আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমান সরকারের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার বিন্দুমাত্র খায়েশ নেই। অযথা সময়ক্ষেপণেরও ইচ্ছে নেই।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। 

আইন উপদেষ্টা বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশনের দেওয়া আশু করণীয়গুলো আগামী ছয় মাসের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এরই মধ্যে অনেকগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগ নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরির সুযোগ নেই। অনেকগুলো সুপারিশ নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের তিন জোটের রূপরেখাতেও ছিল। কাজেই সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কোনো আলোচনার প্রয়োজন হবে না।

আসিফ নজরুল বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো আশু করণীয়, মধ্য মেয়াদি করণীয় ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ দিয়েছেন। একমাত্র সংবিধান সংস্কার কমিশনের কোনো আশু করণীয় সুপারিশ নেই। যেগুলো আছে, সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। আগামী সপ্তাহে বা মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে আলোচনা শুরু হবে। প্রয়োজনে রমজান মাসেও আলোচনা চালিয়ে নেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমান সরকারের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার বিন্দুমাত্র খায়েশ নেই। অযথা সময়ক্ষেপণেরও ইচ্ছে নেই।

কয়েকটি সুপারিশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বন্ধে একটি স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে এই কমিশনটি থাকবে। মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কমিয়ে ৫১টির পরিবর্তে ২৫টি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো বা বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো কিছু প্রতিষ্ঠানকে একটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। আগের বিভাগগুলো পুনর্বিন্যাস সুপারিশ আছে। ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে দুটি নতুন বিভাগ করার কথা বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠনের সুপারিশ এসেছে। 

মামলার জটের জন্য অনেক সময় সাক্ষীর অনুপস্থিতিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশন অনলাইনে সাক্ষী দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আদালতে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ এসেছে। আইনজীবীদের ফি নির্ধারণ ও রশিদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা যারা করবে তাদের কঠোর শাস্তির সুপারিশ এসেছে। পুলিশ যাতে সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে এ জন্য পৃথক ইউনিটের সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন তদন্ত ইউনিটে যিনি কাজ করবেন, তিনি অন্য থানায় বদলি হলেও একই ইউনিটে বদলি হবেন। পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করবে মানবাধিকার কমিশন। 

নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, সীমানা পুনর্বিন্যাস, গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধন, হলফনামার বিধিমালা সংশোধন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, পোস্টাল ব্যালট, অনলাইনে ভোট প্রদানের বিষয়ে বলা হয়েছে। 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সুপারিশ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান থাকলেও সেটা কার্যকর নেই। ন্যায়পাল নিয়োগ, বেসরকারি খাতে ঘুস লেনদেন শাস্তির আওতায় আনা, দুদককে আরও শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। এসব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। দ্রুত নির্বাচনের পথে যাওয়া হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম, উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট র স প র শ কর ন উপদ ষ ট র জন ত ক করণ য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তাগাছায় ট্রাকচাপায় এএসআই নিহত

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় ট্রাকচাপায় পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে দুর্ঘটনার পর গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি মারা যান।

নিহত এএসআইয়ের নাম মো. রুস্তম আলী (৪২)। তিনি মুক্তাগাছা থানায় কর্মরত ছিলেন৷ তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার কালিকচ্চ গ্রামের রমজান আলী ছেলে। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকালে উপজেলার কুমারগাতা ইউনিয়নের মনতলা এলাকা থেকে নির্ধারিত কর্তব্য (ওয়ারেন্ট তামিল) পালন শেষে মোটরসাইকেল নিয়ে থানায় ফিরছিলেন এএসআই রুস্তম। পথে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সত্রাসিয়া এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পানির ড্রাম ভর্তি ট্রাক সামনে থেকে মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা সাতটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, আহত পুলিশের এএসআই রুস্তম মারা গেছেন। তাঁকে চাপা দেওয়া ট্রাকটি শনাক্ত করা হয়েছে। চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাঁর লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের পর আজ রোববার তাঁর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ