সব খরচ হিসাবে করে চলতি বছর যৌক্তিকভাবে হিমাগারের ভাড়া আট টাকা করা হয়েছে। বর্তমান উচ্চ ঋণের সুদহার, বিদ্যুৎবিল, মজুরিসহ অন্যান্য খরচ যেভাবে বেড়েছে তাতে ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই। তবে সরকার ঋণের সুদহার ও বিদ্যুত বিল কমানোসহ কিছু সহায়তা দিলে ভাড়া কমানো সম্ভব। 

শনিবার রাজধানীর পুরানো পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন বিসিএসএর সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী। এ সময় সংগঠনটির জেষ্ঠ্য সহসভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।  

সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪০০ হিমাগার রয়েছে। ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য পরিচালনা ব্যয় বহন করতে না পেরে এর মধ্যে তিন–চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৩০০ এর মতো হিমাগার রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু হিমাগার ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। 

গত এক বছরে সুদ হার ১৫ শতাংশ ও অস্বাভাবিক হারে বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ছাড়া হিমাগারে আলু আনা–নেওয়া (লোডিং-আনলোডিং), কর্মীদের বেতনভাতাসহ আনুষঙ্গিক সব খরচই বেড়েছে। এসব ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে এ বছর আলু সংরক্ষণে কেজিপ্রতি ভাড়া দাঁড়ায় ৯ টাকা ৬২ পয়সা। তবে আলু চাষী ও আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ীদের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সমিতি। এই ভাড়া যৌক্তিক কি না তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যাচাই করতে পারে। 

মোস্তফা আজাদ বলেন, গত বছর হিমাগার ভাড়া প্রতি কেজিতে ৭ টাকা ছিল। কিন্তু এই তথ্য গোপন রেখে এবং হিমাগার পরিচালন ব্যয় বিবেচনায় না নিয়ে কিছু মধ্যস্বত্তভোগী মনগড়া বক্তব্য ও কর্মসূচি দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে একটি ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি জানান, হিমাগারে ৫০ কেজির বস্তায় আলু সংরক্ষণের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। গত বছর কেজিপ্রতি সাত টাকা করে ৫০ কেজির বস্তার ভাড়া নেওয়া হয় ৩৫০ টাকা। তবে দেখা গেছে, অতীতে অনেক ব্যবসায়ী এ নিয়ম না মেনে ৭০ থেকে ৭২ কেজি আলু বস্তায় ভরে হিমাগারে রেখেছেন। তারাও ভাড়া দিয়েছেন ৩৫০ টাকা করে। সেই হিসেবে তাদের কেজিতে ব্যয় হয়েছে পাঁচ টাকার মতো। এবার এ ধরনের অনিয়ম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কারণেই একটি মহল অপপ্রচার ও ভাড়া কমানোর আন্দোলন করছে। 

সংবাদ সম্মেলনে হিমাগার মালিকেরা জানান, বস্তায় ১৫ থেকে ২২ কেজি আলু বেশি রাখায় তারা এতদিন এসবের ভাড়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আবার এ কারণে হিমাগারের আলুর ধারণক্ষমতাও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে যায়। এতে ১০ হাজার টনের একটি হিমাগারে বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয় তাদের। এসব কারণে চারশ হিমাগারের মধ্যে প্রায় তিনশ হিমাগারই রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আরও বেশ কিছু হিমাগার ঋণ খেলাপীতে পরিণত হয়েছে। 

হিমাগার মালিকের আরও জানান, দেশে আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। এর মধ্যে হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৪৫ টনের মতো। চলতি বছর আলু উৎপাদন হতে পারে ১ কোটি ২০ লাখ টনের মতো। সেই হিসেবে বিপুল পরিমাণে আলু হিমাগারের বাইরে থাকবে এবং পণ্যটির দাম সেভাবে বাড়বে না। এতে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এমন বাস্তবতায় উদ্বৃত্ত আলুর রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। 

হিমাগার ভাড়া কৃষকদের সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পাঁচটি দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। এগুলো হচ্ছে— ঋণের সুদহার ১৭ শতাংশ (দন্ডসুদসহ) থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা; বিদ্যুৎ বিলের ইউনিট প্রতি খরচ কমিয়ে ৫ টাকা করা; হিমগারের বিভিন্ন ব্যয়ের ওপরে ভ্যাট ও উৎসে কর প্রত্যাহার করা এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় তিন মাসের পরিবর্তে বাৎসরিক করা। একই সঙ্গে হিমাগার খাতকে কৃষিশিল্প ঘোষণা করা। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘পিপল ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ নাম চায় ইসলামী আন্দোলন

বাংলাদেশের বর্তমান নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরিবর্তে নাগরিকতন্ত্র ও জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ চালুর প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। তবে নতুন এ প্রস্তাবনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরিবর্তে ‘পিপল ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ তথা ‘বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র’ নামের প্রস্তাব দেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে অবস্থিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের হাতে সংস্কার প্রস্তাব তুলে দেয় ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিদল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে দলটি ১৩০টি প্রস্তাবে একমত, ২৫টি দ্বিমত এবং ১১টিতে আংশিকভাবে একমত। এ ছাড়া দলটি ৪১টি নতুন প্রস্তাব এবং ৪টি মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, রাষ্ট্রের নাম হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’। কারণ, এই নামের মধ্যেই জনকল্যাণ নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।

আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে সুশাসন, ন্যায়বিচার, উন্নয়ন, মানবাধিকার রক্ষা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা চারটি মৌলিক প্রস্তাব পেশ করেছি, যা বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। আর এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। প্রস্তাবগুলো হলো আত্মশুদ্ধি, জবাবদিহি, শরিয়াহ আইন ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন।’

বিদ্যমান আইনে দুর্নীতি, দুঃশাসন, চুরি, ধর্ষণসহ অন্যায়-অনাচার বন্ধ করা যায়নি জানিয়ে শরিয়াহ আইন করার দাবি জানান আশরাফ আলী আকন। সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সব প্রস্তাবে সবাই একমত হবে বলে কমিশন মনে করে না। কমিশনের পক্ষ থেকে মতামতগুলো পর্যালোচনা করা হবে বলেন তিনি।

আগামী শনিবার থেকে প্রতিদিনই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একাধিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে বলে জানান আলী রীয়াজ। আগামী ১৫ মের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করা হবে বলেন তিনি। তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার কথা জানান।

ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহম্মেদ সেখ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।

এ পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়: বাংলাদেশ জাসদ
  • জামালপুরে জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি নেতা
  • ‘উপদেষ্টাদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, তাঁদের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার খায়েশ হয়েছে’
  • দেশের নাম ‘বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র’ চায় ইসলামী আন্দোলন
  • ‘পিপল ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ নাম চায় ইসলামী আন্দোলন
  • আলোচনায় রাজি হিজবুল্লাহ
  • গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে প্রেস ক্লাবের কর্মচারী ইউনিয়নের মানববন্ধন 
  • মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালি সংস্কৃতির বিকৃতি ছাড়া কিছুই নয়: ইসলামী ছাত্র আন্দোলন