না’গঞ্জে যুব কাবাডি অনূর্ধ্ব-১৮ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত
Published: 8th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ জেলা পর্যায়ে যুব কাবাডি অনূর্ধ্ব-১৮ (বালক ও বালিকা) প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের আয়োজনে এবং জেলা ক্রীড়া অফিস, নারায়ণগঞ্জের বাস্তবায়নে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে এ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়।
কাবাডি প্রতিযোগিতায় পাঁচটি উপজেলায় ছয়টি টিম অংশ গ্রহন করে বালক বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয় সদর উপজেলা এবং রানার্সআপ হয় বন্দর উপজেলা। বালিকা বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয় সদর উপজেলা এবং রানার্সআপ হয় বন্দর উপজেলা।
প্রতিযোগিতা শেষে জেলা ক্রীড়া অফিসার ফারজানা আক্তার সাথীসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠক উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘অলীক’ মামলায় জেরবার ব্যবসায়ী নাজিমের জীবন
আবাসন ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মানিকদী এলাকায় স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। তিন বছর আগের এক মামলায় পাল্টে যায় তাঁর জীবন। পরিবার-পরিজন ছেড়ে নাজিম ঘুরতে থাকেন পথে পথে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পরও দিন ফেরেনি তাঁর।
২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারির মতো গত বছরের ১৮ জুলাই নাজিমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বিএনপিকে সন্ত্রাসী অর্থদাতা হিসেবে। শুধু তাই নয়, ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবেও তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় নাজিম ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি রাজনৈতিক এবং হত্যা মামলা হয়েছে।
নাজিমের দাবি, একটি ঘটনার সঙ্গেও তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। পতিত আওয়ামী লীগের এক নেতার রোষানলে তাদের জীবন তছনছ হয়ে গেছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও তাঁর ইন্ধনে একের পর এক মামলা হচ্ছে। ভুয়া মামলা থেকে বাঁচতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশ ও ডিবির ওপর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের ছায়া রয়েই গেছে। এ জন্য অভিযোগ দেওয়ার পরও সত্যতা যাচাই না করে বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আমরা পাঁচ ভাই।’
সমকালের হাতে আসা এজাহারগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় পুলিশের মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে আসামি হয়েছেন নাজিম উদ্দিন। এর পর ২০২২ সালে ক্যান্টনমেন্ট, বনানী ও শেরেবাংলা নগর থানায় ৫টি, ২০২৩ সালে এসব থানায় আরও ৫ এবং ২০২৪ সালে ক্যান্টনমেন্ট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্টন ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে হয়েছে ৯ মামলা। এর মধ্যে গত বছর ৫ আগস্টের পর হয়েছে ৬টি। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত চারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন নাজিম।
জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে মিরপুর থানার মামলায় নাজিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, নাজিমকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন ডিবি সদস্যরা। এর পর সন্তানদের নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন তাঁর স্ত্রী। বর্তমানে তাদের পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব তামিম (১৯) হত্যার অভিযোগে গত ৩ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানায় মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আব্বাস আলী। এতে ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনকে ৮৪ নম্বর আসামি করা হয়। একই বাদী ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেন। তাতে আসামি করা হয়েছে নাজিমের ভাইদের।
তামিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করতেন বলে জানিয়েছেন তাঁর বাবা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘গত বছর ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আন্দোলন দেখতে বের হলে তামিম গুলিতে মারা যায়।’ অথচ আব্বাসের মামলায় তামিমকে প্রতিবেশী উল্লেখ করে এক মাস পরে তাঁর মৃত্যু ১৯ আগস্ট মিরপুরে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রাজু আহমদ (২৪) হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার সঙ্গে নাজিমকেও আসামি করা হয়। ২৭ আগস্ট রাজুর বাবা কালাম মোল্লা মামলাটি করেন। একই দিন বিকেল ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলায় নাজিমকে ৩৪ নম্বর আসামি করা হয়। আধা ঘণ্টা ব্যবধানে একই ব্যক্তি দুটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে।
অভ্যুত্থানের আগে সন্ত্রাসী, পরে দোসর
জুলাই বিপ্লবের আগে ১৪ মামলায় ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসী এবং অর্থদাতা বলা হয়েছে। এমনকি আন্দোলন চলাকালে ২৬ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট থানার
মামলাতেও নাজিম, তাঁর ভাই সাইফুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া, শামীম ভূঁইয়া ও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ক্যান্টনমেন্ট ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চার মামলায় নাজিম এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে আন্দোলনে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলায় ব্যবসায়ী নাজিমকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবে এ পদে আছেন মিনহাজুল ইসলাম মিজু।
আসামিদের চেনেন না বেশির ভাগ বাদী
একটি মামলার বাদী কালাম মোল্লা সমকালকে বলেন, ‘মাগুরার স্থানীয় বিএনপি নেতা দাউদ ও মোহাম্মদপুরের দোলন মিলে আমাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। আসামিদের কাউকে চিনি না, জানিও না। আমাকে ঢাকায় এনে শুধু কাগজে সই করতে বলেছেন। ছেলে হত্যার জন্য নিরপরাধ ব্যবসায়ীকে কেন আসামি করব?’
আরেক মামলার বাদী ছাত্রদলের সাবেক নেতা আব্বাস আলী বলেন, ‘মামলায় এত এত আসামি, সবাইকে তো চেনা যাবে না। মামলা করতে গেলে উকিলরা কিছু নাম দেন; ভাই-বন্ধুরাও কয়েকজনকে ঢোকাতে বলেন। এভাবেই হয়তো ভুলে কারও নাম রয়ে গেছে। বড় মামলায় ১০-১৫ নাম ভুল হতেই পারে। বিষয়টি বুঝতে পেরে নিরীহদের নাম বাদ দিতে আইও এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আমি বৈঠক করেছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনের নাম আগে শুনেছি। মামলায় আমি তাঁর নাম দিইনি। কে দিয়েছে তা বলা যাবে না। নির্দোষ হলে তদন্তে তাঁর নাম বাদ যাবে।’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এস এন নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা রয়েছে। মামলা হলেই কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেলেই কেবল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশ নিরীহ কাউকে হয়রানি করছে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’