারবার তাদের ওপর হামলা করছেন। তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ করায় হামলা হতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে শরীফ উদ্দীন বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। সবাই তো আমার গ্রুপের। কে কার ওপর হামলা করল? খোঁজ নিয়ে দেখছি।’ গোদাগাড়ী থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, বিএনপি নেতার গাড়িতে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এর আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে গেছে।
ঈশ্বরদীর পাকশীতে আরিফুল ইসলাম আরিফ (৩৫) নামে বিএনপির এক নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার পাকশীর রূপপুর বিবিসি বাজারসংলগ্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত আরিফ পাকশী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নতুন রূপপুর গ্রামের বিএনপি নেতা আশরাফ আলীর ছেলে। তিনি বলেন, মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে বিবিসি বাজারের কাছে তাকে মারধর করে কয়েকজন। কী কারণে মারধর করা হয়েছে, তা তিনি বলতে পারেননি। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ প বন ব এনপ ম রধর ব এনপ র স ন ত কর ম হয় ছ ন কম ট র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাঙালির প্রাণের উৎসব আজ
রৌদ্রকরোজ্জ্বল বৈশাখী দিন ফিরে এল আবার। সুরে-বাণীতে, সাজসজ্জায়, আহারে-বিহারে, আনন্দ-উল্লাসে আজ সোমবার বাংলার নতুন বছর ১৪৩২ বরণ করে নেবে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দেশের সব মানুষ। পুরোনো ব্যর্থতা ঝেরে ফেলে সবার কল্যাণ কামনায় উদ্যাপিত হবে নববর্ষের উৎসব। নববর্ষকে আবাহন জানিয়ে বহুকণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...।’
বাংলা নববর্ষের চেয়ে বড় কোনো সর্বজনীন উৎসব দেশে আর নেই। এ কারণে মানুষে মানুষে মহাপ্রাণের মিলন ঘটানোর বর্ষবরণের এই উৎসব গভীর তাৎপর্যময় হয়ে আছে আমাদের জীবনে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এবার নতুন পরিবেশে বর্ষবরণ উৎসব বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য তাই ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
মূল প্রতিপাদ্য সামনে রেখে জাতীয়ভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদ্যাপনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। উৎসব অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সব জাতিসত্তার প্রতিনিধিদের নিজ নিজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রমনার বটমূলে বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান আয়োজন করবে ছায়ানট।
রাজধানীর বর্ষবরণের অন্যতম বর্ণাঢ্য আয়োজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রা। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র বদলে এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামকরণ করা হয়েছে। এই শোভাযাত্রার যে মোটিফগুলো তৈরি করা হয়েছিল, তার মধ্যে
২০ ফুট উচ্চতার ‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ নামের মোটিফটি শনিবার ভোররাতে কে বা কারা আগুনে পুড়িয়ে দেয়। চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনার পরও তাদের শোভাযাত্রা বর্ণাঢ্যভাবেই পথে নামবে পয়লা বৈশাখ সকালে।
পয়লা বৈশাখের উৎসব গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবোধের যে উন্মেষ ঘটেছিল, তার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তার প্রতিবাদে বিপুল উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বৈশাখী উৎসব উদ্যাপিত হয়। রমনার বটমূলে ১৯৬৭ সালে ছায়ানট প্রথমবারের মতো আয়োজন করে তাদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। কালক্রমে বর্ষবরণ উৎসবে যুক্ত হয় আরও অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। চারুকলার শোভাযাত্রা বর্ণাঢ্য করে তোলে আয়োজন। বহু সংগঠনের অংশগ্রহণে বর্ষবরণ বহু প্রাণের বিপুল উৎসবে পরিণত হয়।
বাংলা বর্ষবরণের উৎসব যত আড়ম্বর, উৎসাহের সঙ্গে উদ্যাপিত হয়, ব্যবহারিক জীবনে বাংলা সনের প্রয়োগ তেমন ব্যাপক নয়। প্রাত্যহিক জীবনের কাজকর্ম, শিক্ষা, ব্যবসা—সবই গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জি অনুসরণ করেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে বাংলা দিনপঞ্জি পুরোপুরি অব্যবহৃতও নয়। কৃষকেরা চাষাবাদ, ফসল রোপণ, ফসল তোলার ক্ষেত্রে বাংলা সনের হিসাব অনুসরণ করেন। অনেক ধর্ম সম্প্রদায়ও তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য বাংলা বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করে। কাজেই সমাজে নানা ক্ষেত্রে বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রয়োগ রয়েছে। সে কারণে নতুন বছর শুরু হলে নতুন প্রত্যাশা নিয়েই মানুষ তাকে বরণ করে নেয়।
নতুন বছরকে বরণ করার রীতি পৃথিবীর বহু দেশের সংস্কৃতিতে বহমান। আমাদের দেশে বছরের পয়লা দিনটিকে কেন্দ্র করে এই উৎসবে তুলে ধরা হয় দেশের গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। রাজধানীতে রমনার বটমূলে এবার ৫৮তম বারের মতো ছায়ানট আয়োজন করবে তাদের বর্ষবরণের প্রভাতি অনুষ্ঠান। এবার তাদের অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ভৈরবীতে রাগালাপের মধ্য দিয়ে শুরু হবে প্রায় দুই ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান।
এ ছাড়া ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুরের ধারার আয়োজনে সকাল ৬টায় শুরু হবে সহস্রকণ্ঠের গানে গানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
চারুকলা অনুষদের আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে সকাল নয়টায়। আগেই জানানো হয়েছে, এবার শোভাযাত্রায় বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রতিনিধিরা তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীকগুলো নিয়ে অংশ নেবেন। শোভাযাত্রাটি টিএসসি, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি হয়ে আবার চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে।
সকাল থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হবে বিসিকের সঙ্গে যৌথ আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলা। এ ছাড়া বেলা সাড়ে তিনটা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হবে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে থাকবে একক ও দলীয় আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বেলা তিনটা থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে চলবে বৈশাখী ব্যান্ড শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় চীনা কারিগরি দলের পরিবেশনায় শুরু হবে বর্ণাঢ্য ড্রোন শো।
এসব প্রধান অনুষ্ঠান ছাড়াও অনেক এলাকাভিত্তিক এবং বহুতল আবাসিক ভবনগুলোতে ছোট ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। বরাবরের মতো ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ করে অনেক সংগঠন শহর ঘুরে সংগীত, আবৃত্তি পরিবেশন করবে।
রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশেই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও প্রবাসী বাঙালিরা নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব অনুষ্ঠানের সঙ্গেও দেশবাসীর এক রকমের সংযোগ ঘটে। এমন নানা আয়োজন উদ্যোগের ভেতর দিয়ে কালক্রমে বাংলা নববর্ষের উৎসব আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। প্রসারিত হচ্ছে বিপুল পরিসরে।