গোপালগঞ্জে এনজিওকর্মীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে হত্যাচেষ্টা
Published: 8th, February 2025 GMT
গোপালগঞ্জে একটি বেসরকারি সংস্থার সভা চলাকালে সদস্যদের ওপর হামলা ও গায়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রাম বিশ্ব মুক্তবাণী সংস্থায় (ডগলাস) এ ঘটনা ঘটে।
এতে ওই সংস্থার কোষাধ্যক্ষ শ্যামল মণ্ডল (৪৯) অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। তাকে প্রথমে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শ্যামল মণ্ডল গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা করপাড়া ইউনিয়নের হাটবাড়িয়া গ্রামের নকুল বিশ্বাসের ছেলে।
বিশ্ব মুক্তবাণী সংস্থার (ডগলাস প্রকল্প) নির্বাহী পরিচাক শলোমন অপূর্ব বাড়ৈ বলেন, গোপালগঞ্জের বেদগ্রামে বিশ্ব মুক্তবাণী সংস্থার সামনে ও ভিতরে জায়গা দখল করার জন্য দীর্ঘদিন পাঁয়তারা করছেন এন্ড্রু বিশ্বাস। শনিবার ছিল কার্যনির্বাহী কমিটির নির্ধারিত সভা। এন্ড্রু সংস্থার বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এন্ড্রু সভায় উপস্থিত ছিলেন না। সভা শুরু হওয়ার কিছু সময় পর এন্ড্রু সভা বানচাল করার জন্য ৪০ থেকে ৫০ জনকে নিয়ে সভাকক্ষে ঢোকেন। এক পর্যায়ে উপস্থিত সদস্যদের বেধড়ক মারধর শুরু করেন। আতঙ্কে সদস্যরা দৌড়ে বের হতে থাকেন। এ সময় সংস্থার কোষাধ্যক্ষ শ্যামলকে কক্ষে আটকে প্রথমে মারধর ও পরে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এতে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। সংস্থার সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথম গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দানিয়েল বৈদ্য জানান, তিনি খুলনার ট্রাবোনাকাল গ্রেস এজি চার্চের পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করছেন। গত বৃহস্পতিবার এন্ড্রু, তার ভাগনে শুকলাল মজুমদার ও আকাশ মজুমদার খুলনায় এসে তাকে সভায় উপস্থিত না হওয়ার জন্য হুমকি দেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তিনি গোপালগঞ্জে এলে দেখে নেবেন বলেও হুমকি দিয়ে আসেন তারা। এন্ড্রুর উদ্দেশ্য, এ সংস্থার জায়গা দখল করে সেখানে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এন্ড্রুর নেতৃত্বে প্রভাস বাড়ৈ, দিলীপ বাড়ৈ, আইজ্যাক বাড়ৈ, জুয়েল বাড়ৈ, মিকাইল বাড়ৈ, লিটন বল্লভ, শুকলাল মজুমদারসহ ৪০-৫০ জন সভায় এসে হামলা করে।
এ বিষয়ে এন্ড্রু বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে জায়গা দখলের অভিযোগ সঠিক নয়। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দানিয়েল বৈদ্যকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে তিনি আরও জানান, তিনি তার (দানিয়েল) বড় ভাই হিসেবে একটি থাপ্পড় মেরেছেন। তবে সভায় তার কোনো লোক হামলা করেনি দাবি করে তিনি বলেন, কারা তাদের ওপর হামলা করেছে বা পুড়িয়েছে তা আমার জানা নেই।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুলাহ রাজীব বলেন, শনিবার দুপুরে শ্যামল মণ্ডল নামের এক অগ্নিদগ্ধ রোগীকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তার বুক, পেট, দুই হাতের সব জায়গা পুড়ে গেছে। রোগী যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। তার অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির সাজেদুর রহমান বলেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বেদগ্রাম বিশ্ব মুক্তবাণী সংস্থার সভা চলাকালে হামলা ও একজনকে অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছে। সেখানে এবং হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ গ প লগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
যক্ষ্মার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে বড় আঘাত, বাংলাদেশে বন্ধের শঙ্কায় ১৯৬ নির্ণয় কেন্দ্র
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রতিষ্ঠান ইউএসএআইডির অনুদান বন্ধ হওয়ায় বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াই বড় বাধার মুখে পড়ছে। এ রোগ নির্ণয়ে বিশ্বজুড়ে রয়েছে ১০ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কেবল বাংলাদেশেই আছে ১৯৬টি। গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা এসব কেন্দ্রে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে যক্ষ্মা নির্ণয় ছাড়াও চিকিৎসা ও গবেষণা করা হয়। ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলা এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের শঙ্কায় রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মা নিরাময় কেন্দ্রগুলো বন্ধ হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বড় প্রভাব পড়তে পারে; বাধাগ্রস্ত হবে বৈশ্বিক যক্ষ্মা মোকাবিলা কার্যক্রম।
সোমবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিশ্বব্যাপী চলমান ইউএসএআইডির অধিকাংশ কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যম এক্সে তিনি লেখেন, পর্যালোচনা করতে আগামী ছয় সপ্তাহের জন্য ইউএসএআইডির ৮৩ শতাংশ কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৫ হাজার ২০০টির বেশি চুক্তি, যেগুলো শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় হওয়ার কথা ছিল।
ইউএসএআইডির অর্থে বিশ্বের নানা দেশে যক্ষ্মা নিরাময় কেন্দ্র পরিচালিত হয়ে আসছে। অর্থায়ন বন্ধের কারণে জটিল এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই মারাত্মকভাবে বাধার মুখে পড়বে। সুইজারল্যান্ডের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান স্টপ টিবি পার্টনারশিপের প্রধান ডা. লুসিকা দিতিউ বলেন, যক্ষ্মার চিকিৎসা বন্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী রোগটি ভয়ংকর রূপ ধারণের শঙ্কা রয়েছে। রোগটি চিকিৎসার অযোগ্য পর্যায়েও চলে যেতে পারে। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তা বন্ধের কারণে রোগ নির্ণয়ে অপারগতা যক্ষ্মার বিস্তারকে লাগামহীন করে তুলতে পারে।
গত মাসে (ফেব্রুয়ারি) বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রগুলোতে সহায়তা বন্ধের বিষয়ে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। গত সপ্তাহে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র দরিদ্র দেশগুলোকে প্রতিবছর যক্ষ্মা মোকাবিলায় ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটি ডলার সহায়তা দিয়ে আসছিল। এ সময় সংস্থাটি তহবিল বন্ধের বিষয়েও সতর্ক করে বলে, এমনটা করলে যক্ষ্মা মোকাবিলার কয়েক দশকের চেষ্টা জলে পড়বে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তাদের কৌশল এখন এই যে, ‘আমাদের প্রত্যেক ডলার ব্যয়, প্রত্যেক তহবিল ও প্রত্যেক নীতি যা আমরা অনুসরণ করি, তা যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপদ, শক্তিশালী এবং আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে।’ ডা. লুসিকা দিতিউ বলছেন, ‘যক্ষ্মা প্রতিরোধ বন্ধ করলে এর কিছুই হবে না। প্রথমত, নিশ্চিতভাবেই এটি আমাদের কাউকেই নিরাপদ করে না। কারণ যক্ষ্মা বায়ুবাহিত। আপনি সীমান্তে এটি থামাতে পারবেন না। এটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে। যতক্ষণ আপনি শ্বাস নেবেন, ততক্ষণ আপনি এটি পাবেন। তবে কেবল সাধারণ যক্ষ্মা নয়, ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা এবং চরম ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মাও রয়েছে।