অযথা সময়ক্ষেপণ করে সরকারে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই: আসিফ নজরুল
Published: 8th, February 2025 GMT
ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, অযথা সময়ক্ষেপণ করে সরকারে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তাঁদের। তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র মেরামতের মৌলিক শর্ত পূরণ করতে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কারগুলো অতি জরুরি, সেগুলো করার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলে যেতে চান।
আজ শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ছয়টি সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন গতকালই প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই কমিশনগুলো হলো সংবিধান, বিচার, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে তিনভাবে বাস্তবায়নের কথা আছে বলে উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, একটি হলো আশু করণীয় (সংবিধান সংস্কার কমিশনের আশু করণীয় নেই)। আরেকটি হলো মধ্যমেয়াদি এবং একটি হলো দীর্ঘমেয়াদি। দীর্ঘমেয়াদিগুলো নির্বাচন–পরবর্তী সরকার করবে। আশু করণীয়গুলোও পরিষ্কার, তাঁরা আশা করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের সাপেক্ষে নির্বাচনের আগেই করা হবে। আর মধ্যমেয়াদিগুলো নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে কমিশনের আশু কিছু সুপারিশের কথা তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের কথাও জানান তিনি। তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া বাকি পাঁচটি কমিশন আশু করণীয়ও দিয়েছে। আর সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে কি হবে না, তা রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে কবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, তাঁরা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। যদি তারা রাজি থাকে, তাহলে রোজার মধ্যেও আলোচনা চলবে।
সংস্কার কমিশনের আশু করণীয়গুলো বাস্তবায়ন করতে কত দিন লাগতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আশু করণীয় ইতিমধ্যে কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিবেদনে আশু করণীয় ছয় মাসের মধ্যেও বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বিবেচনায় আশু করণীয়ের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ এক মাসের মধ্যেই করা সম্ভব।
আশু করণীয়গুলো বাস্তবায়ন করে নির্বাচন করা সম্ভব কি না, জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, আশু করণীয়র ক্ষেত্রে নির্বাচন–সংক্রান্ত যেসব বিষয় আছে, সেগুলো অবশ্যই ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করে। এ ছাড়া সংবিধান সংশোধন কমিশনের ক্ষেত্রেও ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করে।
নির্বাচন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যে দ্রুত নির্বাচনের কথা বলছে, এটি বলার অধিকার অবশ্যই তাদের আছে। আর নির্বাচনের সময়রেখা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে তাঁর প্রেস সচিব বারবার পরিষ্কার করেছেন যে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অথবা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে।
জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপিও একটি ঘোষণাপত্র (খসড়া) তৈরি করেছে। তারা বলেছে, সেটি তাদের জোটসঙ্গীদের দিয়েছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সেটি চূড়ান্ত হলে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বসবে। ছাত্রনেতারাও যথেষ্ট সংযম, ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন। তিনি আশা করেন, এ প্রক্রিয়া বেগবান করার চেষ্টা করা হবে। কারণ, এটা আইনি দলিল নয়, রাজনৈতিক দলিল, ঐক্যের দলিল।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সরকারের ছয় মাসের মাথায় পতিত স্বৈরাচারের লোকজন ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যের কারণে, নাকি সরকারের দুর্বলতার কারণে এটি হচ্ছে? জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, সরকারের সহনশীলতা, অবাধ মতপ্রকাশের পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে সরকারের অসীম শ্রদ্ধাবোধের কারণে এগুলো হচ্ছে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট ঐকমত য র সরক র র করণ য়
এছাড়াও পড়ুন:
‘পিপল ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ নাম চায় ইসলামী আন্দোলন
বাংলাদেশের বর্তমান নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরিবর্তে নাগরিকতন্ত্র ও জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ চালুর প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। তবে নতুন এ প্রস্তাবনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরিবর্তে ‘পিপল ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ তথা ‘বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র’ নামের প্রস্তাব দেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে অবস্থিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের হাতে সংস্কার প্রস্তাব তুলে দেয় ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিদল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে দলটি ১৩০টি প্রস্তাবে একমত, ২৫টি দ্বিমত এবং ১১টিতে আংশিকভাবে একমত। এ ছাড়া দলটি ৪১টি নতুন প্রস্তাব এবং ৪টি মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, রাষ্ট্রের নাম হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’। কারণ, এই নামের মধ্যেই জনকল্যাণ নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।
আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে সুশাসন, ন্যায়বিচার, উন্নয়ন, মানবাধিকার রক্ষা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা চারটি মৌলিক প্রস্তাব পেশ করেছি, যা বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। আর এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। প্রস্তাবগুলো হলো আত্মশুদ্ধি, জবাবদিহি, শরিয়াহ আইন ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন।’
বিদ্যমান আইনে দুর্নীতি, দুঃশাসন, চুরি, ধর্ষণসহ অন্যায়-অনাচার বন্ধ করা যায়নি জানিয়ে শরিয়াহ আইন করার দাবি জানান আশরাফ আলী আকন। সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সব প্রস্তাবে সবাই একমত হবে বলে কমিশন মনে করে না। কমিশনের পক্ষ থেকে মতামতগুলো পর্যালোচনা করা হবে বলেন তিনি।
আগামী শনিবার থেকে প্রতিদিনই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একাধিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে বলে জানান আলী রীয়াজ। আগামী ১৫ মের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করা হবে বলেন তিনি। তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার কথা জানান।
ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহম্মেদ সেখ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।
এ পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।