কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের রাতে মশালমিছিল, মহাসড়ক অবরোধ
Published: 8th, February 2025 GMT
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় মশালমিছিল শেষে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা।
আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিট থেকে ৮টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত এ অবরোধ করেন তাঁরা। এর আগে রাত সাতটার দিকে শহরের এনএস রোড থেকে মশালমিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুলিশ লাইনসের সামনে কুষ্টিয়া– ঈশ্বরদী মহাসড়কে গিয়ে তাঁরা বসে পড়েন। তাঁরা মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান, সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, গাজীপুরে তাঁদের নেতা–কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা চালিয়েছেন। এর বিচার করতে হবে। অতি সত্বর এই কুষ্টিয়ায় যেসব আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী আছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তাঁদের দুর্নীতির হিসাব নিতে হবে। ১৭ বছর ধরে যেসব দুর্নীতি করেছে, তার কড়ায়–গণ্ডায় হিসাব নিতে হবে। রক্তের বদলা নিতে হবে।
মহাসড়কে বসে এবং মশালগুলো মহাসড়কে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা। এ সময় উভয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। তাঁরা স্লোগান দেন, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘দিল্লি না ঢাকা ঢাকা’, ‘আমার ভাই মরছে কেন, প্রশাসন জবাব চাই জবাব চাই’, ‘আওয়ামী লীগ ধর ধর, ধরে ধরে জবাই কর।’
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গাজীপুরে হামলায় জড়িত প্রত্যেককে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হবে। দেরি হলে উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেওয়া হবে। ব্যর্থ হলে ব্লকেড করা হবে।
হাসিবুর রহমান বলেন, ‘কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকল ফ্যাসিস্টকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে রাজপথ রক্তে লাল হবে। পুলিশ সুপারকে বলতে চাই, আপনার দৌলতপুর, সদর থানার ওসি আওয়ামী লীগের হয়ে কথা বলে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ সময় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন, ক্রাইম ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ হাজির হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মোস্তাফিজুর রহমান সদর থানার ওসিকে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান।
পলাশ কান্তি নাথ নেতাদের আশ্বস্ত করেন, সব বিষয় পুলিশ সুপারকে অবগত করা হয়েছে। তিনি সব বিষয় খতিয়ে দেখছেন। কুষ্টিয়ায় ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় যেসব হত্যা মামলা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে আসামি ধরতে কাজ চলছে।
অবরোধের সময় সাময়িক অসুবিধার জন্য জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন নেতা–কর্মীরা। তাঁরা পরে মজমপুরের দিকে চলে যান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র রহম ন আওয় ম অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে ঢোকার অনুমতি পায়নি চার ট্রাক তৈরি পোশাক, গন্তব্য ছিল স্পেন
ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করায় পেট্রাপোল কাস্টমস তৈরি পোশাকবোঝাই চারটি ট্রাককে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি (কারপাস) দেয়নি। এতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে গতকাল বুধবার ট্রাকগুলো ঢাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা দিতে ২০২০ সালের ২৯ জুন আদেশ জারি করেছিল ভারত। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) গত মঙ্গলবার সেই আদেশ বাতিল করে।
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক তিনটি প্রতিষ্ঠান চারটি ট্রাকে পণ্য বোঝাই করে বেনাপোল বন্দরে নিয়ে আসে। ট্রানজিট নিয়ে ওই পণ্য কলকাতার দমদম বিমানবন্দর হয়ে স্পেনে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে ট্রাকগুলো প্রবেশের অনুমতি পায়নি। এতে পণ্যগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে নিয়েছে।
বেনাপোলে এই পণ্যের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট ছিল পদ্মা ট্রেডিং। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক অনিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। এর আগেই ট্রাকবোঝাই এসব পণ্য বেনাপোল বন্দরে চলে আসে। পণ্য ঢুকতে না দেওয়ায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’ তিনি জানান, এই সুবিধা বাতিলের এক দিন আগেও ২০ ট্রাক তৈরি পোশাক তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের ট্রানজিট ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। সাধারণত তৈরি পোশাকের রপ্তানি গ্রীষ্মে বাড়ে। এখন রপ্তানির ভরা মৌসুম। এই মুহূর্তে ভারতের এই সিদ্ধান্তে তাঁরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘যে রপ্তানিকারকের পণ্য ফিরে গেছে, তাদের কোনো প্রতিনিধি আমাদের কিছু জানাননি। তবে আমরা জেনেছি, ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে কারপাস দেওয়া হয়নি। যে কারণে পণ্য ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
২০২০ সালের ২৯ জুন এক আদেশে ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ভারতের কলকাতা বন্দর, নবসেবা বন্দর ও কলকাতা বিমান কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছিল সিবিআইসি। এখন সে সুবিধা প্রত্যাহার করল ভারত।
বিবৃতিতে ভারত দাবি করেছে, এসব পদক্ষেপে ভারতের সীমান্ত দিয়ে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়বে না।
বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বেনাপোল দিয়ে ভারতের ট্রানজিট নিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হয়, তার বেশির ভাগ যায় ইউরোপের দেশগুলোয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেনাপোল ও পেট্রাপোল দিয়ে স্পেন ও সুইজারল্যান্ডে বেশি যায়। এই বন্দর দিয়ে নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানি কম হয়।