দেশের হিমাগারমালিকেরা বলেন, বর্তমানে সারা দেশে ৪০০ হিমাগার আছে। ব্যাংকঋণ ও অন্যান্য পরিচালনা ব্যয় বহন করতে না পেরে এর মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ বা প্রায় ৩০০টি হিমাগার রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু হিমাগার ঋণখেলাপি হয়ে গেছে।

আজ শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায় বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বা হিমাগার সমিতি। সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী। এ সময় সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, চলতি বছর যৌক্তিকভাবে হিমাগারের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সব খরচ বিবেচনায় নিয়ে ভাড়া আট টাকা করা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা কমানোর সুযোগ নেই। তবে সরকার ঋণের সুদহার কমানোসহ কিছু সহায়তা দিলে ভাড়া কমানো সম্ভব বলে জানান তিনি।

সাধারণত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ শুরু হয়। এই কার্যক্রম শেষ হয় জুলাই মাসে। এরপর আলু খালাস (খুচরা বাজারে সংরক্ষিত আলু বিক্রি) শুরু হয়, যা চলে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। এরপর বাজারে নতুন আলু আসতে শুরু করে।

সংবাদ সম্মেলনে হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, হিমাগারের প্রধান ব্যয়ের খাত হচ্ছে ব্যাংকঋণের কিস্তি ও বিদ্যুৎ বিল। গত এক বছরে সুদহার প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে এবং উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বিদ্যুৎ বিলও। এ ছাড়া হিমাগারে আলু আনা-নেওয়া (লোডিং-আনলোডিং), কর্মীদের বেতন–ভাতাসহ আনুষঙ্গিক সব খরচই বেড়েছে।

মোস্তফা আজাদ বলেন, এসব আবশ্যক ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে ২০২৫ সালে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে কেজিপ্রতি ভাড়া ৯ টাকা ৬২ পয়সা হওয়ার কথা। তবে আলুচাষি ও আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ীদের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সমিতি। তবে ন্যূনতম এই ভাড়া অনেকে দিতে চাচ্ছেন না।

এদিকে চলতি বছর হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে সম্প্রতি দেশের কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করেন ক্ষুব্ধ কৃষক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। যেমন, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় মহাসড়কে আলু ফেলে বিক্ষোভ করেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, হিমাগার ভাড়া চার টাকা থেকে বাড়িয়ে আট টাকা করা হয়েছে।

মোস্তফা আজাদ বলেন, ২০২৪ সালে হিমাগার ভাড়া কেজিতে ৭ টাকা করে ছিল। এই সত্য গোপন করে এবং হিমাগার পরিচালনার আবশ্যকীয় ব্যয় বিবেচনায় না নিয়ে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী মনগড়া বক্তব্য ও কর্মসূচি দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মোস্তফা আজাদ। তিনি বলেন, সাধারণত হিমাগারে ৫০ কেজির বস্তায় আলু সংরক্ষণের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা আছে। তবে দেখা গেছে, অতীতে অনেক ব্যবসায়ী এ নিয়ম না মেনে ৭০ থেকে ৭২ কেজি আলু বস্তায় ভরে হিমাগারে রেখেছেন।

মোস্তফা আজাদ বলেন, গত বছর কেজিপ্রতি আট টাকা করে ৫০ কেজির বস্তার জন্য মোট ৩৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। তবে যাঁরা ৭০-৭২ কেজির বস্তা রেখেছিলেন, তাঁরাও ৩৫০ টাকা করে ভাড়া দিয়েছিলেন। সেই হিসাবে তাঁদের কেজিতে পাঁচ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। চলতি বছর এ ধরনের অনিয়ম একেবারে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূলত এ কারণেই একটি মহল অপপ্রচার ও ভাড়া কমানোর আন্দোলন করছে।

সংবাদ সম্মেলনে হিমাগারমালিকেরা জানান, বস্তায় ১৫-২২ কেজি আলু বেশি রাখায় তাঁরা এত দিন এসবের ভাড়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আবার এ কারণে হিমাগারের আলুর ধারণক্ষমতাও ২০-২৫ শতাংশ কমে যায়। এতে ১০ হাজার টনের একটি হিমাগারে বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়। এসব কারণে দেশের ৪০০ হিমাগারের মধ্যে প্রায় ৩০০ হিমাগারই রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আরও বেশ কিছু হিমাগার ঋণখেলাপি হয়ে গেছে।

হিমাগারমালিকেরা আরও জানান, দেশে আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। এর মধ্যে হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৪৫ লাখ টনের মতো। চলতি বছর আলু উৎপাদন হতে পারে ১ কোটি ২০ লাখ টনের মতো। সেই হিসাবে বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারের বাইরে থাকবে এবং পণ্যটির দাম সেভাবে বাড়বে না। এতে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।

সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ বলেন, এমন বাস্তবতায় দেশ থেকে উদ্বৃত্ত আলু রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি হিমাগারের ভাড়া কমানোর জন্যও সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। এ ছাড়া হিমাগারের যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যাচাই করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।

হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া কমাতে সরকারের কাছে পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সেগুলো হচ্ছে—ব্যাংকঋণের সুদহার ১৭ শতাংশ (দণ্ডসুদসহ) থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা; বিদ্যুৎ বিলের ইউনিটপ্রতি খরচ কমিয়ে ৫ টাকা করা; হিমগার–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যয়ের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা; উৎসে কর (টিডিএস) প্রত্যাহার করা ও ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় ত্রৈমাসিকের পরিবর্তে বার্ষিক করা। হিমাগারমালিকেরা বলেন, আলু সংরক্ষণ ভাড়া কৃষকদের সহনীয় পর্যায়ে আনতে হিমাগারশিল্পকে কৃষিভিত্তিক শিল্প ঘোষণা করে সরকারকে এসব পদক্ষেপ নিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় ত হয় ছ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। আগামী ১৬ এপ্রিল সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। 

আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনে অংশ নিতে তারা ফরম নিতে পারেননি। ফরম নিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান তারা।

গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সবগুলো পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন:

নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার না রাখার কথা ভাবছে ইসি

বাপ ডাইক্কা নির্বাচন দেওন লাগব, বললেন বিএনপির ফজলুর রহমান

মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমদ জানান, ২১টি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে সবগুলোই উৎরে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

মনোননয়ন জমা দেওয়া ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী মো. সিরু, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন এবং সদস্য আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।

সাতটি পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং সদস্য শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী আইনজীবী মো. আবদুর রশীদ লোকমান বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা ফরম নিতে পারিনি। দুপুর ও বিকেলে আমরা দুই দফায় সমিতির লাইব্রেরি থেকে মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছি।” 

বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, “আমরা ২১ জন ফরম নিয়েছি। অন্যরা ফরম না নিলে আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের সৎ সাহস নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা ছাত্র-জনতার ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করেছিল, তারা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ